ল্যাবএইডে রাহিব রেজার মৃত্যু
চিকিৎসায় অবহেলার প্রমাণ মিলেছে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
রাজধানীর ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক শিক্ষার্থী রাহিব রেজার (৩১) মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকের অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মৃত্যুর ঘটনায় ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) এবং তার টিমের বিরুদ্ধে গুরুতর চিকিৎসা অবহেলার প্রমাণ পায়। একই সঙ্গে হাসপাতালের এন্ডোসকপি ব্যবস্থাপনার ত্রুটি পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির রিপোর্টে চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টি উঠে এসেছে। ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের চিকিৎসক।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে ল্যাবএইড হাসপাতালের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাহিব রেজার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করে তার পরিবার। রিটের শুনানি শেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কমিটিতে একজন আইনজীবীকে রাখতে বলা হয়। বুধবার হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। পরে সংবাদ সম্মেলনে রাহিব রেজার পরিবারের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম এ তথ্য জানান। এ সময় রাহিবের স্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র উল্লেখ করে ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, এন্ডোসকপির প্রক্রিয়া, এন্ডোসকপিকালীন এবং পরবর্তী স্টেজেও চিকিৎসায় চরম অবহেলা করা হয়েছে। রাহিব রেজা সর্বোচ্চ ঝুঁকির রোগী ছিলেন। অতিরিক্ত ওজন, কার্ডিয়াক ইস্যুও ছিল। অস্ত্রোপচারের আগে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে, সেখানেই এসব শনাক্ত হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে হলেও সত্য, ওনারা কোনো রিপোর্টই দেখেননি। ফলে কোনো ঝুঁকি আছে কি না, না জানায় কোনো ব্যবস্থাই নেননি। এর মধ্যেই এনেসথেশিয়া দিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। এখন প্রশ্ন এসেছে, কে এনেসথেশিয়া দিয়েছিল?
এ আইনজীবী বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, সেখানে দক্ষ কোনো এনেসথেশিস্ট ছিল না। এটা অবাক করে দিচ্ছে। এত বড় হাসপাতালে, এত বড় একজন ডাক্তার, তার টিমে কোনো দক্ষ এনেসথেশিস্ট নেই। কোনো ঝুঁকি যাচাই ছাড়াই এন্ডোসকপি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এন্ডোসকপিতে সম্পৃক্ত ৮-৭ জনেরই অভিজ্ঞতার কোনো কাগজ তদন্ত কমিটি পায়নি। অর্থাৎ অদক্ষ লোক দিয়ে এন্ডোসকপি করা হয়েছে। এখানে স্বপ্নীল ও হাসপাতাল উভয় সমান অপরাধী। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, একই দিন একই ডাক্তার আরও ৬৬টি এন্ডোসকপি ও কলোনোসকপি করেছেন।
রাশনা ইমাম বলেন, এখনো ক্লিয়ার না, রিএজেন্ট কী ব্যবহার করা হয়েছিল? এমনকি ল্যাবএইডের এন্ডোসকপি সেটআপে ত্রুটি পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে, এন্ডোসকপির পর রোগীর শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য জটিলতা দেখা দিয়েছিল, সেখান থেকে ৮৫ মিনিট ধরে সময় নষ্ট করা হয়েছে। ফলে রোগীকে পরে আইসিইউতে নিলেও বাঁচানো যায়নি। হাইকোর্টে ডা. স্বপ্নীলের নিবন্ধন বাতিল, ল্যাবএইডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, ক্ষতিপূরণসহ অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান এ আইনজীবী। রাহিব রেজা (৩১) রাজধানীর স্টার্টিক ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানে প্রোডাক্ট ম্যানেজার ও আইটি কনসালটেন্ট হিসাবে কর্মরত ছিলেন।