Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বিএফআইইউর মাসুদের সম্পদের খোঁজে এগারো দেশে চিঠি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিএফআইইউর মাসুদের সম্পদের খোঁজে এগারো দেশে চিঠি

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের সম্পদের তথ্য চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দুবাই, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরসহ ১১ দেশে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

একই সঙ্গে তিনি যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বরাবর চিঠিও পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুস গ্রহণ, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎপূর্বক কোটি কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের সই করা পৃথক চিঠির বরাতে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের অনুসন্ধানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, অর্থ পাচার ঠেকানোর দায়িত্ব থেকে বিএফআইইউর সদ্য পদত্যাগী প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারে সহায়তা ছাড়াও নানাভাবে ঘুস নেওয়ার বিস্তর অভিযোগ ওঠে। বিগত দিনে হলমার্ক ও বিসমিল্লাহসহ ২৪টি ঘটনায় ৯২ হাজার কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারির মাধ্যমে সংঘটিত মুদ্রা পাচারের ঘটনায় অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি।

অভিযোগ আছে, ক্যাশ ট্রানজেকশন রিপোর্ট (সিটিআর) বিএফআইইউর পক্ষ থেকে যাচাই করার নেপথ্যে ছিলেন মাসুদ বিশ্বাস। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ব্যাংকগুলোকে চাপ দিয়ে প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম, বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় ইভেন্ট আয়োজন ও বিদেশ সফরের মাধ্যমে অর্থ অপব্যয় করার অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েক বছর বিএফআইইউর পক্ষ থেকে বছরে গড়ে ৮-১০টির মতো বড় তদন্ত দায়সারাভাবে করে সেসব পক্ষ থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ-তিনি স্কাই ক্যাপিটাল এয়ারলাইন্স লিমিটেডের বিমান ক্রয়ে সন্দেহজনক অনিয়মের অভিযোগ ঘুসের বিনিময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে না পাঠিয়ে পরিসমাপ্তি করা হয়। এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল ব্যাংক থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা লুটপাটসহ আর্থিক অনিয়মের রিপোর্ট মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালায় গোয়েন্দা প্রতিবেদন না দিয়ে সাধারণ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রেরণের অনুমোদন দেন।

এছাড়া তানাকা গ্রুপ, থার্মেক্স গ্রুপ, এসএ গ্রুপ ও আনোয়ার গ্রুপের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের সুস্পষ্ট তথ্য থাকার পরও ঘটনাগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে না পাঠিয়ে অবৈধ সুবিধা নিয়ে নথিভুক্ত করেন মাসুদ। এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম মাসুদের যোগসাজশে ইসলামী ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে বিপুল টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচারের ঘটনাও তিনি ধামাচাপা দেন। জিনাত এন্টারপ্রাইজের অর্থ পাচারের ঘটনা ৫০ লাখ টাকা ঘুসের বিনিময়ে ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগও আছে মাসুদের বিরুদ্ধে।

এছাড়া একটি বেসরকারি ব্যাংকের অবজারভার থাকা অবস্থায় ওই ব্যাংকের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে ২ হাজার স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট ঘুস হিসাবে নিয়েছেন মাসুদ বিশ্বাস। অভিযোগে আরও বলা হয়, রূপালী ব্যাংকের গ্রাহক ডলি কনস্ট্রাকশনের অনুকূলে একক গ্রাহক ঋণসীমা অতিক্রম করে ৪০০ কোটি টাকার আর্থিক সুবিধা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। বিষয়টি বিএফআইইউর তদন্তে ধরা পড়লেও মাসুদ বিশ্বাস ঘুসের বিনিময়ে তা ধামাচাপা দেন।

ন্যাশনাল ব্যাংকের গ্রাহক সান্ত্বনা এন্টারপ্রাইজসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ব্যাংকটির ৪টি শাখা থেকে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন ছাড়াই বিতরণ করে। মাসুদ বিশ্বাস শাখা ব্যবস্থাপকদের থেকে অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।

এছাড়া সাদ-মুসা গ্রুপের একাধিক ব্যাংক থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ঋণের অনিয়ম যাচাইকালে বিভিন্ন ব্যাংকের গাফিলতি, অনিয়ম-দুর্নীতি উদঘাটিত হলেও তিনি দাপ্তরিক ক্ষমতাবলে অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করে কোনো ব্যবস্থা নেননি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম