Logo
Logo
×

শেষ পাতা

একনেক ব্রিফিংয়ে ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ

অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক প্রকল্প বাদ দেওয়া হবে

পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্থগিত, চার প্রকল্প অনুমোদন, একটির মেয়াদ বৃদ্ধি * গ্যাসকূপ খনন না করে কেন এলএনজি আমদানি, বোধগম্য নয়

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক প্রকল্প বাদ দেওয়া হবে

পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ

পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, বিগত সরকারের নেওয়া অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক প্রকল্প যাচাই-বাছাই করে বাদ দেওয়া হবে। বড় প্রকল্পগুলোয় সময় কেন বাড়ানো হলো এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হলো, সেগুলো যাচাই করা হবে। বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, একনেক বৈঠকে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছে। পরে রাজনৈতিক সরকার এসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা নিজস্ব ও বৈদেশিক সম্পদ হিসাব করেই উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করব। একনেক সভা সবসময় পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। তবে এবার প্রথমবার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হলো। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ব্রিফিং করা হয়। এ সময় আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন এবং সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. কাউছার আহম্মদসহ পরিকল্পনা কমিশনের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বুধবারের বৈঠকে ৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একটি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, এখন দাতা সংস্থাগুলো হাতখুলে সহায়তা দিতে চাচ্ছে। ইউএসএইড যেমন বলেছে, তোমরা যে কোনো প্রকল্প নিয়ে আসো আমরা সহায়তা দেব। এরকম অনেক দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সহায়তা সংস্থা সহযোগিতা দিতে চাচ্ছে। তারা বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হলেও চলমান প্রকল্প অব্যাহত রাখতে এবং নতুন প্রকল্প নিলে তাদের কোনো সমস্যা নেই।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, বিগত সময়ে একনেক সভায় বিপুলসংখ্যক প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের গতি এক থাকত না। অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক প্রকল্পও থাকত। বিগত সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্প যাচাই-বাছাই করে বাদ দেওয়া হবে। এ নিয়ে কাজ চলছে। আবার চলমান প্রকল্পগুলো কোন পর্যায়ে আছে, সেগুলোও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কাজেই আগের মতো একনেক সভা মানেই যেখানে অর্থব্যয়ের কর্মযজ্ঞ ছিল, এখন সে পরিধি কমে আসবে। ফলে একনেকের গুরুত্বও কমবে।

বর্তমান সরকার আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে চায় জানিয়ে তিনি বলেন, পাশ হওয়া মানেই সবকিছু নয়। বাস্তবায়ন বড় কথা। প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়গুলোর ক্ষমতা বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। জবাবদিহি বাড়ানোর চিন্তা হচ্ছে। তবে বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্প খুব বেশি যাচাই-বাছাইয়ের মধ্যে পড়বে না। আগে পাশ করা হবে, এরপরই কোনো সমস্যা থাকলে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে যোজন-বিয়োজন করা যাবে।

ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ জানান, বিদেশি অর্থায়ন পাওয়া যাবে-এমন প্রকল্প গ্রহণে গুরুত্ব দেবে সরকার। বহু বছর আগের অনেক প্রকল্প পড়ে আছে। মৃতপ্রায় ও হিমাগারে থাকা প্রকল্পগুলো আমরা যদি ছেড়ে দিই, তাহলে বিশ্বব্যাংক ডিসেম্বরের মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলার সহায়তা ছাড় করতে পারবে। যেসব প্রকল্পে বিদেশি অর্থায়ন আছে, সেগুলোয় সহযোগীদের নজরদারি বেশি থাকে, ফলে অনিয়ম করা যায় না। তাই ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ কম থাকে। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকারের সঙ্গে মিলে নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, নিজেদের জন্য গ্যাসকূপ খনন না করে কেন বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির ব্যয়বহুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা বোধগম্য নয়। যেসব কূপ উন্নয়ন বা খননের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর বেশির ভাগ দেওয়া হয়েছিল বিদেশি কোম্পানিকে। এসব ক্ষেত্রে কতটা জবাবদিহি নিশ্চিত করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। নিজেদের গ্যাসের সম্ভাবনা থাকতে এলএনজি আমদানি একটি ভ্রান্তনীতি।

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, এতদিন যে অর্থনীতি চালিয়ে এসেছি, এলডিসি উত্তরণের পর দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করতে হবে। অনেক ব্যবসায়ী চাচ্ছেন এলডিসি থেকে যাতে বেরিয়ে না আসি। কিন্তু আমার মনে হয় সেটিতে কিছু করা যাবে না। তিনি বলেন, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে আরও প্রকল্প নিতে হবে। মানবসম্পদে অনেক পিছিয়ে আছি আমরা। বিদেশিরা কেন আমাদের কাজের জায়গা দখল করবে। সেখানে তো আমাদের দক্ষ মানবসম্পদ গড়ার কথা।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. ওয়াহিদ উদ্দিন বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানোই এখন মূলকথা। এজন্য বাজেট ঘাটতি কতদূর রাখা হবে, সেটি বড় বিষয়। তিনি বলেন, আমাদের টাকার পরিমাণ দেখার দরকার নেই, উন্নয়ন ব্যয়ের গুণগতমান বজায় রাখাটাই বড় কথা। তবে বিআরটির মতো চলমান প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিদেশে এমন থাকলেও আমাদের দেশে এটা কতটুকু কার্যকর হবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে প্রশ্ন আছে। কক্সবাজার গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ প্রকল্প নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, আমরা অপচয় কমাতে কাজ করছি।

প্রসঙ্গত, বর্তমান চলমান আছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের জুনে। এদিকে নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরির কাজও শেষ পর্যায়ে ছিল। ওই বছরের জুলাই থেকে সেটি বাস্তবায়নে যাওয়ার কথা। এখন এসব স্থগিত করা হয়েছে।

চার প্রকল্প অনুমোদন : একনেকে চার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং একটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২২২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৯৬৩ কোটি ৮২ লাখ, বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ১০০ কোটি ১৬ লাখ এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ১৫৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো-বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হারিপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ (সংশোধিত) প্রকল্প। এছাড়া দুটি মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ (সুন্দলপুর-৪ ও শ্রীকাইল-৫) এবং দুটি অনুসন্ধান কূপ (সুন্দলপুর সাউথ-১ ও জামালপুর-১) খনন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন-দ্বিতীয় পর্যায় (দ্বিতীয় সংশোধিত) এবং সর্বশেষটি হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প (২য় সংশোধিত)। এদিকে ব্যয় না বাড়িয়ে শুধু মেয়াদ বাড়ানো হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের (দ্বিতীয় সংশোধিত)।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম