Logo
Logo
×

শেষ পাতা

তদন্তের নামে হয়রানি বন্ধের তাগিদ

দুর্নীতির অভিযোগ বাছাই প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা

দুদক কর্মকর্তাদের ঘাড়ের ওপর ঝুলে থাকা ৫৪(২) ধারা বিলুপ্ত অথবা এতে সংশোধনী আনা জরুরি -সাধারণ সম্পাদক, দুদক সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন

Icon

মিজান মালিক

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দুর্নীতির অভিযোগ বাছাই প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান ও তদন্ত পর্যায়ে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন অনেকে। বিশেষ করে সম্পদের অনুসন্ধানে বছরের পর বছর দুদকের পেছনে ঘুরতে হয় ভুক্তভোগীদের।

তাদের মতে-দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে দেখা যায়, অভিযোগের সত্যতা মিলছে না। কিন্তু ততক্ষণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদা চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়ে যায়। এই অপূরণীয় ক্ষতির প্রতিকার কার কাছে চাইবেন-তা জানেন না ক্ষতিগ্রস্তরা।

দুদকের ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওই বছর নানা মাধ্যম থেকে ১৫ হাজার ৪৩৭টি অভিযোগ পায় কমিশন। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই কমিটি (যাবাক) কর্তৃক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয় ৮৪৫টি অভিযোগ। আইনি সীমাবদ্ধতায় অনুসন্ধান না করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় ৯১৩টি অভিযোগ। ২০২৩ সালে বাছাই করা ৮৪৫টি অভিযোগের সঙ্গে পুরোনো বছরের অভিযোগ যুক্ত হয় ১ হাজার ২০৬টি। এর মধ্যে অনুসন্ধান শেষে মামলা হয়েছে মাত্র ৪০৪টি।

বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় গোঁজামিলের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনের এক স্থানে বলা হয়েছে, ‘পুঞ্জীভূত আকারে ২০২৩ সালে অভিযোগের সংখ্যা ৪ হাজার ৪২৮টি। এর মধ্যে মামলা হয়েছে ৪০৪টি।’ অবশিষ্ট অনুসন্ধান পরিসমাপ্ত (দায়মুক্তি) বা অন্যভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন-৪ হাজার ৪২৮টি থেকে ১ হাজার ২০৬টি অভিযোগের যদি অনুসন্ধান হয় বাকি ৩ হাজার ২২২টি অভিযোগের বিষয়ে কোনো তথ্য বা এই সংখ্যার বিষয়ে কোনো বিশ্লেষণ নেই কেন। ‘অন্যভাবে নিষ্পত্তি’ বলতে কী বোঝায় তারও কোনো ব্যাখ্যা নেই। ২০২৩ সালে ৮৪৫টি নাকি ১ হাজার ২০৬টি অভিযোগের অনুসন্ধান শেষে ৪০৪টি মামলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। এভাবে মামলা, তদন্ত, চার্জশিটসহ প্রতিবেদনের নানা জায়গায় তথ্যের ক্ষেত্রে গরমিল রয়েছে।

জানা গেছে, দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ যাচাই-বাছাই কমিটি (যাবাক) নামে একটি সেলের মাধ্যমে অনুসন্ধানযোগ্য অভিযোগ মার্কিং করে কমিশনে পাঠানোর পরই অনুসন্ধান শুরু হয়। প্রধান কার্যালয় ছাড়াও প্রতিটি বিভাগীয় কার্যালয় ও জেলা কার্যালয়েও অভিযোগ যাচাই-বাছাই কমিটি আছে। সেখান থেকে প্রধান কার্যালয়ে তা প্রেরণের পর আরেক দফায় তা যাচাই-বাছাই করে দুদকের একজন মহাপরিচালকের নেতৃত্বে মূল কমিটি (যাবাক)।

এত ধাপ পেরিয়ে অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য কমিশনে পাঠানোর পর এর ফলাফল ভালো হওয়ার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না। যাবাকের বাছাই করা অভিযোগ অনুসন্ধান শেষে অর্ধেকের বেশি (প্রায় ৬০%) প্রমাণ হলো না-এ মর্মে নিষ্পত্তি হয়। এতে এটা স্পষ্ট যে, যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় গলদ আছে বা তারা সঠিকভাবে যাছাই করেননি কিংবা কমিশন থেকে আদিষ্ট হয়ে তা অনুসন্ধানের জন্য বাছাই করেছিলেন।

দুদকের বর্তমান নিয়ম অনুসারে প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসা একজন মহাপরিচালক, প্রেষণে আসা একজন পরিচালক ও দুদকের নিজস্ব জনবল থেকে একজন উপপরিচালকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের যাচাই-বাছাই কমিটি (যাবাক) গঠিত। তারা যে অভিযোগগুলো অনুসন্ধানের জন্য মার্কিং করেন সে অভিযোগ সত্য না মিথ্যা তা যাচাই করা হয় না। কাগজে লেখা অভিযোগ বা সরকার কাউকে হেনস্তা করতে চাইলে কমিশন থেকে সেভাবে তৈরি করা অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য নেওয়া হয়।

এছাড়া কোন অভিযোগ কী কারণে অনুসন্ধানের জন্য নেওয়া হলো তার কোনো ব্যাখ্যা থাকে না। এমনকি যেসব অভিযোগ বাছাইয়ে নেওয়া হয়নি, তারও কোনো ব্যাখ্যা নেই। দুদকসংশ্লিষ্টরা বলেন, এক্ষেত্রে যাবাককে তাদের গৃহীত অভিযোগের সঙ্গে একটি ফরোয়ার্ডিং দিতে হবে। কোন অভিযোগ কোন সূত্র থেকে এসেছে, তারও ব্যাখ্যা থাকতে হবে।

বর্তমান প্রক্রিয়াটিকে অস্বচ্ছ উল্লেখ করে তারা বলেন, যাবাক যদি সঠিকভাবে বাছাই না করে কথিত মার্কিং পদ্ধতি অনুসরণ করে তাহলে সেগুলো বছর ধরে অনুসন্ধানের পর অর্ধেকের বেশি নিষ্পত্তি বা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেল না-মর্মে প্রতিবেদন তৈরি করার এই রীতি বন্ধ হবে না। এটা অব্যাহত থাকলে একদিকে যেমন কমিশনের কর্মকর্তাদের ভুল অনুসন্ধানের পেছনে সময়-শ্রম ব্যয় করতে হয়, অন্যদিকে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলো তিনিও হয়রানির শিকার হন।

দুদকের সাবেক ও বর্তমান একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আমরা কমিশনের অধীন কাজ করি। ফলে কোনো কাজ দেওয়া হলে সেটি না করার সুযোগ নেই। বাধ্য হয়ে অনেক ফরমায়েশি অনুসন্ধান করতে হয়। এক্ষেত্রে দুদক যে হারে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হয় তা বন্ধ করতে হবে।

দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, দুদকের নিজস্ব আইন ২৬ ও ২৭-এ দুটো ধারা। এই দুই ধারায় সম্পদের অনুসন্ধানের বিষয়টি এসেছে। এছাড়া দুদকের আইনে ব্রিটিশ আমলের কিছু ধারায় অনুসন্ধান-তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে আমি মনে করি, দুদকের নিজস্ব আইনের পরিধি বাড়ানো উচিত। সেটা কীভাবে করবে তা কমিশনকেই ভাবতে হবে।

দুদকের একজন কর্মকর্তা অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, টেন্ডারের মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগ এলে সেটি টেন্ডারসংক্রান্ত অপরাধ হিসাবে গণ্য করে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করতে হবে। টেন্ডারসংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় অর্থের তছরুপসংক্রান্ত অভিযোগ পাশ কাটিয়ে ওই অভিযোগে নাম আসা এক-দুজনের বিরুদ্ধে সম্পদের অনুসন্ধান করায় মূল অভিযোগটি চাপা পড়ে যায়। অনুসন্ধানে অনেকের সম্পদ খুঁজতে শুরু করায় দেখা গেছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বৈধ টাকাও পাচার করে দিয়েছেন। সম্পদের অনুসন্ধানের আগে অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে।

অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটকে আরও শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়ে সংস্থাটির সাবেক মহাপরিচালক মুনির চৌধুরী বলেন, এই ইউনিটে সার্ভিল্যান্স টিম থাকতে হবে। এফবিআই যেভাবে তদন্ত করে সেটা অনুসরণ করা যেতে পারে। গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যরা বছরের পর বছর লেগে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ও রাষ্ট্রের সম্পদ লুণ্ঠনকারীর বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ করবে। তাদের কাজটি হবে দুদকের সিগনেচার কাজ।

কিন্তু বিদ্যমান কাঠামো অনুযায়ী ওই ইউনিটকে অনেক কাজ দিয়ে রাখা হয়। এর ফলে গোয়েন্দাগিরি করার সময় বা তাদের সেই জনবল না থাকায় অর্থ পাচার বা অন্য বড় ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে গোপন তথ্য সংগ্রহ হয় না।

অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজে যুক্ত দুদকের কর্মকর্তারা জানান, দুদকের প্রধান কার্যালয়ের প্রত্যেক কর্মকর্তার হাতে ২০-৩০ অভিযোগ অনুসন্ধান বা তদন্তের জন্য থাকে। এতগুলো অনুসন্ধান ও তদন্ত নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে করতে গিয়ে তারা হিমশিম খান। ফলে কোনো মতে অনুসন্ধান শেষ করে দায়সারা গোছের একটা প্রতিবেদন দেন। আবার কমিশনের চাপের কারণে তথ্য না থাকলেও কারও কারও বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিতে হয়। এই প্রক্রিয়া বন্ধ হওয়া দরকার। একজন কর্মকর্তাকে একটি অনুসন্ধান বা তদন্ত শেষ করার জন্য কমপক্ষে টানা দুই মাস (বছরে ৬টি অভিযোগের অনুসন্ধান বা তদন্ত) সময় দিতে হবে।

এর মধ্যে তাকে আর কোনো কাজ দেওয়া যাবে না। তিনি যদি এই সময়সীমার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হন, তখন তার কাছে কৈফিয়ত চাওয়ার সুযোগ থাকবে। প্রকৃত অনুসন্ধান বা তদন্ত করতে হলে গড়পড়তা অভিযোগ আমলে নেওয়া বন্ধ করতে হবে।

দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, একটা অনুসন্ধান বা তদন্ত করতে ৩-৪ বছর লাগবে কেন। এই প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। দুদক সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (ডুসা) সাধারণ সম্পাদক জাহিদ কালাম বলেন, জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে আমরা কাজ করতে চাই। আমাদের ওপর কাজের চাপ কমালে মানসম্মত অনুসন্ধান বা তদন্ত দেশের স্বার্থেই করা সম্ভব।

তিনি বলেন, দুদক কর্মকর্তাদের ঘাড়ের ওপর দুদক চাকরি বিধিমালার ৫৪(২) ধারা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এই ধারাটি বিলুপ্ত করতে হবে। অথবা সংশোধনী আনতে হবে। এই ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ রাখা হয়নি। এটি সংবিধানের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। আমাদের চাকরির নিরাপত্তা দরকার। তিনি যাবাকের বিষয়ে বলেন, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কর্মকর্তাদের এই সেলে রাখা উচিত।

দুদকের চাকরি বিধিমালার ৫৪(২) ধারাটির অপপ্রয়োগ করার যথেষ্ট সুযোগ আছে বলে মনে করেন এই সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক মাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, সরকারের ইচ্ছায় কারও বিরুদ্ধে অন্যায় অনুসন্ধান করার জন্য চাপ প্রয়োগে কোনো কর্মকর্তা যদি অনাগ্রহী হন, তাকে এই ধারায় চাকরি থেকে বের করে দিতে পারে কমিশন। আবার সরকারের প্রভাবশালী কারও বিরুদ্ধে অনুসন্ধানকালে একটা মনগড়া অভিযোগের ভিত্তিতেও ৯০ দিনের বেতন দিয়ে বের করে দিতে পারে।

সাবেক সচিব হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছিলেন দুদকের উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন। এ পর্যায়ে শরীফকে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই দুদক থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এক্ষেত্রে দুদকের বিধিতে আপিলের সুযোগ না থাকায় তাও করতে পারেননি শরীফ। ৫৪(২) ধারা বাতিল করা হলে অন্য কোনো ধারা যুক্ত হলে তাতে কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থন ও আপিল করার বিধান থাকতে হবে মনে করে সাবেক ওই মহাপরিচালক।

দুদকের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা যাবাকের বিষয়ে বলেন, বিদ্যমান যাবাক যেভাবে অভিযোগের মার্কিং করে এই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা উচিত। এছাড়া যে পদ্ধতিতে অভিযোগ অনুসন্ধানযোগ্য মর্মে কমিশনে পাঠানো হয়, তাতেও পরিবর্তন আনতে হবে। তারা বলেন, যাবাকে প্রশাসন ক্যাডার থেকে দুজনকে না রেখে একজন রেখে কমিশন থেকে একজন এবং বিচার বিভাগের একজনকে রেখে পুনর্গঠন করা যায়। কারণ অভিযোগ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তিনজনের মধ্যে দুজনের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

একই ক্যাডারের দুজন হলে ওই ক্যাডারের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তা অনুসন্ধানের জন্য মার্কিং করা হবে এমন নিশ্চয়তা নেই। ফলে এখানে পরিবর্তন আনা দরকার। সরকার কাউকে হেনস্তা করতে চাইলে কমিশন থেকে অভিযোগনামা তৈরি করে যাবাকের মাধ্যমে অনুসন্ধানের সুপারিশ প্রক্রিয়াও বন্ধ করতে হবে। কারণ এতে করে সত্যিকারের দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে যথাযথ অভিযোগ বাছাইয়ে পক্ষপাত থাকে।

সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ, অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। সেটা কী ধরনের হতে পারে-এমন প্রশ্নে তারা বলেন, যাবাকের সঙ্গে একটি অনুসন্ধান টিম যুক্ত করা যেতে পারে। বাছাই কমিটির হাতে থাকা অভিযোগ শুধু নম্বর দিয়ে অনুসন্ধানযোগ্য হিসাবে বাছাই না করে যাবাকের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের দিয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান করা হলে পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না এবং বাছাইয়ে অনুসন্ধান শেষে ফলাফলও ভালো আসবে।

অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, আইন অনুযায়ী কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পর তা দুদক কর্মকর্তাদের দিয়ে তথ্য সংগ্রহ এবং গোপন অনুসন্ধান করতে হবে। তাতে যদি অভিযোগের সত্যতা না মেলে সেটি যাবাকে পাঠানোর দরকার নেই। এমনকি কমিশনেও তোলার দরকার নেই। তবে রেকর্ডে থাকবে।

দুদকের সিনিয়র আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, অনুসন্ধান বা মামলা যেন হয়রানির জন্য না হয়। কারও বিরুদ্ধে মামলার পর যখন তদন্তে প্রমাণিত হয় না-মর্মে ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হয়, ওই অবস্থায় যার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল তার অবস্থা কী দাঁড়ায় মানুষ হিসাবেও আমাদের ভাবতে হবে। তিনি বলেন, দুদক আইনের ২৬ ও ২৭ ধারা শুধু নিজস্ব। তাও বেসরকারি লোকজন এই মামলায় আসামি হন। দুর্নীতি শুধু বেসরকারি লোকজন বা ব্যবসায়ীরাই করেন এমন নয়, দুর্নীতি হয় সরকারের পদে থেকে বা ক্ষমতার অপব্যবহার করে।

অথচ সরকারি কর্মকর্তা বা মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতির অনুসন্ধান তদন্তে কমিশনের নজর কম। দুদকের যে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেখানে এ বিষয়গুলোর স্পষ্টীকরণ করা হবে বলে আশা করি।

দুদকের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি অনুসন্ধান ও তদন্তের দিকে কমিশনকে মনোযোগী হতে হবে। এখন সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের কয়েকজনের অনুসন্ধান হচ্ছে। এমনটি ১/১১ সরকারের সময়ও হয়েছিল। কিন্তু পরে সেই সময়ে আওয়ামী লীগের যারা আসামি হয়েছিলেন তারা ক্ষমতায় এসে মামলা প্রত্যাহার করে নেন বা শুনানি করে নিষ্পত্তি করে নেন।

তিনি বলেন, এতে দুর্নীতির বীজ কিন্তু থেকেই গেল। কারও ভেতর কোনো অনুশোচনা হলো না। উলটো গত সাড়ে পনেরো বছরে তারা বীরদর্পে দুর্নীতি করেছে। দেদার অর্থ পাচার করেছে। এর খেসারত দিতে হচ্ছে দেশের মানুষকে। কমিশন তা দেখেও চুপ ছিল।

তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতেও এমনটি হলে দুর্নীতি কখনোই থামবে না। দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত কর্মকর্তারা কমিশনের ইচ্ছার বাইরে কিছুই করতে পারেন না। তারা নিজেরা কোনো অনুসন্ধান বা তদন্তের ফাইল চেয়ে নেওয়ার বিধান নেই। ফলে দুদকের কাজ নিয়ে যে অভিযোগ রয়েছে, কর্মকর্তার ওপর দায় না চাপিয়ে এর দায়ভার কমিশনকেও নিতে হবে। দুদক বিধিতে রয়েছে ‘জেনেশুনে সজ্ঞানে কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনলে’ কমিশনের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

সাবেক একজন মহাপরিচালক বলেন, দুদকের এই ধারা (মিথ্যা অভিযোগে হয়রানির ব্যবস্থা) কার ওপর প্রয়োগ হবে সেটা স্পষ্ট করতে হবে। কারণ কমিশন তদন্ত কর্মকর্তাদের দিয়ে অনেক সময় ফরমায়েশি মামলা করিয়ে নেয়। সেটার দায় তো কমিশনের ওপরও বর্তায়। তিনি বলেন, কোনো কর্মকর্তা যদি কমিশনের ইচ্ছার বাইরে যান বা ফরমায়েশি মামলা করতে অপারগতা প্রকাশ করেন, তাহলে তাকে কারণ দর্শানো ছাড়া ৯০ দিনের বেতন দিয়ে বিদায় করে দেওয়ার বিধানটি অমানবিক।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম