Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ঢাবিতে তোফাজ্জল হত্যা

আট শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার, নতুন প্রভোস্ট নিয়োগ

Icon

ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আট শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার, নতুন প্রভোস্ট নিয়োগ

ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় হল প্রাধ্যক্ষ (প্রভোস্ট) শাহ্ মো. মাসুমকে সরিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি হল প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটিতে শনাক্ত হওয়া আট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের হলের সিটও বাতিল করা হয়েছে। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফজলুল হক মুসলিম হলের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে অভিযুক্ত ৮ জন ছাত্রের আবাসিক সিট হল প্রশাসন বাতিল করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ৮ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের আদেশ দিয়েছে। এছাড়া, ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শাহ্ মো. মাসুমকে পরিবর্তন করে ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস আল-মামুনকে হলটির নতুন প্রভোস্ট হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সাময়িক বহিষ্কৃত ও সিট বাতিল হওয়া আট শিক্ষার্থী হলেন-পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মো. মোত্তাকিন সাকিন শাহ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের জালাল মিয়া, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের সুমন মিয়া, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের আল হোসাইন সাজ্জাদ, গণিত বিভাগের আহসান উল্লাহ, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ফিরোজ কবির ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আবদুস সামাদ, সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ওয়াজিবুল আলম। তাদের মধ্যে ফিরোজ কবির ও আবদুস সামাদ বাদে বাকিদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এদিকে তোফাজ্জলের মৃত্যুর ঘটনার পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন, আট শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার এবং দোষীদের বিরুদ্ধে মামলাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন উদ্যোগে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

শনিবার প্রক্টরের দপ্তর থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় এ ঘটনায় মামলা করেন। অভিযুক্ত ৬ শিক্ষার্থীকে ঘটনা সংঘটিত হওয়ার ৬ ঘণ্টার মধ্যে প্রক্টরিয়াল টিমের সহায়তায় গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে এবং বর্তমানে জেলহাজতে আছে। এতে বলা হয়, ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে হল প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এবং উক্ত কমিটি ইতোমধ্যে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হল প্রশাসন অভিযুক্ত ৮ শিক্ষার্থীর আবাসিক সিট বাতিল করেছে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযুক্ত ৮ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে। আর কোনো শিক্ষার্থী জড়িত আছে কি না তা জানার জন্য আরও একটি কেন্দ্রীয় তদন্ত কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদক্ষেপের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ যুগান্তরকে বলেন, একটি ঘটনা ঘটার পর সেটির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমেই তদন্ত কমিটি করেছে, ওই হলের প্রাধ্যক্ষকে অপসারণও করেছে। এগুলো ভালো দিক। একটি প্রশাসন ভালো করতে চায় কি না তার কিন্তু বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আছে যেটাকে জেশ্চার (সংকেত) বলে। জেশ্চারের দিক থেকে তারা সঠিক পথেই আছে।

এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্য কোথাও এই ঘটনা আর যাতে না ঘটে সেটিও নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনকে। ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দেন কিউর’ আমাদের প্রিভেনশনে থাকতে হবে। আমাদের ক্যাম্পাস উন্মুক্ত। ফলে যে কোনো সময়ই এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। এটা প্রিভেন্ট করার জন্য আমাদের কী ধরনের প্রিভেন্টিভ প্রস্তুতি আছে সেটা একটা বড় চিন্তার ব্যাপার। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের সংস্কৃতি তৈরি করা, যাতে তারা ভবিষ্যতে এতে না জড়ায়। তাদের মাঝে মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করতে হবে। হলগুলোতে ব্লক অনুযায়ী একটি লিডারপিশপ তৈরি করা, যাতে তারা সবাইকে ভালো কাজের মধ্যে রাখে। এছাড়াও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ে সবার প্রবেশেও একটা নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। এর মানে এই না যে কেউই প্রবেশ করতে পারবে না। নির্দিষ্ট একটা নীতিমালার আলোকে ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে অবস্থানরত সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিন্তা এবং মনোজগতে একটা পরিবর্তন আনতে হবে যে, ক্যাম্পাসের ভেতরে কোনো ধরনের অন্যায় কাজ করা যাবে না।

আয়শা তাবাস্সুম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসের ভেতরে আগে আমরা নিরাপদ ছিলাম না। কারণ অপরাধীরা ভাবত তারা কিছু করলে তাদের কোনো বিচার হবে না। তবে তোফাজ্জলের ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি আস্থা ফিরে এসেছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম