মিরাজের লড়াই ব্যর্থ, চারদিনেই হার বাংলাদেশের
বাংলাদেশ ১০৬ ও ৩০৭ * দক্ষিণ আফ্রিকা ৩০৮ ও ১০৬/৩ * ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ উইকেটে জয়ী
জ্যোতির্ময় মন্ডল
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
‘যে উইকেট চেয়েছিলাম, সেটা পাইনি,’ চারদিনেরও কম সময়ে ঢাকা টেস্ট হেরে আক্ষেপ বাংলাদেশ দলের এক ক্রিকেটারের। কেমন উইকেট চেয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা! তাদের চাহিদা মোতাবেক পিচ বানালেই বা কী আসত-যেত। বাংলাদেশ ক্রিকেটে ‘যাহা বাহান্ন, তাহাই তেপ্পান্ন’।
কানপুর আর মিরপুরে কোনো পার্থক্য নেই। কানপুরে আগের টেস্টে ৪৭ ওভারে ১৪৬ রানে দ্বিতীয় ইনিংস শেষ। মিরপুরে ৮৯.৫ ওভারে ৩০৭ রানে অলআউট। হারের ব্যবধান একই। ভারতেও সাত উইকেটে।
এখানেও তাই। সুতরাং, উইকেট যতই ভিন্ন হোক, ফল তো সেই অভিন্নই।
বৃহস্পতিবার ঢাকা টেস্টের চতুর্থদিনের প্রথম সেশনে দক্ষিণ আফ্রিকা মাত্র ২২ ওভারে ১০৬ রানের লক্ষ্য পূরণ করে সাত উইকেটে জয়ী হয়। সে সুবাদে তারা বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে উঠে এলো চতুর্থ স্থানে। দীর্ঘ এক দশকে উপমহাদেশে ১৫তম ম্যাচে প্রোটিয়াদের এটি প্রথম টেস্ট জয়। শেষবার তারা ২০১৪ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে গল টেস্ট জিতেছিল। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সফরকারীরা এগিয়ে গেল ১-০তে। সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট চট্টগ্রামে শুরু হবে ২৯ অক্টোবর।
চতুর্থদিনের গল্প খুবই অল্প। সাত উইকেটে ২৮৩ রানে দিন শুরু করা বাংলাদেশ আর মাত্র ৪.৫ ওভারে ২৪ রান তুলে ৩০৭-এ থামে দ্বিতীয় ইনিংসে। তিন রানের আক্ষেপ নিয়ে শেষ ব্যাটার হিসাবে আউট হন মেহেদী হাসান মিরাজ। শেষ শিকার ধরা রাবাদা ম্যাচ শেষ করেন নয় উইকেট নিয়ে। বাকি কাজটুকু সারতে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা ১৫টি চার ও দুটি ছয়ের সাহায্য নিয়েছেন। তিনে নামা স্টাবস শেষতক অক্ষত থাকেন ৩০-এ। তিনটি উইকেটই নেন তাইজুল ইসলাম। ম্যাচে তার শিকার আট উইকেট।
আগেরদিন স্পিন বোলিং পরামর্শক মুশতাক আহমেদ বলেছিলেন, নিজেদের ওপর বিশ্বাস রেখে খেললে যে কোনো কিছুই সম্ভব। সকালের মিরপুরে সেই বিশ্বাস উবে গেল কর্পূরের মতো। বাংলাদেশের স্কোরও বড় হলো না। মিরাজও ফিরলেন সেঞ্চুরি থেকে তিন রান দূরে থাকার আফসোস নিয়ে। শুরু থেকেই বাংলাদেশকে ভুগিয়েছেন রাবাদা। মিরাজের সেঞ্চুরি হতে দিলেন না তিনিই। তার লেন্থ ডেলিভারি কাট করার চেষ্টায় মিরাজ স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। ১০ চার ও এক ছক্কায় ১৯১ বলে ৯৭ রানে শেষ হয় তার লড়াই।
এ নিয়ে এ বছর চারবার শতরানের আশা জাগিয়েও পারলেন না। গত মার্চে শ্রীলংকার বিপক্ষে চট্টগ্রামে অপরাজিত থাকেন ৮১ রানে। আগস্টে পাকিস্তান সফরে পরপর দুই টেস্টে খেলেন ৭৭ ও ৭৮ রানের ইনিংস। এবার আরেকটু এগিয়ে গেলেও তিন অঙ্কের দেখা পেলেন না। ২০২১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০৩ রানের ইনিংসটিই এখন পর্যন্ত তার একমাত্র টেস্ট শতরান। মিরাজের আরেকটি লড়াইয়ের পর স্বাগতিক দলের ইনিংস শেষ হয় ৩০৭ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে করে ৩০৮।
সকালের মেঘলা কন্ডিশনে প্রোটিয়া দলের দুই পেসার রাবাদা ও মুল্ডার দ্রুত স্বাগতিকদের গুটিয়ে দেন। ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন এইডেন মার্করামরা। এক প্রান্তে পেসার হাসান মাহমুদ দারুণ সুইং-বাউন্স দিলেও অপর প্রান্তে স্পিনারদের বলে মারতে থাকেন জর্জি-মার্করামরা।
দশম ওভারে মার্করামকে বোল্ড করেন তাইজুল ইসলাম। ২৭ বলে ২০ রান করেন প্রোটিয়া অধিনায়ক মার্করাম। সর্বোচ্চ ৪১ রান করেন ওপেনার টনি ডি জর্জি। তাকেও ফেরান তাইজুল। জয় থেকে নয় রান দূরে থাকতে তাইজুল আরেক ব্যাটার ডেভিড বেডিংহামকে ফেরান। ম্যাচ শেষে মিরাজ বলেন, ‘আমি শুধু আমার সেঞ্চুরির জন্য খেলিনি। চেয়েছিলাম দলকে আরও উপরে নিয়ে যেতে। আসলে উইকেট হয়তো ঠিক বুঝতে পারিনি আমরা।’ (স্কোর কার্ড খেলার পাতায়)