ধানমন্ডির ড. মালিকা কলেজ
ডুবতে বসেছে অধ্যক্ষের দুর্নীতিতে, পদত্যাগ দাবি
এইচএসসির ফলে বোর্ডের তলানিতে * ক্ষমতা ধরে রাখতে ব্যারিস্টার তাপসকে ৫০ লাখ টাকা দেন অধ্যক্ষ
মো. মারুফ শাহ, ধানমন্ডি (ঢাকা)
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর অভিজাত এলাকা ধানমন্ডির ড. মালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ জালাল উদ্দিন মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের ফলাফল দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এখানে প্রকৃত শিক্ষার মানোন্নয়নে গভর্নিংবডিও তেমন ভূমিকা রাখতে পারেনি।
একাধিক শিক্ষক যুগান্তরকে বলেন, অধ্যক্ষ তার অবস্থান ঠিক রাখার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে ট্যাক্সের নাম করে ৫০ লাখ টাকা নগদে দিয়েছিলেন। তবে কি উদ্দেশ্যে টাকা দিয়েছিলেন, তার কাগজপত্র কখনো দেখাননি। এসব কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ড. মালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের গভর্নিংবডির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহকে দায়িত্ব দিয়েছে।
২০১৭ সালে নিয়োগ পাওয়া অধ্যক্ষ জালাল উদ্দিনের লাগামহীন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে মাউশি এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন অন্তত ২৫ জন শিক্ষক। এ কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটির বর্তমান অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সেই তদন্ত কমিটি এখনো কাজ শুরু করেনি বলে শঙ্কিত ভুক্তভোগীরা।
কলেজের গভর্নিংবডির সভাপতি ড. মাহবুব উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, মাত্র কয়েকদিন আগে দায়িত্ব পেয়েছি। কলেজের লেখাপড়া আগে কি হয়েছিল তা জানি না। এখন খোঁজখবর নিচ্ছি। আমরা চেষ্টা করছি কলেজটির অবস্থার কিভাবে উন্নতি করা যায়। তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করলে সব বিষয় পরিষ্কার হবে।
একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, পৌর করের নামে তাদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা করে নিয়েছেন অধ্যক্ষ জালাল উদ্দিন। তবে, নীতিমালা অনুযায়ী, এ খাতে কোনো ধরনের টাকা নেওয়ার নিয়ম নেই। পরে কিছু শিক্ষার্থীকে টাকা ফেরত দেওয়া হলেও তহবিল না থাকার অজুহাতে বাকিদের টাকা দেননি তিনি।
অধ্যক্ষ জালাল উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর সত্যতা জিরো পার্সেন্ট। সবই মিথ্য। এর আগে অধ্যক্ষের কাছে কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল শিট চাওয়া হলে তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
একটি সূত্রে ড. মালিকা কলেজের শিক্ষার্থীদের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল শিট সংগ্রহ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, মালিকা কলেজ থেকে ১৭৪ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৭২ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ৯৯ জন পাশ করেছে। ২ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেনি। ৭৩ জন অকৃতকার্য হয়েছে। কোনো পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পায়নি। পাশের হার ৫৭ শতাংশ।
অধ্যক্ষ জালাল উদ্দিনের ভয়ে নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন অভিভাবক বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য নেই। গতবারের চেয়ে এবারের ফল আরও খারাপ।
একাধিক শিক্ষক্ষের অভিযোগ, কলেজের পর্যাপ্ত তহবিল থাকা সত্ত্বেও নন-এমপিও শিক্ষকদের স্কেল অনুযায়ী ন্যায্য বেতন না দিয়ে তাদের অতি মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য করেছেন অধ্যক্ষ। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দায় এড়ানোর জন্য তড়িঘড়ি করে শুধু বেসিক স্কেল প্রদান করেছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল বাশারের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার কার্যালয়ে ২ দিন যাওয়া হলেও তিনি দেখা করেননি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিদর্শক কলেজ মো. আতাউর রহমান বলেন, এখানে আমি নতুন এসেছি, এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য দিতে পারব না। খোঁজখবর নিতে হবে। তিনি বলেন, যারা তদন্ত কমিটিতে আছেন তারা বলতে পারবেন কবে তদন্ত শুরু হবে।
এদিকে, কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় অধ্যক্ষের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভে ফুঁসছেন শিক্ষার্থীসহ অভিভাবক মহল। এক্ষেত্রে কলেজটির মান ফিরিয়ে আনাসহ ভালো ফলাফলের জন্য অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি করেছেন তারা। এ বিষয়ে কয়েক দফায় সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করা হয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৮২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞান শিক্ষার পথিকৃৎ মহিয়সী নারী রসায়ন বিজ্ঞানী ড. মালিকার নামে ঐতিহ্যবাহী ধানমন্ডি ৭/এ রোডে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ধানমন্ডির আলিশান জায়গায় স্থাপতি ওই কলেজটিতে পর্যায়ক্রমে আলিশান ক্যাম্পাস রেখেই অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা সত্ত্বেও লেখাপড়ার মান উন্নত হচ্ছে না।