Logo
Logo
×

শেষ পাতা

জুনে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হলেও আগস্টে হত্যা সাজিয়ে মামলা

পরিবার জানে না কারা থানায় হত্যা মামলা করেছে

Icon

ইমন রহমান

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জুনে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হলেও আগস্টে হত্যা সাজিয়ে মামলা

চলতি বছরের জুন মাসের ৩ তারিখে ‘হার্ট অ্যাটাক’-এ মৃত্যু হয় নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার গিরদা গ্রামের বাসিন্দা মো. বাবুল মিয়ার (৫০)। ঘটনার দিন অসুস্থ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতাল থেকে দেওয়া ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন বা হার্ট অ্যাট্যাক।’ অথচ এই বাবুল মিয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৪ আগস্ট হত্যার শিকার হয়েছেন দাবি করে আড়াইহাজার থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। মামলা নম্বর-৮। গত ২২ আগস্ট আড়াইহাজার থানার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল আমিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

মামলায় বাবুল মিয়াকে তার দলের নেতা বলেও দাবি করেন। মামলায় ১৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও আসামির তালিকায় আছেন।

এ মামলায় এখন পর্যন্ত সাবেক এক সংসদ সদস্যসহ তিনজন গ্রেফতার হয়েছেন। তবে এ মামলার বিষয়ে কিছুই জানে না বাবুল মিয়ার পরিবার। এ প্রতিবেদকের কাছে হত্যা মামলার কথা শুনে অবাক হন বাবুল মিয়ার স্ত্রী ও শাশুড়ি। যুগান্তরের অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাবুল মিয়ার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তার বাবার নাম মৃত আলী হোসেন। পড়ালেখা করেছেন দশম শ্রেণি পর্যন্ত। প্রথম জীবনে বাসের কাউন্টার মাস্টার ছিলেন। পরে নিজেই তিনটি বাসের মালিক হন। তিনি দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি। আড়াইহাজার থানা শ্রমিক দলের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন তিনি। বাবুল মিয়ার স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।

বাবুল মিয়ার স্ত্রী মনিরা সরকার শুক্রবার মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে জানান, গত ১১ ফেব্রুয়ারি কিছু লোক বাসার সামনে থেকে ধরে নিয়ে মারধর করে বাবুল মিয়াকে। এরপর কিছুদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিল। চিকিৎসা নিয়ে বাসায় আসার পর সে অনেকটাই স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করত। তার ওপেন হার্ট সার্জারিও করা ছিল। হঠাৎ গত ৩ জুন সকালে বাচ্চার সঙ্গে খেলার সময় খিঁচুনি ওঠে। তখন দ্রুত হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা বলেন, হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে।

আড়াইহাজার থানায় হওয়া হত্যা মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরা সরকার বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

আড়াইহাজার থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মো. বাবুল মিয়া দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি। গত ৪ আগস্ট সকালে দেশের সচেতন নাগরিক হিসাবে বাবুল মিয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগদান করে। বাসায় ফিরে আসার সময় আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে দুপ্তারা তাঁতীপাড়া ঈদগাহে নিয়ে ধারালো অস্ত্র, রামদা, চাইনিজ কুড়াল দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে ও রড দিয়ে আঘাত করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। তার মৃত্যু নিশ্চিত করে আসামিরা চলে যায়।

তবে যুগান্তরের হাতে আসা রূপগঞ্জের ডিকেএমসি হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেট বলছে, বাবুল মিয়া ৩ জুন সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন বা হার্ট অ্যাট্যাকে’ মারা গেছেন। সূত্র বলছে, হাসপাতালের রেজিস্টি খাতায় উল্লেখ আছে বাবুল মিয়া অসুস্থ হয়ে ৩ জুন সকালে হাসপাতালে গেলে তার ইসিজি করেন রফিকুল ইসলাম নামের এক স্টাফ। পরে দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. শরিফুল আলম বাবুল মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।

মামলার বাদী বিএনপি নেতা মো. নুরুল আমিন যুগান্তরকে বলেন, ‘বাবুল মিয়াকে ৪ আগস্ট পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’

গত ৩ জুন বাবুল মিয়ার মৃত্যুর বিষয়ে ডিকেএমসি হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেটের বিষয়ে বলা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনায়েত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই মামলাটি হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. রিপন আহম্মেদ যুগান্তরকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে মামলাটি ভুয়া। বাবুল মিয়া ৩ জুন মারা গেছে অথচ মামলায় দাবি করা হয়েছে ৪ আগস্ট হত্যার শিকার হয়েছে।

বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. আতিকুর বলেন, এখন পর্যন্ত এ মামলায় এজাহার নামীয় নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দস্তগীর ও জুলহাস নামের দুজন এবং তদন্তে প্রাপ্ত ফয়জুল্লাহ নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মামলা সঠিক না মিথ্যা তা তদন্ত শেষে বলা যাবে।

মামলাটি ছায়াতদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, আমরা সরেজমিন গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছি। বাবুল মিয়ার কবরস্থানেও গিয়েছি। যে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়েছে সেখানেও পরিদর্শন করা হয়েছে। এ মামলার সত্যতার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মামলাটি যদি থানা থেকে পিবিআইতে আসে তাহলে আমরা বিস্তারিত তুলে ধরব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম