এসআইপিজি’র জরিপ
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দুই বছর বা কম হওয়া উচিত
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ দুই বছর বা তারও কম হওয়া উচিত বলে মনে করেন ৫৩ শতাংশ ভোটার। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি) পরিচালিত এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবে বুধবার ‘জাতীয় জরিপ ২০২৪ : বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নাগরিকদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে ওই জরিপের ফল প্রকাশ করে এসআইপিজি।
জরিপের তথ্য ও ফলাফল উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ড. আকরাম হোসেন। তিনি জানান, চলতি বছরের ৯ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের ৮টি বিভাগের ১৭টি জেলায় মোট ১ হাজার ৮৬৯ জনের ওপর এ জরিপ করা হয়। এটি জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সর্বপ্রথম সরাসরি পরিচালিত জাতীয় প্রতিনিধিত্বমূলক জরিপ। উত্তরদাতাদের বৃহত্তম অংশ (৬৩%) মধ্যবয়সী (২৮-৫০ বছর), ২২ শতাংশ জেনারেশন জেড (১৮-২৭ বছর) এবং ১৪ শতাংশের বয়স ৫০ বছরের ওপরে। এ ছাড়া জরিপের উত্তরদাতাদের ৫৪ শতাংশ শহরাঞ্চল ও ৪৬ শতাংশ গ্রামীণ অঞ্চলের। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ সম্পর্কে জরিপে অংশ নেওয়া উত্তরদাতাদের প্রায় ৫৩ শতাংশ মনে করেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দুই বছর বা তার কম হওয়া উচিত। যেখানে ৪৭ শতাংশ মনে করেন যে, এই অন্তর্বর্তী সরকারকে তিন বছর বা তার বেশি ক্ষমতায় থাকতে হবে।
সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, উত্তরদাতাদের ৪৬ শতাংশ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে অনিশ্চিত, যেখানে ৫৪ শতাংশ মূলধারার রাজনীতিতে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয়ে উত্তরদাতাদের ৯৬ শতাংশ প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিত করাকে (দুই মেয়াদের বেশি নয়) সমর্থন করে। ৪৬ শতাংশ বিশ্বাস করে উল্লেখযোগ্য সাংবিধানিক পরিবর্তন প্রয়োজন। আর ১৬ শতাংশ সম্পূর্ণ নতুন সংবিধানের পক্ষে মত জানিয়েছেন। জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের ৭২ শতাংশ ছাত্রদের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করেন।
গবেষণায় আরও জানা যায়, নাগরিকরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন, বিশেষ করে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে তাদের বন্যা ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশ পুলিশ, শিক্ষা ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কারের ওপরও নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সচিব ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, আমি মনে করি এই জরিপটি সঠিকভাবেই করা হয়েছে। আমরা নিজেরা যে বিষয়টি উপলব্ধি করি, অন্যের কাছ থেকে শুনি, এ জরিপে সেটাই উঠে এসেছে।
বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, একটা জিনিস যেটা আমার মনে হয় সুস্পষ্টভাবে মানুষের উপলব্ধিতে ছিল, এমনকি মানুষের বক্তব্যতেও ছিল সেটা হচ্ছে বিচার। যারা এত বছর ক্ষমতায় থেকে অন্যায় করেছে, যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, যারা ফৌজদারি অপরাধ করেছে, আর্থিক অপরাধ করেছে এবং যারা নির্বাচনি অপরাধ করেছে তাদের বিচারের কথাটা আমার মনে হয় সবার মনেই ছিল। সবাই চেয়েছে এটা যেন হয়। এই যে জনআকাঙ্ক্ষা। জনগণ চাচ্ছে যে, এদের বিচার হোক। আমরা চাই তাদের স্বচ্ছ ন্যায়বিচার হোক। একই সঙ্গে রাষ্ট্র মেরামত হোক যাতে এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
বদিউল আলম বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আগেও হয়েছে কিন্তু আমরা তার সুফল পাইনি। এর কারণ হলো পলিটিক্যাল কালচার (রাজনৈতিক সংস্কৃতি)। আমাদের রাজনীতিবিদরা যে অঙ্গীকার করেন, জনগণ যেটা চায়, সে ব্যাপারে ক্ষমতায় যাওয়ার পর যদি আন্তরিকতার সঙ্গে তারা সেটা বাস্তবায়ন না করেন তাহলে তার সুফল কখনোই পাওয়া যাবে না। সুফল যদি পেতে হয় তাহলে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে, আমাদের রাজনৈতিক দলে পরিবর্তন করতে হবে। আমরা যদি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই তাহলে আমাদের মনমানসিকতা গণতান্ত্রিক হতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতান্ত্রিক হতে হবে।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ইতিহাস ও দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তৃতা করেন এসআইপিজি’র উপদেষ্টা অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম. আমিনুজ্জামান, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাভিন মুর্শিদ প্রমুখ।