সাবেক মন্ত্রী-এমপি ব্যবসায়ীসহ ২৪ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাবেক মন্ত্রী, সংসদ-সদস্য, ব্যবসায়ী, আমলাসহ ২৪ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। সোমবার দুদকের ৯টি পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আস সামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের বিষয়ে শুনানি করেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর এবং দুদকের আইনজীবী মীর মোশাররফ আলী সালাম।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর : মহীউদ্দীন খান আলমগীরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। এর আগে দুদকের উপপরিচালক সৈয়দ আতাউল কবির তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, মহীউদ্দীন খান আলমগীর মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সাবেক দ্য ফারমার্স ব্যাংক লি. (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক লি.) জামালপুরের বকশীগঞ্জ শাখা থেকে ৮ কোটি ৮৬ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
সাবেক এমপি সাদেক ও আশরাফ এবং তাদের স্ত্রী : সাবেক সংসদ-সদস্য মো. সাদেক খান ও তার স্ত্রী ফেরদৌসী খান এবং সাবেক সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খান ও স্ত্রী আফরোজ সুলতানার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। দুদকের উপপরিচালক ওমর ফারুক ও উপপরিচালক রেজাউল করিম তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে পৃথক আবেদন করেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত আদেশ দেন।
সাদেক খানের আবেদনে বলা হয়েছে, সাদেক খানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ভূমিদস্যুতাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকরি অর্থ আত্মসাৎপূর্বক নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে ও স্ত্রীর নামে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে জানা যায়।
আশরাফের আবেদনে বলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎপূর্বক নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি তিন সদস্যের টিমের কাছে অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। আশরাফ খান তার অবৈধ আয়ে নিজ এলাকায় আনুমানিক ৫১ লাখ টাকার কৃষিজমি, প্রায় ১ কোটি ১৭ লাখ টাকার ফ্ল্যাট, প্লট, ভাটারা থানার জোয়ারসাহারা মৌজায় প্রায় ৪৮ লাখ টাকার ফ্ল্যাট এবং রাজউকের উত্তরা ৩য় প্রকল্পের প্রায় ৩২ লাখ টাকার প্লট এবং তার স্ত্রী আফরোজা সুলতানার নামে বিভিন্ন স্থানে প্রায় এক কোটি টাকার প্লট, ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন বলে জানা যায়।
স্ত্রী-ছেলেসহ মতিউরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা : ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। দুদক উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন ফের তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়েছে, মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কামিজ ও ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণব কর্তৃক দাখিলকৃত সম্পদবিবরণী যাচাইয়ের জন্য ছয় সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। মো. মতিউর রহমান ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা দেশত্যাগ করার চেষ্টা করছেন। তাই সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশ গমন রহিত করার জন্য পুনরায় আদেশ প্রদান করা আবশ্যক।
সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান ও ভাই-ভাতিজা : সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান, তার ভাই শাহাবুদ্দিন আহমেদ ও ভাতিজি শামীমা সুলতানা হৃদয়ের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন। আবেদনটি করেন দুদকের পরিচালক আব্দুল মাজেদ। আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকার এমপিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও তার ঘনিষ্ঠজন দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়ন করতে পারেন মর্মে অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।
বসুন্ধরা পরিবারের ৮ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা : বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানসহ পরিবারের আট সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ব্যক্তিরা হলেন-বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও তার স্ত্রী আফরোজা বেগম, মেয়ে সাবরিনা সোবহান, ছেলে সাফওয়ান সোবহান, এমডি সায়েম সোবহান আনভীর ও তার স্ত্রী সাবরিনা সোবহান, সাদাত সোবহান ও তার স্ত্রী সোনিয়া ফেরদৌস সোবহান। দুদকের উপপরিচালক নাজমুল হুসাইন তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।