ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার, হামলা-নির্যাতন: চমেকের ৭৫ শিক্ষার্থীর ওপর বহিষ্কারের খড়্গ
অধিকাংশই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী * মুচলেকা দিয়ে অব্যাহতি পেলেন ১১ শিক্ষার্থী
এমএ কাউসার, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আধিপত্য বিস্তার, ক্যাম্পাসে হিরোইজম দেখানো, ভিন্নমত দমনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা-নির্যাতনসহ নানা অভিযোগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ৭৫ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ।
রোবাবর কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল সভায় এসব শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ৭ জনকে দুই বছর, ৫৪ জনকে এক বছর এবং ১৪ জনকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৯ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক রয়েছেন। এছাড়া ১১ শিক্ষার্থীকে মুচলেকা নেওয়ার মাধ্যমে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বহিষ্কৃত এবং মুচলেকার মাধ্যমে অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে। চমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সোমবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।
দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃত হলেন এমবিবিএস ৫৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মুশফিকুন ইসলাম, এমবিবিএস একই ব্যাচের আসেফ বিন তাকি, রিয়াজুল ইসলাম জয়, ৬০তম ব্যাচের অভিজিৎ দাশ, মাহমুদুল হাসান, বিডিএস ৩০তম ব্যাচের ইমতিয়াজ আলম ও সাজেদুল ইসলাম হৃদয়।
এক বছরের জন্য বহিষ্কৃত হলেন এমবিবিএস ৬০তম ব্যাচের শামীম আহমেদ ভুইয়া, একই ব্যাচের ফয়সাল আহমেদ, ৬১তম ব্যাচের সাইফ উল্লাহ, ৬২তম ব্যাচের জাকির হোসেন সায়াল, একই ব্যাচের সৌরভ দেবনাথ, নাঈমুল ইসলাম, সাদ মোহাম্মদ গালিব, সাজু দাশ, ৬৩তম ব্যাচের জাবেদুল ইসলাম, বিডিএস ২৯তম ব্যাচের পল্লব বিশ্বাস, জিয়া উদ্দিন, কনক দেবনাথ, শাওন দত্ত, ৩১তম ব্যাচের জাহিদুল ইসলাম জিসান, ৩২তম ব্যাচের দেবজিৎ বিশ্বাস, এমবিবিএস ৫৮তম ব্যাচের তৌফিকুর রহমান ইয়ন, ৬০তম ব্যাচের আতাউল্লাহ বোখারী, একই ব্যাচের নাঈমুল মোস্তফা আকাশ, আহসান উল্লাহ, মুকেশ রঞ্জন দে, ৬১তম ব্যাচের হাসিনা শাওয়াদ রাব্বি, একই ব্যাচের সুমিত চক্রবর্তী, এইচআর মাহফুজুর রহমান, মুনান খান, মাশফি জুনায়েদ, আহসানুল করিম মাহারুস, মো. হাসান রাব্বি, এবিএম তৌহিদুল হাসান, ৬২তম ব্যাচের চমন দাশ অয়ন, একই ব্যাচের মো. এনামুল হাসান সীমান্ত, এইচএম আসহাব উদ্দিন, সৌরভ বেপারী, ৬৩তম ব্যাচের হাসিবুল ইসলাম নিলয়, রজত আচার্য্য, মো. মেহেদী হাসান, প্রীতম দে অনিক, রাহুল সুশীল, জাকি আল হাসান, মাহফুজুর রহমান, সৌরেন বড়ুয়া, তাফহিমুল ইসলাম, ৬৪তম ব্যাচের শেখ রিমন হোসাইন, শাহরিয়ার রহমান, তাইফুল ইসলাম তামজেদ, নাফিস বিন মুক্তাদির, ইয়াসীন আরাফাত আলিফ, রাকিবুল ইসলাম, ৬৫তম ব্যাচের ফাতিন আহবাব ইশমাম, বিডিএস ৩০তম ব্যাচের মো. হাবিবুল্লাহ হাবিব, ৩১তম ব্যাচের মো. মাহতাব উদ্দিন রাফি, একই ব্যাচের মোহাম্মদ আনিস, ৩২তম ব্যাচের অর্ঘ্য সিকদার, একই ব্যাচের জয়ন্ত নাগ তীর্থ ও ৩৩তম ব্যাচের ফয়সাল আজিজ রিয়াদ।
ছয় মাসের জন্য যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তারা হলেন এমবিবিএস ৬০তম ব্যাচের ফয়েজ উল্লাহ, ৬২তম ব্যাচের উৎস দে, একই ব্যাচের মাহিন আহমেদ, জুলকাফাল আহমেদ শোয়েব, ৬৩তম ব্যাচের পুজন সাহা, একই ব্যাচের অগাষ্টো দীপ নিলয়, শেখ শামীম হাসান, ৬৪তম ব্যাচের সৌরেন চক্রবর্তী, একই ব্যাচের আর্য দেব সরকার, মো. মোস্তফা জামিল, ৬৫তম ব্যাচের আবদুল্লাহ মোহাম্মদ ওমর, বিডিএস ৩০তম ব্যাচের আল নিবরাজ বিন হোসাইন, ৩৩তম ব্যাচের মো. শাহাদাত হোসাইন ও ৩৪তম ব্যাচের শ্রেয়স্কর সাহা।
মুচলেকা নিয়ে যাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তারা হলেন এমবিবিএস ৬০তম ব্যাচের আরাফাত সিহাব, ৬২তম ব্যাচের ইব্রাহিম খলিল, বিডিএস ৩১তম ব্যাচের মো. এহেসানুল কবির সুমন, এমবিবিএস ৬৩তম ব্যাচের লামিয়া আক্তার, একই ব্যাচের জান্নাত আক্তার লাবনী, দীপ্তেশ চক্রবর্তী, মুবিন রহমান শাওন, মো. শায়খুল আলম খান, চৌধুরী আরিয়ান আনোয়ার ও তারেকুল ইসলাম তন্ময়।
বিজ্ঞপ্তি সূত্র জানায়, চমেকে কিছু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে ১১ সেপ্টেম্বর ১২ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। সেই কমিটির প্রতিবেদন পেয়ে কলেজের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে রোববার দুপুরে চমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনে সভাপতিত্বে একাডেমিক সভা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়া, গোয়েন্দা তথ্য যাচাই ও অন্যান্য সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের আচরণের কারণে কলেজের সুষ্ঠু পরিবেশ চরমভাবে বিঘ্নিত হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে কলেজ ক্যাম্পাস ও ছাত্রাবাসে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এর আগেও কিছু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে চমেক এলাকায় সংঘাতের কারণে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। কলেজ ক্যাম্পাস ও ছাত্রবাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও ছাত্ররাজনীতির নাম ভাঙিয়ে একক কর্তৃত্ব, গোষ্ঠীগত এবং ব্যক্তিগত হিরোইজম দেখানোর জন্য বিভিন্ন ঘটনা ঘটায়। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
চমেক সূত্র জানায়, বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই সম্প্রতি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সমর্থক। তারা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসাবে পরিচিত।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় কিছু শিক্ষার্থীর হাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা হামলা-নির্যাতনের শিকার হয় বলে অভিযোগ পেয়েছিলাম। এ পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত কমিটি দেড় মাসের তদন্ত শেষে ৮৬ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন জমা দেয়। একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ৭৫ জনকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত হয়। সোমবার থেকে বহিষ্কারাদেশ কার্যকর হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৫ জন এমবিবিএস, চারজন বিডিএসসহ ১৯ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক রয়েছেন। একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তারা ইন্টার্নশিপ করতে পারবেন না।’