Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ত্রাণ বিতরণে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব : সিপিডি

বন্যায় ১০ জেলায় ক্ষতি ১৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বন্যায় ১০ জেলায় ক্ষতি ১৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকা

সাম্প্রতিক বন্যায় দেশের ১০ জেলায় ১৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির পরিমাণ দেশের জাতীয় বাজেটের ১ দশমিক ৮১ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে নোয়াখালীতে ৪ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। খাতভিত্তিক বেশি ক্ষতির শিকার বন ও কৃষি। এ খাতের ক্ষতির পরিমাণ ৫ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। রোববার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এবং গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সংস্থাটি মনে করছে, বন্যার পর সরকারি ত্রাণ বিতরণে সুষ্ঠু পরিকল্পনা কিংবা তথ্যের ঘাটতি রয়েছে।

প্রসঙ্গত প্রবল বৃষ্টি আর উজানের ঢলে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে দেশের ১০টি জেলা মারাত্মকভাবে বন্যায় আক্রান্ত হয়। জেলাগুলো হলো-সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া। নজিরবিহীন এ বন্যায় ৫০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সিপিডির ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রায় এর পরিমাণ ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া এই ক্ষতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ২৬ শতাংশ। এর মধ্যে কৃষি ও বন খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ পাঁচ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। যা মোট ক্ষতির ৩৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে অবকাঠামো খাত, যা সার্বিক ক্ষতির ৩২ দশমিক ২৭ শতাংশ। এছাড়া আবাসন বা ঘরবাড়ির ক্ষতি দুই হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। এছাড়া মোট ক্ষতির মধ্যে ২৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ সড়কের, ২০ দশমিক ৯৯ শতাংশ শস্যের, ১৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ আবাসনের, ১০ দশমিক ৯১ শতাংশ মৎস্যের এবং ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে অন্যান্য খাতে।

জেলাভিত্তিক হিসাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে নোয়াখালী। এই জেলায় ১৬ লাখ ৪৩ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৪ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। এছাড়া কুমিল্লা জেলায় ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা, ফেনীতে দুই হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, চট্টগ্রামে এক হাজার ৬৭৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, লক্ষ্মীপুরে এক হাজার ৪০৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা, মৌলভীবাজারে ৫০৬ কোটি টাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৪৪ কোটি টাকা, হবিগঞ্জে ১৪৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, খাগড়াছড়িতে ১২৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা, কক্সবাজারে ১০০ কোটি টাকা এবং সিলেট জেলায় ২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে হিসাব জানিয়েছে সিপিডি। গবেষণা সংস্থাটি বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে লক্ষ্মীপুরে মাথাপিছু সরকারি সাহায্যের পরিমাণ ছিল ৬২ টাকা দশ পয়সা, নোয়াখালীতে ৯২ টাকা ১০ পয়সা, কুমিল্লার মানুষ ১৩৬ টাকা ৭০ পয়সা ও সিলেটে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৩২০ টাকা।

এদিকে বন্যায় সরকারি অর্থ বণ্টনে হিসাবের ব্যবধান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সিপিডি। তারা বলছে, হয় এটা বণ্টনে সমস্যা, নয়তো তথ্য সংরক্ষণ পদ্ধতিতে বড় ধরনের ত্রুটি আছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে মাথাপিছু সাহায্যের ওই হিসাব করেছে সংস্থাটি। ওই মন্ত্রণালয় ত্রাণ হিসাবে চাল, খাবার, শিশুখাদ্য, পশু খাবার ও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার তথ্য দিয়েছে। এই চারটি বিষয় নিয়েই প্রতিবেদন করা হয়।

সংস্থাটি আরও বলছে, বন্যায় নোয়াখালী জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকারি উদ্যোগে বেশি ত্রাণ গেছে ফেনী জেলায়। এর আর্থিক পরিমাণ ১৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ফেনীতে বন্যা দুর্গত মানুষের সংখ্যা ১০ লাখ, আর নোয়াখালীতে ১৬ লাখ চার হাজার ৩০০ জন। নোয়াখালীতে ত্রাণ গেছে ১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকার, যা জেলাগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। কুমিল্লায় ১০ লাখ ৯০ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জেলা ১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকার ত্রাণ সহযোগিতা পেয়েছে। ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সিলেটে সাড়ে ৯ হাজার মানুষ বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। সেখানে ক্ষতি ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রতিজনে গড়ে ত্রাণ পেয়েছে ১৫ হাজার ৩২০ টাকা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম