সাইবার নিরাপত্তা আইন দ্রুত বাতিল করতে হবে: ড. ইফতেখারুজ্জামান
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দ্রুত সময়ের মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, এই আইনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এই আইন বাতিল করতে এত দেরি হওয়ার কথা নয়।
মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাতিলযোগ্য সাইবার নিরাপত্তা আইন : জনগণের প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। ডিজিটাল রাইট, নাগরিক ও ইউনাইটেড নেশনস বাংলাদেশ যৌথভাবে এ গোলটেবিলের আয়োজন করে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সবাই বলেছেন এই আইনটি বাতিলযোগ্য। এটি সংশোধনযোগ্য নয়। এই আইনটি বাতিল করতে হবে। আমি অবিলম্বে আইনটি বাতিলের কথা বলব। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে তা করতে দেরি হওয়ার কথা নয়।
তিনি বলেন, যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। আইনটিতে যারা কর্তৃত্ববাদের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেছে তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। যারা হুকুমের আসামি তাদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ভবিষ্যতে কোনো আইনের মধ্যে আর সাইবার সিকিউরিটি শব্দটি থাকা উচিত নয়, সেটি যত ভালো আইনই হোক না কেন। দেশে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে নিরাপত্তার নামে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করা হয়েছে। নতুন আইন করার সময় এ বিষয়টি অপরিহার্য, যাতে করে আইনের নামে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি না হয়।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, সাইবার নিরাপত্তার নামে প্রচুর মানুষকে হয়রানি করা হয়েছে। অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, মন খুলে সমালোচনা করতে। তবে হাসিনার সময়েও মামলা হতো, এখন ইউনূসের সময়েও মামলা হচ্ছে।
আর্টিকেল নাইনটিনের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম বলেন, ‘আমাদের মানসিকতা হচ্ছে হয়রানি করা। হয়রানি করাটা মুখ্য উদ্দেশ্য। সাইবার সিকিউরিটি এই আইনে নিশ্চিত করা যায়নি। নতুন আইন করার ক্ষেত্রে কেউ যাতে ওই আইনে হয়রানি না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।’
বৈঠকে লিখিত বক্তৃতায় ৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরে বলা হয়, ১. বাংলাদেশে সাইবার ‘নিরাপত্তা’ আইন নামে আইনের প্রয়োজন নেই। তবে সাইবার সুরক্ষা আইন নামের নতুন আইনের প্রয়োজন আছে, বিগত স্বৈরাচার সরকার যে নিপীড়নমূলক আইন নাগরিকদের বিরুদ্ধে করেছে, তা ব্যবহার বন্ধ করে নাগরিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নতুন সাইবার সুরক্ষা আইন করতে উদ্যোগী হতে হবে।
২. নাগরিকদের অংশগ্রহণে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে যেসব সাইবারসংক্রান্ত আইন মামলার মধ্যে মৌলিক মানবাধিকারের বিরুদ্ধে আঘাত করেছে, সেসব মামলা অচিরে বাতিল করতে হবে; অবশ্যই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং রাষ্ট্র প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেবে।
৩. গণঅধিকার হরণ ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে, সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকার অনেকগুলো নতুন আইন-নীতিমালা খসড়া (যেমন : ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৪ (খসড়া) ও ওভার দর টপ (ওটিটি) কনটেন্টভিত্তিক পরিষেবা প্রদান এবং পরিচালনা নীতিমালা-২০২১) এবং পুরাতন আইনের (যেমন : বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১) সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছিল। এই আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া ও বাস্তবায়নে নাগরিকদের অংশগ্রহণ এবং দায়বদ্ধতা ছিল শূন্য থেকে মহাশূন্যময়; প্রস্তাবিত আইন-নীতিমালাসমূহ সংশোধন ও প্রণয়নে এবং পর্যালোচনার সময় ও সমতার সুযোগ ছিল অপর্যাপ্ত এবং অপরিচ্ছন্ন, যার নেতিবাচক ফল সরাসরিভাবে মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের সংগঠনগুলো এবং কর্মীরা ভোগ করেছেন, এখনো করছেন এবং সামনের দিনগুলোতে আরও করবেন বলে আমরা মনে করি। কারণ অবৈধ এবং নিপীড়নমূলক আইনসমূহ কার্যত রাষ্ট্র, শাসকশ্রেণি, ক্ষমতাধর ও বিত্তবানদের স্বার্থই রক্ষা করে।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তৃতা করেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম প্রমুখ। এছাড়া মানবাধিকারকর্মী, নারী নেত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।