Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ

কাপড়-পাটের ব্যাগের দাম কমানোর তাগিদ

Icon

হক ফারুক আহমেদ

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কাপড়-পাটের ব্যাগের দাম কমানোর তাগিদ

ছবি: সংগৃহীত

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে মঙ্গলবার দেশের সব সুপারশপে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার হয়নি। নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার বন্ধের এ কার্যকর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন বেশিরভাগ ক্রেতা। তবে অনেকে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন। পলিথিনের বিকল্প হিসাবে কাপড় ও পাটের তৈরি ব্যাগ এদিন ক্রেতাদের নিজের টাকায় কিনে পণ্য সামগ্রী বাড়িতে নিয়ে যেতে হয়েছে। এতে অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। আকারভেদে ব্যাগ প্রতিটির জন্য ৬-২০ টাকা পর্যন্ত খরচ বহন করাকে ক্রেতার ওপর বাড়তি বোঝা হিসাবে বলেছেন তাদের কেউ কেউ। পলিথিনের বিকল্প হিসাবে এসব ব্যাগের ব্যবহারকে ইতিবাচক হিসাবে দেখলেও তারা কাপড় ও পাটের ব্যাগের দাম হাতের নাগালে নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ এর বিধান অনুসারে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০২ সালের ১ মার্চ সরকার বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কিছুকাল পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ থাকলেও একটা সময় এসে পলিথিনের ব্যাগের উৎপাদন, সরবরাহ ও ব্যবহার চলতে থাকে। পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন, বিপণন এবং ব্যবহার বন্ধে সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে নানা পদক্ষেপ নেন। তারই অংশ হিসাবে মঙ্গলবার থেকে দেশের সুপারশপগুলোতে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।

মঙ্গলবার বিকালে সরেজমিন রাজধানীর পান্থপথে সুপারশপ স্বপ্নের আউটলেটে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতাদের বিভিন্ন পণ্য কেনার পর তা বহনের জন্য কাগজের ব্যাগের পর কাপড়ের ব্যাগ ও পাটের ব্যাগে ভরে দেওয়া হচ্ছে। এতদিন বিনা পয়সায় পলিথিনে পণ্য দেওয়া হলেও কাপড়ের ব্যাগ ও পাটের ব্যাগের জন্য ক্রেতাদেরকে গুনতে হচ্ছে ৬-২০ টাকা প্রতিব্যাগ। এতে কিছু কিছু ক্রেতা বিরক্তি প্রকাশ করছেন। তবে বেশিরভাগ পলিথিন নিষিদ্ধের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।

কেনাকাটা শেষে পাটের ব্যাগে করে পণ্য নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন ডা. মাহফুজা। তাকে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেই যুগান্তরকে বলেন, খুব ভালো উদ্যোগ। এটি সারা দেশে কার্যকর করা প্রয়োজন। ক্রেতাদের নিজেদের পাটের বা কাপড়ের ব্যাগ কেনার প্রসঙ্গে বলেন, সবার ভালোর জন্য এতটুকু তো মেনে নিতেই হবে। তবে ব্যাগের দাম আরও কমানো উচিত।

একই আউটলেটে কিছুক্ষণ পর আরেকজন ক্রেতাকে ব্যাগ কেনার বিষয়ে বাহাস করতে দেখা গেছে। ব্যাগ কিনতে রাজি না হয়ে তিনি হাতে পণ্য নিয়েই বেরিয়ে যান।

আউটলেটের ম্যানেজার আল মামুন যুগান্তরকে বলেন, কাগজের প্যাকেটে মাছ বা মাংস দিলে ভিজে যাওয়ার অভিযোগ করছেন কিছু ক্রেতা। বেশিরভাগ ক্রেতা পলিথিন নিষিদ্ধের বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখলেও কিছু কিছু ক্রেতা পাটের বা কাপড়ের ব্যাগ নিজেদের টাকায় কিনতে গিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করছেন। বলছেন, এতদিন পলিথিন ব্যাগের জন্য কেন টাকা লাগেনি এখন আমরা কেন টাকা দিয়ে ব্যাগ কিনব!

একইদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুর-১ এ আগোরা সুপারশপে গিয়ে দেখা যায়, একজন ক্রেতা ৫ কেজি চালের একটি প্যাকেট বাসায় নেওয়ার জন্য ২০ টাকা দিয়ে একটি পাটের ব্যাগ কেনেন। তিনি ব্যাগের দাম কমানোর জন্য বিক্রয়কর্মীকে বারবার অনুরোধ করেন।

আউটলেটের ইনচার্জ ইয়ামিন হোসেন রাজু যুগান্তরকে বলেন, পলিথিন ব্যবহার বন্ধের প্রথম দিন আমরা নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বেশিরভাগ ক্রেতাই এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তবে কিছু কিছু ক্রেতা কেন নিজেদের টাকায় কাপড় বা পাটের ব্যাগ কিনবেন তা নিয়ে প্রশ্ন করছেন। অনেকে ব্যাগ কিনতে অপারগতা জানাচ্ছেন। আমরা নানাভাবে তাদের পুরো বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করছি। বিষয়টি ক্রেতাদের অভ্যাস হয়ে গেলে খুব শিগগিরই অবস্থার উন্নতি হবে বলে আশা করছি।

পাটের ব্যাগ ব্যবহারে ক্রেতাদের উদ্বুদ্ধ করলেন পাট উপদেষ্টা : রাজধানীর দুই সুপারশপে গিয়ে পলিথিনের বদলে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করতে ক্রেতাদের উদ্বুদ্ধ করলেন পাট ও বস্ত্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। সেখানে তিনি ক্রেতাদের হাতে পাটের তৈরি ব্যাগ তুলে দেন। একই ব্যাগ বারবার ব্যবহারেরও অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ১ নভেম্বর থেকে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে ২০১০ সালে যে আইন পাশ করা হয়েছিল, সেই আইনের বাস্তবায়ন শুরু হবে। ওই আইন বাস্তবায়ন হলে পলিথিনের ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে ‘ইউনিমার্ট’ ও ‘স্বপ্ন’ সুপারশপে গিয়ে একথা বলেন।

এ সময় ইউনিমার্টের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) শাহীন মাহমুদ বলেন, পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ সরকারের সাহসী ও মহৎ উদ্যোগ। আমরা এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। এর মধ্য দিয়ে সোনালী আশ আবার ফিরে আসবে বলে আশা করছি।

এ দুই সুপারশপ পরিদর্শনের সময় উপদেষ্টার সঙ্গে বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ, অতিরিক্ত সচিব তসলিমা কানিজ নাহিদা ও এএনএম মঈনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম