চট্টগ্রাম কাস্টমসে নিলামে মার্সিডিজ বেঞ্জ ও ল্যান্ডক্রুজার
পানির দামে বাগিয়ে নিতে নানামুখী তৎপরতা
পুনঃনিলামের মত সাধারণ ব্যবসায়ীদের
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে নিলামে তোলা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের আমদানি করা গাড়ি মার্সিডিজ বেঞ্জ ও ল্যান্ডক্রুজার পানির দামে কিনে নিতে চায় দরদাতারা। ১৬ কোটি টাকা দামের গাড়ি মাত্র ৪ কোটি টাকায় আর ৫ কোটি টাকার গাড়ি মাত্র ২ কোটি টাকায় কিনে নিতে চান তারা। ‘সর্বোচ্চ’ দরদাতা হিসাবে তারা এই নিলাম অনুমোদন করাতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। নিলাম কমিটির ওপর চলছে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, বিলাসবহুল গাড়িগুলোর যে দর উঠেছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই দর অনুমোদন দিলে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাবে। তাই গাড়িগুলোর পুনঃনিলামে তোলা তথা পুনরায় নিলাম আহ্বান প্রয়োজন।
এদিকে কাস্টমসের নিলাম শাখা বলছে, রাজস্ব আয় বাড়ানো তাদের কাজ। সরকারের ক্ষতি হোক এমন কিছুই করবে না নিলাম কমিটি। কমিটি যদি মনে করে প্রদত্ত দর সন্তোষজনক হয়নি; তবে পুনরায় গাড়িগুলো নিলামে তোলা হবে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের উপকমিশনার (নিলাম শাখা) সেলিম রেজা যুগান্তরকে বলেন, ‘মার্সিডিজ বেঞ্জ ও ল্যান্ডক্রুজারের প্রথম নিলাম হয়েছে। এতে যে দর পাওয়া গেছে তা সন্তোষজনক কি না তা নির্ধারণ করবে নিলাম কমিটি। আইনের বাইরে গিয়ে বা সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়-এমন কিছু করা হবে না। কমিটি যদি মনে করে তবে পুনরায় নিলামে তোলা হবে। এখানে অন্য কোনোভাবে কারও প্রভাব বিস্তারের সুযোগ নেই। যেহেতু অনলাইনে ওপেন টেন্ডার হয় তাই টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করার কারও কোনো সুযোগ নেই।’
সূত্র জানায়, তিনটি গাড়িসহ ৪৫ লট পণ্যের যে নিলাম হয়েছে তা অনুমোদনের বিষয়ে আগামী সপ্তাহে মিটিং করবে নিলাম কমিটি। এই কমিটির প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের এডিসি-১ মো. মুশফিকুর রহমান। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্য নির্ধারিত সময়ে ছাড় নেওয়া না হলে সেক্ষেত্রে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এ ধরনের পণ্য নিলামে তোলা হয়। বন্দরের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নিলামের ব্যবস্থা করে। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ ও দুটি ল্যান্ডক্রুজারসহ ৪৫টি লটে বিভিন্ন পণ্য নিলামে তোলে। গত ৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টা পর্যন্ত অনলাইনে নিলাম দর গ্রহণ করা হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর বিকালে সর্বশেষ নিলাম হয়। এতে মার্সিডিজ বেঞ্জের ভিত্তি বা সংরক্ষিত মূল্য ধরা হয়েছিল ১৬ কোটি ১০ লাখ ৮৯ হাজার ১৩৬ টাকা। আর ল্যান্ডক্রুজারের মূল্য ধরা হয়েছিল ৫ কোটি ১৭ লাখ ৭০ হাজার ৩৪০ টাকা। নিলামে দেখা যায়, মার্সিডিজ বেঞ্জের সর্বোচ্চ দর দেওয়া হয় ৪ কোটি ১ লাখ টাকা। চটগ্রামের সীতাকুণ্ডের যমুনা শিপ ব্রেকার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই দর প্রদান করে। এটি সংরক্ষিত মূল্যের মাত্র ২৫ শতাংশ। এই প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আরও তিনটি প্রতিষ্ঠান মার্সিডিজ বেঞ্জ কিনতে দর প্রদান করে। অন্যদিকে ল্যান্ডক্রুজারের সর্বোচ্চ দর প্রদান করা হয় ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ময়মনসিংহের ভালুকার ঠিকানার প্রতিষ্ঠান হ্যারি ফ্যাশন এই দর প্রদান করে। সংরক্ষিত মূল্যের ৪১ শতাংশ দর প্রদান করা হয় এই গাড়ির ক্ষেত্রে। এই গাড়িটির জন্য আরও ১২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দর প্রদান করেন।
জানা যায়, জার্মানিতে তৈরি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিলাসবহুল মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িটি ঢাকার বারিধারার একটি গাড়ি বিক্রয় প্রতিষ্ঠান আমদানি করে। আর ল্যান্ডক্রুজারটি আমদানি করেন কুমিল্লা-৭ আসনের প্রয়াত এমপি আলী আশরাফ। তিনি মারা যাওয়ায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা গাড়িটি ছাড় নেওয়া হয়নি।
কাস্টমস নিলামে অংশ নেওয়া একাধিক ব্যবসায়ী জানান, অনলাইনে নিলাম দর গ্রহণের ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে এ ক্ষেত্রে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। দেশের যে কোনো স্থান থেকে যে কোনো ব্যবসায়ী বা ব্যক্তি কাস্টমসের সব ধরনের নিলামে অংশগ্রহণ করতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রে প্রদত্ত দর অনুমোদন করাতে কিংবা রি-টেন্ডারে না পাঠাতে কমিটির ওপর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ থাকে। আলোচ্য মার্সিডিজ বেঞ্জ ও ল্যান্ডক্রুজারের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক কম দাম পড়লেও ওই মহলটি তা অনুমোদন করাতে নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে। এমন একাধিক অভিযোগ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দেওয়া হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। সূত্র বলেছে, প্রদত্ত দর অনুমোদন করা হলে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। তাই তারা ওই গাড়ি পুনরায় নিলামে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
জানা যায়, সাধারণত নিলাম পণ্যের সংরক্ষিত মূল্যের ৬০ শতাংশ বা তার ওপরে দর পাওয়া গেলে নিলাম অনুমোদন বা সুপারিশ করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পণ্যের স্থায়িত্ব বিবেচনায় এরও কম দর পাওয়া গেলে নিলাম অনুমোদনের এখতিয়ার রয়েছে কমিটির। কিন্তু আলোচ্য দুটি গাড়ির ক্ষেত্রে যথাক্রমে ২৫ শতাংশ ও ৪১ শতাংশ দর পাওয়া গেছে। যেহেতু গাড়িগুলোর স্থায়িত্ব রয়েছে, তাই তড়িঘড়ি করে বা কারও কোনো প্রভাবে কম দামে নিলাম অনুমোদনের সুযোগ নেই।