আন্দোলনে অংশ নিয়েও জাতীয় পার্টি বৈষম্যের শিকার: জিএম কাদের
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, জাতীয় পার্টি সর্বতোভাবে সমর্থন দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ছিল। আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেওয়ার কারণে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পার্টির পদ-পদবি উল্লেখ করে রংপুরে মামলা হয়েছে। আমাদের নেতা-কর্মীরা গ্রেফতার হয়ে হাজতবাস করেছে। এরপরও জাতীয় পার্টি বৈষম্যের শিকার। মিথ্যা মামলা দিয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। ন্যায়বিচারভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রামে অংশ নিয়েও জাতীয় পার্টি ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানী কার্যালয়ে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সভায় সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, ১ জুলাই ছাত্ররা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু করলে, আমি ৩ জুলাই সংসদে তখনকার প্রধানমন্ত্রীর সামনে ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে বক্তৃতা করেছি। আমি বলেছি, ছাত্রদের এই আন্দোলন যৌক্তিক। চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংবিধান পরিপন্থি। বৈষম্যের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। ৬ জুলাই গাজীপুরে জাতীয় পার্টির কাউন্সিলে বক্তৃতায় আমি বলেছি, চাকরিতে কোটা পদ্ধতি মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি। তখন আমি বলেছিলাম, চাকরিতে কোটা পদ্ধতি হচ্ছে বৈষম্য। আমাদের শহিদ মিনার হচ্ছে বৈষম্যের বিরুদ্ধে জীবন দেওয়ার প্রতীক।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমি ছাত্রদের শহিদ মিনারে গিয়ে শপথ নিতে বলেছি। যখন ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ককে আটক করা হলো, আমরা তাদের মুক্তি দাবি করেছি। ছাত্র আন্দোলনে যখন গুলি চালানো হলো, আমরা এর প্রতিবাদ করেছি। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছি আমরা। রাজনীতিবিদদের মধ্যে সবার আগে রংপুরে গিয়ে শহিদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেছি আমি। শহিদ আবু সাঈদের শোকার্ত বাবা-মাকে সান্ত্বনা দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ছাত্র আন্দোলনের সাফল্য নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একটি চক্র জাতীয় পার্টিকে ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষের দল হিসাবে চিহ্নিত করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যে ছাত্রদের আন্দোলনে আমরা সমর্থন দিয়েছি, আমাদের নেতা-কর্মীরা অংশ নিয়ে হামলা-মামলার শিকার হয়ে জেল খেটেছে। সেই আন্দোলনের হত্যা মামলায় জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের আসামি করা হচ্ছে। এই অন্যায় মেনে নেওয়া হবে না। আমরা রাজপথে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ করব।
জিএম কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের দোসর হিসাবে আমাদের ব্র্যান্ডিং করার অপচেষ্টা চলছে। আমি গণমাধ্যমসহ সবার সামনে পরিষ্কার করে বলেছি, ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে আমরা যেতে চাইনি, আমাদের জোর করে নির্বাচনে নেওয়া হয়েছে। ২০১৪ ও ২০২৪ সালে নির্বাচনে যেতে বাধ্য হয়েছে জাতীয় পার্টি। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ দেশের সব রাজনৈতিক দলই অংশ নিয়েছিল। আবার ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও উপজেলা পরিষদ ও মেয়র নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। আওয়ামী লীগের নির্বাচন ব্যবস্থায় অংশ নেওয়ার কারণে কাউকে স্বৈরাচারের দোসর বলা উচিত নয়। কারণ আওয়ামী লীগের নির্বাচন ব্যবস্থায় বিএনপিসহ সব দলই অংশ নিয়েছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ-সদস্যরা চার বছর সংসদে ভূমিকা রেখেছেন।
আমরা মন্ত্রী বা এমপি হওয়ার জন্য রাজনীতি করি না। জনগণের পক্ষে কাজ করারই আমাদের রাজনীতির মুখ্য উদ্দেশ্য। সংসদে ও সংসদের বাইরে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেছি আমি।
প্রেসিডিয়াম সভায় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু, সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, এটিইউ তাজ রহমান, সোলায়মান আলম শেঠ, নাসরিন জাহান রতনা, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, অ্যাড মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মো. মিজানুর রহমান, সৈয়দ দিদার বখত, নাজমা আক্তার, আলমগীর সিকদার লোটন, মো. এমরান হোসেন মিয়া, মেজর অব. রানা মোহাম্মদ সোহেল, লিয়াকত হোসেন খোকা, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক, জহিরুল আলম রুবেল, শেরীফা কাদের, মনিরুল ইসলাম মিলন, মাসরুর মওলা, মো. জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, মো. আরিফুর রহমান খান, মো. আশরাফুজ্জামান আশু, আমিনুল ইসলাম ঝন্টু ও এসএম ইয়াসির।