পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়
আড়াই মাস পর স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রায় আড়াই মাস পর দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরছে। ইতোমধ্যে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসে ফিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস কাজ করছে। তবে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সেগুলোয় উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যসহ প্রশাসনিক ব্যক্তিদের পদত্যাগের কারণে গুরত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য হয়ে যায়। এতে স্থবির হয়ে পড়ে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম।
এদিকে ৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) নিয়োগ দেওয়া হলেও ১২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ না হওয়ায় এখনো পুরোদমে একাডেমিক কার্যক্রম চালু করা যায়নি। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ ছাড়াই একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে দীর্ঘ আড়াই মাসের বেশি সময় পরও ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু না হওয়ায় শঙ্কায় আছেন শিক্ষার্থীরা।
উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে সম্প্রতি আন্দোলনেও নেমেছেন তারা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, প্রথম সারির গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আগে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পরে পর্যায়ক্রমে অন্যগুলোয় নিয়োগ করা হচ্ছে। তবে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে জটিলতা তৈরি হয়েছে, সেগুলোও দ্রুত নিরসন হয়ে যাবে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো উপাচার্য নিয়োগ হয়নি, সেখানে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মাধ্যমে জরুরি আর্থিক ও একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দেশে ৫৫টি স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালু আছে। এর মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় চারটি। বাকি ৫১টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া আরও ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়ছে। তবে সেগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই সরকারের নিয়োগ দেওয়া প্রায় সবকটি স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষসহ শীর্ষ পর্যায়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা পদত্যাগ করেন। ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছে। ২৭ আগস্ট প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানকে। সেখানে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস-পরীক্ষায় শুরু হয়। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়। দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরে অনেক শিক্ষার্থীকে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ১১ সেপ্টেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরোদমে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ক্লাসে ফিরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে দীর্ঘদিন পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সেশন জটে পড়ার শঙ্কা জানিয়েছেন অনেকেই। এটি থেকে উত্তরণে ধারাবাহিকভাবে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষ ২০২৩-২৪ সেশনের অরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত হয় ২২ সেপ্টেম্বর। এতে নবীন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় বেড়েছে ক্যাম্পাসের প্রাণচাঞ্চল্য।
১৮ আগস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়। এরপরই বিভিন্ন বিভাগে শুরু হয় সেমিস্টার ফাইনাল ও মিড টার্ম পরীক্ষা। যেসব বিভাগে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা জুলাইয়ে হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আন্দোলনের কারণে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি-সেসবে ইতোমধ্যে অনেক বিভাগে সেমিস্টার ফাইনাল শেষ হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ১৮ আগস্ট থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বর্তমানে আইন বিভাগ ছাড়া বাকি সব (৩৫টি) বিভাগের নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। তবে প্রথম বর্ষের (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে ২০ অক্টোবর থেকে। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি আবাসিক হলের মধ্যে ১৯টিতে শিক্ষার্থীরা আগের মতোই অবস্থান করছেন।
৬ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হলে আসনের জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর অনলাইনে আবেদন করতে বলেছে চবির প্রশাসন। এরপর ৩ অক্টোবর আসনের ফলাফল প্রকাশ করা হবে। শিক্ষার্থীরা ৫ অক্টোবর ফলাফলের ভিত্তিতে হলে নিজ নিজ আসনে গ্রহণ করতে পারবেন। এরপর ৬ অক্টোবর থেকে সশরীরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের হলগুলোয় সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুনে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এরপর ২০১৯ ও ২০২২ সালে দুই দফায় আসন বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি দিলেও শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের অবহেলায় বাস্তবায়ন হয়নি। এখন নতুন উপাচার্য নিয়োগের পর এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হয়। একই সঙ্গে আবাসিক হলগুলো খোলা হয়েছে। স্বাভাবিক রয়েছে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম।
কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ১৬ জুলাই থেকে দেশের সব স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়। এর আগে ‘প্রত্যয়’ পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে ১ জুলাই থেকেই কর্মবিরতি পালন করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এছাড়া ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি ছিল। সব মিলিয়ে আড়াই মাসের বেশি বন্ধ ছিল উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ যুগান্তরকে বলেন, ইতোমধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে বাদবাকি সব বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরবে। এতে ক্যাম্পাসগুলোয় দ্রুত শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে।
শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেগুলোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। তবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে কিছু জটিলতা তৈরি হলেও দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে। চলতি সপ্তাহেই বাকি ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে হবে জানান তিনি।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো যোগ্য ব্যক্তিদের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আমরা সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিচ্ছি। এমনকি বিশ্বের অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ ও এমআইটিসহ নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি করা শিক্ষকদের উপাচার্য পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং হলেও আমরা সক্ষম হয়েছি।