ব্যারিস্টার সুমন ৫ দিনের রিমান্ডে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর মিরপুর থানার হোটেল কর্মচারী হৃদয় হত্যাচেষ্টা মামলায় হবিগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য (এমপি) ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের ৫ দিনের রিমান্ড পেয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন এ আদেশ দেন। এর আগে মিরপুর-৬ নম্বর এলাকা থেকে সোমবার রাত দেড়টায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
মিরপুর থানার এসআই আব্দুল হামিদ তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রপক্ষের পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।
শুনানিতে যা হলো : এদিন বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে সুমনকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় তাকে কাঁদতে দেখা যায়। তখন বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকলে রাষ্ট্রপক্ষের পিপি ওমর ফারুক ফারুকী তাদের শান্ত করেন। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ডের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে আদালতে আবেদন করেন।
এরপর শুনানিতে ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, তিনি একজন ব্যারিস্টার। ৫ আগস্টের পর দেখলাম তিনি লন্ডন থেকে কথা বলেছেন। জনগণকে বুঝিয়েছেন তিনি দেশে নেই, তিনি লন্ডন আছেন। শুরু থেকেই তিনি চতুরতা করে আসছেন। চতুরতাই তার কাজ। পরে দেখা গেল তার বোনের বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়েছে।
ফারুকী বলেন, তিনি (সুমন) নিজেকে দাবি করেন তিনি সেলফি এমপি। সংসদে দাঁড়িয়েও তিনি বলেছেন তিনি সেলফি এমপি। বিদেশ থেকে মানুষের কাছ থেকে টাকা এনে এলাকায় কয়েকটা সেতু বানিয়ে তিনি এলাকার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তাছাড়া নতুন এমপি হলেই দেখি এমপিরা গাড়ি কেনেন। তিনিও সবচেয়ে দামি গাড়ি কিনে এনেছেন, কিন্তু তিনি গাড়িটা চালাতে পারেননি।
শুনানিতে ফারুকী আরও বলেন, সুমন এলাকার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে এমপি হয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় হাইকোর্টে সংবাদ সম্মেলনে করে তিনি শেখ হাসিনার পক্ষ নিয়েছেন। তখন তিনি বলেছেন, পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই যে হাসিনাকে সরাতে পারে।
তিনি আরও বলেন, তিনি এখন আদালতে কেন? তিনি তো ব্যারিস্টার। তিনি এমন কাজই করেছেন যে স্বৈরাচারের পতনের পর তিনি বোনের বাসায় আত্মগোপন করেছেন। আর মিরপুরে হামলার কারিগর তিনি। তার পালিয়ে থাকারও ঠিকানা মিরপুর। এতেই বোঝা যায় তিনি যে এখানে জড়িত। এ যুবক বয়সে তার উচিত ছিল ছাত্রদের সঙ্গে থাকা। আন্দোলনের সঙ্গে থাকা। অনেক ব্যারিস্টারই ছাত্রদের সঙ্গে ছিলেন কিন্তু তিনি আরেকটি মেয়ে নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন বিরোধী বক্তব্য দেন।
আসামিপক্ষের শুনানিতে বলেন, আদালতে যে মামলায় তাকে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে সে মামলায় তার নাম ছাড়া আর কিছুই নেই। এজাহারে সুনির্দিষ্ট কিছুই নেই। সেহেতু, তার রিমান্ড বাতিল করে জামিন প্রার্থনা করছি। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আদেশ দেন।
এরপর বিচারক এজলাস থেকে নেমে যাওয়ার পর ব্যারিস্টার সুমন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকীকে উদ্দেশ করে কথা বলতে চান কিন্তু ফারুকী কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এ সময় সুমন বলেন, আপনার সঙ্গে আলাদা করে কিছু বলব না স্যার। আপনার মাধ্যমে সব আইনজীবীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি খুব সরি স্যার।
রিমান্ড আবেদন যা বলা হয়েছে : রিমান্ড আবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মামলার ঘটনাটি গোপনে ও প্রকাশ্যে প্রাথমিক তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তে ওই আসামির মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। ব্যারিস্টার সুমন এ মামলার ৩ নম্বর আসামি। আসামি একজন ব্যারিস্টার বিধায় জিজ্ঞাসাবাদে মামলার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে প্রশ্নের জবাব কলাকৌশলে এড়িয়ে যান। তিনি তার সংসদীয় আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হলেও তিনি আওয়ামী লীগের একজন উদীয়মান নেতা। আওয়ামী লীগসহ তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ওই আসামির নির্দেশনা অনুসরণ করে থাকে।
মামলার এজাহারে যা বলা হয়েছে : মামলার এজাহারে বলা হয়, মামলার বাদী হৃদয় মিয়া মিরপুরে বাঙালিয়ানা ভোজ হোটেলে সহকারী বাবুর্চি হিসাবে চাকরি করতেন। ১৯ জুলাই ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে কোটা সংস্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের ক্যাডাররা লোহার রড, হাসুয়া, পিস্তল, আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা, ককটেল ও বোমাসহ বেপরোয়াভাবে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আক্রমণ করে। এ সময় বাদীর ডান পায়ে গুলি লেগে দুই ভাগ হয়ে যায়। পরে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন বাদীকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে ভর্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসা করেন। পরে হাসপাতাল থেকে বাদীর ডান পায়ের হাঁটুর ভেতরে গুলি থাকাবস্থায় ১৩টি সেলাই করে পা বেঁধে দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বাড়িতে গিয়ে বাদীর অবস্থা খারাপ হওয়ায় বাদীর এলাকার লোকজনের সহায়তায় ৩ আগস্ট আবার ওই হাসপাতালে আসেন এবং বাদীর পায়ের এক্সরে করে তার পায়ে বিদ্ধ বুলেটটি বের করে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২৩ সেপ্টেম্বর হৃদয় মিয়া বাদী হয়ে মিরপুর থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। বাদী হবিগঞ্জের মাধবপুর ১০নং হাতিয়াইন ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি।
বিচারের দাবিতে চুনারুঘাটে বিক্ষোভ : চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, ব্যারিস্টার সুমন গ্রেফতারের খবরে তার বিচার দাবিতে চুনারুঘাট উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন বিক্ষোভ করেছে। এ সময় বক্তৃতা করেন-উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মীর সিরাজ, উপজেলা যুবদল নেতা আজাদ তালুকদার, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো. মারুফ মিয়া, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুর রহমান সুজন, সদস্য সচিব শাহ প্রান্ত। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সামছুল হক, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হক চৌধুরী, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আব্দুল আউয়াল। একই সময়ে এমপি সুমনের কর্মী-সমর্থকরা চুনারুঘাট মধ্যবাজারে প্রতিবাদ সভা করতে চাইলে উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাদের বাধায় তা করতে পারেননি তারা।