চট্টগ্রামে পূজামণ্ডপে ইসলামি সংগীত
আটক ২, সজল দত্তকেও খুঁজছে পুলিশ
তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস সিএমপির
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রামে জেএম সেন হলের পূজামণ্ডপে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ডিসি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) রইছ উদ্দিন। ইতোমধ্যে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের সঙ্গে জড়িত দুজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন-মো. নুরুল ইসলাম ও শহীদুল করিম। শহীদুল করিম তানজিমুল উম্মাহ মাদ্রাসার এবং মো. নুরুল ইসলাম দারুল ইরফান একাডেমি নামে একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। এ ঘটনায় মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে দামপাড়ায় সিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান। পূজা কমিটির পক্ষ থেকে দাওয়াত দেওয়া সজল দত্তকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খোঁজা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে কোতোয়ালি থানার ওসি ফজলুল কাদের চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
ডিসি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) রইছ উদ্দিন বলেন, জেএম সেন হল পূজামণ্ডপে শিল্পীদের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে পূজার্থীরা মণ্ডপে আসেন এবং অনুষ্ঠান উপভোগ করতে থাকেন। এরই মধ্যে পূজা আয়োজন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্ত চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির একদল শিল্পীকে অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করার জন্য অনুরোধ করেন। তারই অনুরোধে কালচারাল শিল্পী গোষ্ঠীর ছয় সদস্য শহীদুল করিম (৪২), নুরুল ইসলাম (৩৪), আবদুল্লাহ ইকবাল (৩০), রনি (২৮), গোলাম মোস্তফা (৩৬) ও মো. মামুন (২৭) পূজার অনুষ্ঠানে একটি ইসলামিক গজল ও একটি বাউল গান পরিবেশন করেন। এর মধ্যে একটি গানের ভাষায় শব্দ চয়নে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বলে প্রতীয়মান হয়। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠানে গাওয়া গান দুটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়াসহ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
তিনি জানান, আটক শহীদুল করিম নগরীর তানজিমুল উম্মাহ মাদ্রাসার শিক্ষক এবং মো. নুরুল ইসলাম দারুল ইরফান একাডেমির শিক্ষক। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের আটক করতে অভিযান অব্যাহত আছে।
গান পরিবেশন এবং পরবর্তী পরিস্থিতিতে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা-এমন প্রশ্নে ডিসি রইছ উদ্দিন বলেন, এ বিষয়টি আমরা হালকাভাবে নিচ্ছি না। এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ইসলামিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো পূজা উদযাপন কমিটির নেতা সজল দত্তকেও খোঁজা হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তাকে পাওয়া যায়নি। ফলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় একটি মামলার প্রক্রিয়া চলছে। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, পেছনে কোনো উদ্দেশ্য ছিল কিনা সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। এ ঘটনায় কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কি না সেটিও তদন্তে আসবে।
বৃহস্পতিবার রাতেই চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনি পূজামণ্ডপে গিয়ে এ ঘটনায় জড়িতদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার ও মামলা দায়েরের আশ্বাস দেন।
জানা গেছে, শিল্পী গোষ্ঠীটির সদস্যরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুটি গান পরিবেশন করেন। এর মধ্যে একটি ছিল ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ এবং অন্যটি ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান’ শিরোনামে গান। এর মধ্যে দ্বিতীয় গানটির একাংশের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
সজল দত্তকে বহিষ্কার : জেএম সেন হল পূজামণ্ডপে অনুষ্ঠানের মঞ্চে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামে সংগঠনকে সংগীত পরিবেশন করার অনুমতি দেওয়ায় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তকে বহিষ্কার করেছে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ। শুক্রবার সকালে সংগঠনটির সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য্য ও সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে বহিষ্কার করা হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মহানগর পূজা পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত সাংস্কৃতিক মঞ্চে ‘চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি’ নামক একটি সংগঠনকে গান করার সুযোগ দেন সজল দত্ত। ওই সংগঠনের ছয়জন যুবক মঞ্চে উঠে বাদ্যযন্ত্র ছাড়া উপস্থিত পূজার্থীদের সম্মুখে ইসলামি গান পরিবেশন করেন।’
চট্টগ্রাম নগর বিএনপির নিন্দা : জেএম সেন হলে শারদীয় দুর্গাপূজার মণ্ডপে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের নিন্দা জানিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। শুক্রবার এক বিবৃতিতে নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান এ নিন্দা জানান।
গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এই দুই নেতা বলেন, বৃহস্পতিবার নগরীতে শারদীয় দুর্গাপূজার মণ্ডপে ইসলামি সংগীত পরিবেশন নিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। পূজামণ্ডপে এ ধরনের আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত এবং নিন্দনীয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।
বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, জেএম সেন হলে যা ঘটেছে, তার জন্য কার দায় কতটুকু, এর পেছনে কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল কি না, সেটা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তবে এটুকু নিঃসন্দেহে বলা যায়, যারা মঞ্চে উঠে গান করেছেন, তারা সুবিবেচনার পরিচয় দেননি। এটি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের নামান্তর। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজার্থীরা সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শন করেছেন, আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই।
বিবৃতিতে বিএনপির এই দুই নেতা ভবিষ্যতে সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন যে কোনো কর্মকাণ্ড রুখে দিতে প্রশাসন ও জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান।