টাঙ্গাইলে সারজিস আলম
এক ফ্যাসিস্টকে দেশছাড়া করেছি অন্য ফ্যাসিস্টকে সুযোগ দিতে নয়
যুগান্তর প্রতিবেদন, টাঙ্গাইল
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, আমরা এক ফ্যাসিস্টকে দেশছাড়া করেছি, অন্য ফ্যাসিস্টকে জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য নয়। কেউ যদি এখনো শয়নে-স্বপ্নে কিংবা ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে আবারও ছাত্র-জনতাকে ডমিনেট করে ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠবে, তারা যেন শেখ হাসিনাকে দেখে শিক্ষা নেয়। বৃহস্পতিবার বিকালে টাঙ্গাইল শহরের শহিদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে ছাত্র-নাগরিক সমাবেশে সারজিস আলম এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ভূমি অফিস, হাসপাতালসহ সরকারি দপ্তরে দালালি আর টাকা দিয়ে কাজ করার জন্য ছাত্র-জনতা এই অভ্যুত্থান ঘটায়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটি করেছেন তিনি তার আওয়ামী লীগকেই শুধু ফ্যাসিস্ট বানাননি, বাংলাদেশকে শুধু ফ্যাসিস্ট বানাননি, তিনি ফ্যাসিস্ট বানিয়েছেন আমাদের প্রত্যেকটি মানুষকে। এই জায়গা থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে।
সমন্বয়ক সারজিস বলেন, আমার ভাই যখন রক্তাক্ত হয়ে হাসপাতালে তখন সেই হামলাকারী কিছু পুলিশ কিভাবে উন্মুক্ত রাস্তায় ঘোরাফেরা করে। ওই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর, চাটুকার, তেলবাজ তোষামদকারী যেসব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য রয়েছে তারা যদি নিজেদের শুধরিয়ে না নেয় তাহলে নেত্রী হাসিনার মতোই দেশত্যাগ করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে আসার বিষয়ে সারজিস বলেন, আগামীর যে বাংলাদেশ হবে সেই বাংলাদেশের নেতৃত্ব শিক্ষার্থীরা দেবে। আমরা চাই ওই সংসদে গিয়ে আপনি একজন এমপি হবেন, একজন মন্ত্রী হবেন, একজন প্রধানমন্ত্রী হবেন। আপনাদের ওই সংসদে একজন পলিসি মেকার হিসাবে যেতে হবে। কারণ সব কিছু হয় সংসদ থেকেই এবং সব পলিসি মেকিং (নীতিনির্ধারণ) হয় ওই সংসদ থেকে। টাঙ্গাইলের এই মেধাবী তরুণ প্রজন্ম যদি সংসদে প্রতিনিধিত্ব না করে তাহলে কারা করবে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের উদ্দেশে সারজিস বলেন, আপনারা অভিভাবকরা যেমন স্বপ্ন দেখতেন, আপনার ছেলে শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট, ম্যাজিস্ট্রেট হবে, তেমনি আপনি স্বপ্ন দেখবেন আপনার ছেলে দেশের অন্যতম সেরা একজন রাজনীতিবিদ হয়ে উঠবে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন-ঢাকার সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন, মোবাশ্বিরুজ্জামান হাসান, মিতু আক্তার, রাকিবুল হাসান, রফিকুল ইসলাম আইনী, ইলমা খন্দকার অ্যানি প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী ইফফাত রাইসা নুহা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা, উপজেলা সমন্বয়কসহ জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠান শেষে সারজিস আলম সমাবেশে আসা শিক্ষার্থীদের সাথে সেলফি তোলেন।
হবিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা : হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পৃথক স্থানে মতবিনিময় সভা আহ্বানকে কেন্দ করে দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এ সময় সভাস্থল সদর উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। পরে বৈষম্যবিরোধী কেন্দ্রীয় নেতারা পৌরসভা মাঠে সভা করার সিদ্ধান্ত দেন। এদিকে হামলা ভাঙচুরের প্রতিবাদ জানিয়ে হবিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছেন সমন্বয়করা।
সমন্বয়ক মাহদী হাসান বলেন, সভাস্থলে হামলা ভাঙচুরের প্রতিবাদে তিনি এবং অপর সমন্বয়ক আশরাফুল ইসলাম সুজন হবিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তারা হবিগঞ্জে সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত করেছেন। তিনি বলেন, তবে যদি আবারও কোনো স্বৈরাচারের আবির্ভাব হয় তবে তারা তা রুখে দেবেন।
চাঁদপুরে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান : চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, নতুন বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, কেউ যাতে কোনো ধরনের অরাজকতা কায়েম করতে না পারে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। চাঁদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আলোচনা সভায় শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্যে এ আহ্বান জানান। বক্তারা বলেন, আমরা এমন এক সুসম সিস্টেম দাঁড় করাতে চাই, যেখানে ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে। বৃহস্পতিবার বিকালে চাঁদপুর শহরের হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আলোচনা সভায় ঢাকা থেকে আগত সমন্বয়করা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমন্বয়ক আবদুল কাদের, সুমাইয়া আক্তার, হামযা মাহবুব, মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, আলী আহম্মেদ আরাফ, খালেদ হাসান, তাছনিয়া নাওরিন, জিয়াউদ্দিন আয়ান।