Logo
Logo
×

শেষ পাতা

লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিতর্কে উন্নয়ন সহযোগীরা

Icon

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিতর্কে উন্নয়ন সহযোগীরা

বিভিন্ন কারণে শঙ্কার মুখে পড়েছে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন। কমে যেতে পারে উৎপাদন। ফলে চলতি অর্থবছর দেশের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির কাঙ্ক্ষিত অর্জন নাও হতে পারে। এ নিয়ে রীতিমতো বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা। বিশেষ করে দেশের প্রধান তিন বৈদেশিক ঋণ দাতা সংস্থা-বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া পূর্বাভাসে এই বিতর্ক স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি পৃথক প্রতিবেদনে সংস্থাগুলো তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে গিয়ে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে। সবাই বাধা হিসাবে মনে করছে অনিশ্চয়তাকেই। এদিকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন করে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ না করলেও চলতি বাজেটে সদ্য পতন হওয়া আওয়ামী সরকার ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। সেটা এখনো আছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনীতি যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সেখানে উন্নতি ঘটানো না গেলে যা ধারণা করা হচ্ছে প্রবৃদ্ধির অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ও শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ড. জাহিদ হোসেন বুধবার যুগান্তরকে বলেন, এটা পরিষ্কার যে, প্রথম চার মাস দেশের অর্থনীতি যে অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এর ওপর ভিত্তি করেই সব উন্নয়ন সহযোগী তাদের পূর্বাভাস কমিয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রকৃত অবস্থা কী হবে সেটি সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন। বর্তমানে রেমিট্যান্স ছাড়া অর্থনীতির অন্যান্য খাতের প্রবৃদ্ধি হয় নেগেটিভ না হয় শূন্য দেখা যাচ্ছে। উন্নয়ন সহযোগীরা যে প্রক্ষেপণ দিয়েছে সেটিও যদি অর্জন করা যায় খারাপ হবে না। কিন্তু সেই অর্জনও নির্ভর করছে আগামী ৮ মাস দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা কতটুকু নিশ্চিত করা যায় তার ওপর। কিন্তু দেশে প্রতি সপ্তাহে কিছু না কিছু ঘটনা ঘটছে। এতে মনে হয় স্থিতিশীলতা আসেনি এখনো। কাজেই আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি পরিস্থিতির উন্নতি না হলে উন্নয়ন সহযোগীরা যে পূর্বাভাস দিয়েছে এর থেকেও প্রবৃদ্ধি কম অর্জন হতে পারে।

সূত্র জানায়, গত ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই মুহূর্তে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ চারটি প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আন্তর্জাতিক চাপ এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতা। এসব কারণে প্রবৃদ্ধি খুব বেশি বাড়বে না। চলতি অর্থবছরে জিডিপি কমে দাঁড়াতে পারে ৪ শতাংশ। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সেটি বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে। এছাড়া আর্থিক খাতে উল্লেখযোগ্য অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগ ও শিল্পে দুর্বল প্রবৃদ্ধি, কম রাজস্ব আদায় এবং সাম্প্রতিক বন্যার ফলে কৃষিতে মাঝারি মানের প্রবৃদ্ধি হওয়ার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সার্বিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে। বিশ্বব্যাংকের মতে-চলতি অর্থবছর কৃষি খাতে কিছুটা কমে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ শতাংশ, শিল্পেও কমে গিয়ে প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ এবং সেবা খাতেও কিছুটা কমে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। বলা হয়েছে, আর্থিক খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাতে নানা ধরনের সংকট রয়েছে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ অনেক বেশি। সরকারের অনেক প্রচেষ্টার পরও এটি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এছাড়া মূল্যস্ফীতি কমাতে ঋণের সুদের হার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বেসরকারি খাতে ঋণ গ্রহণ কমেছে, যা বেসরকারি বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে। এমনিতেই বেসরকারি বিনিয়োগ অনেক কম। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বিশ্বব্যাংক এপ্রিলে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী কমে গেলে তা হবে কোভিড মহামারির পর সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) প্রকাশ করেছে অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সেখানে বলা হয়েছে, গত জুলাই ও আগস্টে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশে বাণিজ্য বিঘ্নিত হয়েছে। ফলে চলতি অর্থবছরে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এর আগের পূর্বাভাসে সংস্থাটি বলেছিল, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে পণ্য ও সেবার সার্বিক উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। তবে সাম্প্রতিক বন্যা বিবেচনায় নিয়ে চলতি অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমানো হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, প্রাথমিকভাবে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ভঙ্গুর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও আর্থিক খাতে দুর্বলতা থেকে সৃষ্টি হয়েছে আর্থিক খাতের ঝুঁকি। পর্যবেক্ষণে সংস্থাটি বলেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, কঠোর বৈশ্বিক আর্থিক পরিস্থিতি ও অন্যান্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে চাহিদা কমে যেতে পারে। পণ্য ও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়া ও টাকার দাম কমে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি বেশি আছে। আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ায় চলতি হিসাবের ঘাটতি কমেছে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নির্ভর করবে রাজস্ব আদায় বাড়ানো, সুদ ও টাকার বিনিময় হার যথাযথ নীতির মাধ্যমে স্থিতিশীল করা ও অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে দ্রুত সংস্কারের ওপর।

এদিকে ২২ অক্টোবর ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সেখানে বলা হয়েছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। আর সার্বিক মূল্যস্ফীতি হবে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে চলতি অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে আইএমএফের আগের পূর্বাভাস ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এছাড়া মূল্যস্ফীতি আগের ৯ দশমিক ৭ শতাংশ হবে বলে জানিয়েছিল সংস্থাটি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম