Logo
Logo
×

শেষ পাতা

দুর্নীতি-প্রতারণায় ‘পাকা’ ছিলেন নজিবুল বশর

জামায়াতের বিরুদ্ধাচরণকেই বেছে নেন সুবিধা আদায়ের কৌশল হিসাবে

Icon

এম এ কাউসার, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দুর্নীতি-প্রতারণায় ‘পাকা’ ছিলেন নজিবুল বশর

ছবি: সংগৃহীত

জামায়াতবিরোধী কঠোর অবস্থানের কারণে আলোচিত ছিলেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। তিনি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের টিকিটে তিনবার এবং বিএনপির মনোনয়নে একবার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। এই সংসদ সদস্য হওয়ার নেপথ্যে ইসলামী দলের সঙ্গে প্রতারণা করাই ছিল তার উল্লেখযোগ্য হাতিয়ার। খোদ ফটিকছড়িতেই নিজের দল তরিকত ফেডারেশনের কোনো অবস্থান ছিল না। এ কারণে এক সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী হোসাইন মোহাম্মদ আবু তৈয়বের সঙ্গে সিন্ডিকেট করেছিলেন। তার লোকবলের ওপর ভর করে টানা ১০ বছর রাজত্ব করেছেন তিনি। ফটিকছড়ির রাজনীতিতে একচ্ছত্র প্রভাব রেখেছিলেন ভাণ্ডারী। তবে সেই প্রতারণায় আওয়ামী লীগকে বেশিদিন আটকে রাখতে পারেননি নজিবুল। স্বার্থ হাসিল হওয়ার পর ভাণ্ডারীকে ‘ঢাকের বায়া’ হিসাবে ছুড়ে ফেলে দেয় আওয়ামী লীগ। তবে এরই মধ্যে দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে গুছিয়ে নেন আখের। জামায়াতের বিরুদ্ধাচরণকে গ্রহণ করেন সুবিধা আদায়ের কৌশল হিসাবে। দুর্নীতি আর প্রতারণায় ‘পাকা’ খেলোয়াড় হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন এলাকায়।

জানা গেছে, ২০১০ সালে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব রেজাউল হক চাঁদপুরী বাদী হয়ে জামায়াত-শিবিরের ৫ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও কেন্দ্রীয় নেতা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর পরবর্তী সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। এই মামলায় আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়ে নিজামী ও মুজাহিদের ফাঁসি হয়। ২০১৫ সালে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন এমন অভিযোগ তুলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছিলেন নজিবুল। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের জন্যও নজিবুল বশরের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। আর সেই কাজটি হওয়ার পর পতিত আওয়ামী লীগ সরকার মাইজভাণ্ডারী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এরপর তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়। গত বছর নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর দুই ছেলে তরিকত ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ তৈয়বুল বশর মাইজভাণ্ডারী ও সৈয়দ আফতাবুল বশর মাইজভাণ্ডারীসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ৩৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করে দুদক। এই আত্মসাতের ঘটনায় নজিবুল বশর নিজেও জড়িত ছিলেন। গত ১০ বছরে ফটিকছড়িতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বরাদ্দের কয়েক কোটি টাকা লুটপাট করেছেন নজিবুল।

এই লুটপাটের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের একাংশ বিভিন্ন সময় কথা বলেন। ছেলেদের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হওয়ায় নজিবুল বশর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের হুঁশিয়ারি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট নামে সুন্নিদের বৃহৎ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার কথা বলে সমাবেশ করেছিলেন নজিবুল বশর। বিশাল সেই সমাবেশের ভিডিও চিত্র নিজের কর্মী-সমর্থক দাবি করে আওয়ামী লীগ থেকে জোটের নেতা হিসাবে নিজের মনোনয়ন বাগিয়ে নেন। ইসলামী ফ্রন্ট তার এই পল্টিবাজি ও প্রতারণায় ক্ষুব্ধ ছিল।

ফটিকছড়ির মাইজভাণ্ডার দরবারে ১৯৫৯ সালের ২ ডিসেম্বর নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর জš§। এটি দেশের তরিকতপন্থিদের অন্যতম তীর্থস্থান হিসাবে পরিচিত। তার বাবা শফিউল বশর মাইজভাণ্ডারী ছিলেন এই দরবারের অন্যতম পির। মূলত এই মাইজভাণ্ডার দরবারকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ভাণ্ডারী। তবে তার নানা অপকর্ম ও প্রতারণার কারণে মাইজভাণ্ডার দরবারেরই শীর্ষস্থানীয় অনেকে তাকে পছন্দ করতেন না। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী হত্যাসহ একাধিক মামলা হয়েছে।

জানা যায়, নজিবুল বশর চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি যখন যার কাছ থেকে সুবিধা পেয়েছেন তার সঙ্গে ভিড়েছেন। ১৬ সেপ্টেম্বর নজিবুল বশরকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত নেতারা বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম সহযোগী ১৪ দলীয় জোট নেতা নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী চাঁদপুরে তার দলীয় এক কর্মীকে দিয়ে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে ঢাকা-চট্টগ্রামে একাধিক মামলা হয়েছে। তাই অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হোক।

গত বছরের ১৭ অক্টোবর এক সমন্বয় সভায় নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী নিজেই বলেছিলেন, ‘ফটিকছড়িতে জামায়াত-শিবির ২-৩ জনকে টার্গেট করছে, আমিও তাদের টার্গেটে আছি। যেহেতু আমার চেয়ে জামায়াতের বড় ক্ষতি কেউ করে নাই।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম