Logo
Logo
×

শেষ পাতা

আলজাজিরার অনুসন্ধান

লন্ডনে সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদ

আরও বিপুল সম্পত্তির খোঁজ

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

লন্ডনে সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদ

লন্ডনের রাস্তায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী

দেশত্যাগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও লন্ডনে আলিশান অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করছেন ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। যে বাড়িতে তিনি বসবাস করছেন, এর বাজারমূল্য ১ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার (প্রায় ১৬৮ কোটি টাকা)। কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট (আই-ইউনিট) এ তথ্য জানতে পেরেছে। আলজাজিরার অনুসন্ধান ইউনিটের সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান ও উইল থর্ন এ প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। সোমবার এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সাইফুজ্জামান যুক্তরাজ্যে কোটি কোটি ডলার অর্থ পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগ অনুসন্ধান করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানের স্বার্থে প্রতিষ্ঠানটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৭ অক্টোবর সাইফুজ্জামান দম্পতির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন ঢাকার একটি আদালত।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের লন্ডনের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের পাশ দিয়ে সাইফুজ্জামানের হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য আলজাজিরার আই-ইউনিটের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। লন্ডনে ৯০ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের ছয়টি সম্পত্তির মালিক তিনি। যুক্তরাজ্যে তার যে সম্পত্তির সাম্রাজ্য রয়েছে, এটি তার একটি ছোট অংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও যুক্তরাষ্ট্রে সাইফুজ্জামানের আরও কয়েক শ অ্যাপার্টমেন্ট আছে। সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রীর সম্পদ জব্দের বিষয়ে দুদক ইতোমধ্যে আদালত থেকে আদেশ পেয়েছে। এতে এ দম্পতির মালিকানাধীন অ্যাপার্টমেন্টগুলো আদালতের আদেশের আওতায় পড়েছে।

বাংলাদেশে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। তার অন্যতম একজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন সাইফুজ্জামান।

দুবাইয়ে আরও সম্পত্তি : সাইফুজ্জামানের বৈশ্বিক সম্পত্তি সাম্রাজ্য নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে ‘দ্য মিনিস্টার্স মিলিয়নস’ শিরোনামের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে আলজাজিরা। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, তার সম্পত্তির মূল্য আনুমানিক ৫০ কোটি মার্কিন ডলার।

সাবেক এ মন্ত্রী আলজাজিরার পরিচয় গোপন করা (আন্ডারকভার) সাংবাদিকদের কাছে গর্ব করে বলেছিলেন, যুক্তরাজ্যের লন্ডন, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে তার অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে তিনি শুধু যুক্তরাজ্যেই ৩৬০টির বেশি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন।

আলজাজিরার হাতে আসা তথ্যে দেখা যায়, দুবাইয়ে সাইফুজ্জামানের সম্পত্তির সংখ্যা প্রাথমিক ধারণার চেয়ে অনেক বেশি। ২০২৩ সালে নতুন করে ফাঁস হওয়া সম্পত্তির তথ্যে দেখা যায়, সাইফুজ্জামান সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৫০টির বেশি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের তালিকাভুক্ত মালিক। এ সম্পত্তির মূল্য ১৪ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি।

নথি থেকে জানা যায়, সাইফুজ্জামানের স্ত্রী রুকমিলা জামান দুবাইয়ে ২ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের আরও ৫০টি সম্পত্তির তালিকাভুক্ত মালিক। অর্থ পাচারের অভিযোগে বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে।

দুবাইয়ে সম্পত্তির যে তথ্য আগে ফাঁস হয়েছিল (২০২০ ও ২০২২ সালের), তাতে সেখানে এ দম্পতির ৫৪টি সম্পদের মালিকানার তথ্য উন্মোচিত হয়েছিল। এ তথ্য প্রথমে পায় সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ (সিএডিএস)। পরে তা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ই২৪ ও অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড রিপোর্টিং প্রজেক্টের (ওসিসিআরপি) মাধ্যমে পায় আলজাজিরা।

গোপনে ধারণ করা ভিডিওতে সাইফুজ্জামান দুবাইয়ের অভিজাত অপেরা এলাকায় একটি পেন্টহাউজের মালিক হওয়ার বিষয়ে গর্ব করেছিলেন। জমির রেকর্ড যাচাই করে আলজাজিরা নিশ্চিত হয়েছে, তিনি সেখানে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের তালিকাভুক্ত মালিক, যার দাম ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি। নতুন তথ্যে দেখা যায়, সাবেক এই মন্ত্রী ও তার স্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩০০টির বেশি উচ্চমূল্যের অভিজাত অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে প্রায় ১৭ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করেছেন। আর সামগ্রিকভাবে এ দম্পতি বিশ্বজুড়ে ৬০০টির বেশি সম্পত্তির তালিকাভুক্ত মালিক।

মানি লন্ডারিংয়ের তদন্ত : বাংলাদেশের মুদ্রা আইন অনুযায়ী, দেশটির কোনো নাগরিককে বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি বিদেশে নিয়ে যাওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয় না। আলজাজিরার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে অফশোর সম্পদের বিবরণ ঘোষণা করেননি সাইফুজ্জামান। আর তা না করে তিনি বাংলাদেশের কর আইন লঙ্ঘন করেছেন। শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সাবেক মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ নিয়ে জোরেশোরে তদন্ত শুরু করেছে।

বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। যুক্তরাজ্যে কোটি কোটি ডলার পাচারের অভিযোগের অনুসন্ধান চলাকালে তাদের বাংলাদেশ ত্যাগ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাইফুজ্জামানের দাবি, বিগত সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি হিসাবে তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য সাইফুজ্জামানের স্ত্রী রুকমিলার কাছে অনুরোধ জানিয়েছিল আলজাজিরা। এ অনুরোধে তিনি সাড়া দেননি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম