Logo
Logo
×

শেষ পাতা

প্রশাসনে পদোন্নতি-পদায়ন

টেবিলে টেবিলে ঘুরছে বঞ্চিতদের ফাইল

আমিরুল ইসলাম

আমিরুল ইসলাম

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

টেবিলে টেবিলে ঘুরছে বঞ্চিতদের ফাইল

প্রতীকী ছবি

প্রশাসনের টেবিলে টেবিলে ঘুরছে বিগত সরকারের সময়ে পদোন্নতি ও পদায়ন বঞ্চিতদের ফাইল। ফলে বঞ্চিত ও সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্তদের মধ্যেও রয়েছে অসন্তোষ। পদোন্নতির পর যথাস্থানে পদায়ন না করায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েও অনেকেই পোস্টিং পাওয়ার আগেই অবসরে চলে গেছেন। এই তালিকার মাত্র তিনজন কর্মকর্তাকে সচিব হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। যদিও সচিবের ৭টি পদ শূন্য রয়েছে।

জানা গেছে, বঞ্চিত কর্মকর্র্তাদের মধ্যে দুজনকে দুটি কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও ছয়জনকে ছয়টি অধিদপ্তরে মহাপরিচালক (ডিজি) হিসাবে পদায়ন করা হয়েছে। বেশ কয়েকজনের পদায়নের ফাইল চালাচালি হচ্ছে। দীর্ঘ বঞ্চনার পর যুগ্মসচিব হিসাবে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের অর্ধেকের পদায়ন হয়েছে। অনেকের অভিযোগ, তাদের কম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। বেশকিছু যুগ্মসচিবকে ‘ইনসিটু’ বা পূর্বের স্থানে পদায়ন করা হয়েছে।

পদোন্নতি পাওয়া উপসচিবদের পদায়ন শেষ হলেও তাদের মধ্যে বেশ কিছু কর্মকর্তাকে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের অভিযোগ করেছেন তারা। দীর্ঘ বঞ্চনার পর পদোন্নতি দেওয়া কর্মকর্তাদের পদায়ন না দেওয়ার পেছনে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে ঘুস-দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। এছাড়া বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও বঞ্চিত সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্তদের পদায়নের জোর দাবি করা হয়েছে। তবে তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস-উর রহমান বুধবার নিজ দপ্তরে যুগান্তরকে বলেন, বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে কতজন সচিব, কতজন ডিজি এবং কতজনকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে সে তথ্য আমার জানা নেই। এ বিষয়ে এপিডি উইং থেকে সংগ্রহের পরামর্শ দেন তিনি। দীর্ঘ বঞ্চনার পরও সিনিয়রিটিসহ পদোন্নতি পেয়ে তারা কেন সচিব হতে পারছেন না-এ প্রশ্নে সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, এসব বিষয় আমার এখান থেকে চূড়ান্ত হয় না। এসব কাজে আমার একক কর্তৃত্ব নেই।

বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বাসা) সভাপতি পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, সবাই সচিব হবেন এমন দাবি আমরা করি না, করবও না। কিন্তু অধিদপ্তরের ডিজি, কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, বিভাগীয় কমিশনার হতে তো বাধা নেই। সংগঠনের তরফ থেকে সরকারের একাধিক উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেছি। দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছি করছি। কিন্তু ফলাফল হতাশাব্যঞ্জক।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার (সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব) যুগান্তরকে বলেন, বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলেও তাদের পদায়ন নিয়ে গড়িমসি করা হচ্ছে। বিষয়টি আমরা বারবার কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছি। সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা এই হচ্ছে, হবে বলছেন। আজ না কাল, কাল না পরশু বলে ঘুরাচ্ছেন। পক্ষান্তরে পতিত সরকারের সময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা টাকা-পয়সা কামিয়েছেন। তারা টাকা-পয়সা খরচ করে এখন আবার গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নিচ্ছে।

তিনি বিগত সময়ের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, বিগত স্বৈরাচার ও স্বেচ্ছাচার সরকারের সময়ে পদোন্নতি বঞ্চিতরা পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে সংসার খরচ চালিয়েছেন, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করিয়েছেন। তাদের হাতে টাকাও নেই, পোস্টিংও নেই। আমি বলছি এবং বলেই যাব। পদায়নের সঙ্গে জড়িতদের ষড়যন্ত্রের কারণে বঞ্চিত যোগ্য কর্মকর্তাদের পদায়ন হচ্ছে না। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগ্যদের সম্মানের সঙ্গে পদায়ন করতে হবে।

এ বিষয়ে সরকারি চাকরির বিধিবিধান বইয়ের লেখক ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া যুগান্তরকে বলেন, বঞ্চিতদের মধ্যে অবশ্যই যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তা রয়েছেন। তাদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা উচিত। যারা যোগ্য এবং সৎ-সরকার চাইলে তাদের সচিব হিসাবে পদায়ন করতে পারে। সে ক্ষেত্রে যোগ্যতা এবং সততাকে প্রাধান্য দিতে হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাড়ে ১৫ বছর পর আগস্টে পদোন্নতি পেয়ে অবসরে গেছেন বেশ কয়েকজন অতিরিক্ত সচিব। বঞ্চিত ২০৬ অতিরিক্ত সচিবের মধ্য থেকে যে তিনজনকে সচিব করা হয়েছে তারা হলেন-তথ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার উল্লাহ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতু বিভাগের মো. ফাহিমুল ইসলাম। তাদের মধ্য থেকে গ্রেড-১ পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছে পাঁচজন অতিরিক্ত সচিবকে। এর মধ্যে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রজেন্দ্র নাথ সরকার, ড. মনিরুল হুদাসহ আরও তিন কর্মকর্তা রয়েছেন। ছয়জন অতিরিক্ত সচিবকে বিভিন্ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ড. এবিএম মাহবুব আলমকে জাতীয় প্রশাসন উন্নয়ন একাডেমির-এমডিএস, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. আতাউর রহমান, ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলীম আখতার খানসহ আরও তিনজন এ পদে পোস্টিং পেয়েছেন। বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান করা হয়েছে বঞ্চিত দুই কর্মকর্তাকে। এদের একজনকে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন এবং আরেকজনকে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের (এনএইচএ) চেয়ারম্যান হিসাবে পদায়ন করা হয়।

সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত ৫৪জন অতিরিক্ত সচিবকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পদায়ন করা হয়েছে। পদোন্নতি পাওয়ার পর এখনও ইনসিটু অর্থাৎ পূর্বের পদে পদায়িত ৭৯ জন অতিরিক্ত সচিব। বেশ কয়েকজন অতিরিক্ত সচিবের পদায়নের ফাইল চালাচালির মধ্যে রয়েছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া দীর্ঘ বঞ্চনার পর যুগ্ম সচিব হিসাবে পদোন্নতি পাওয়া ১৩৩ জনের মধ্যে ৬৫ জনকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়েছে। ৪৫ জন পূর্বের পদে ইনসিটু অবস্থায় রয়েছেন। বাকিদের পদায়নের ফাইল ঘুরছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে যুগ্ম সচিব এবং অধিদপ্তরের পরিচালক হিসাবে পদায়ন করা হয়েছে। বঞ্চিতদের পদায়নের ফাইল ঘাটে ঘাটে আটকে গেলেও সাবেক সরকারের সময়ের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, বিভিন্ন অধিদপ্তর ও কর্তৃপক্ষের পরিচালকরা এখনও বহাল তবিয়তে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম