লোহাগড়ায় বিএনপির সংঘর্ষে ২ ভাই নিহত
মনোহরদীতে অপরপক্ষের হামলায় আহত ১৫ * চাটমোহরে দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত ২
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নড়াইলের লোহাগড়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে দুই ভাই নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। বুধবার সকাল পৌনে ১০টায় উপজেলার চরমল্লিকপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন-ওই গ্রামের মৃত সামাদ শেখের দুই ছেলে মিরান শেখ ও জিয়ারুল শেখ। নরসিংদীর মনোহরদীতে অপরপক্ষের হামলায় দলটির ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় ১০-১২টি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়েছে। পাবনার চাটমোহরে টিসিবির কার্ডের তালিকা দেওয়া নিয়ে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে দুজন আহত হয়েছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
লোহাগড়া (নড়াইল) : পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, লোহাগড়া উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মাহমুদ খান ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফেরদৌস শেখের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে গ্রামে কর্মী সংগ্রহ নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এই বিরোধ দূর করতে বুধবার উভয় পক্ষের নেতারা মল্লিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কবুল মেম্বারের বাড়িতে একটি শান্তি সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মামলা-হামলা ও নির্যাতনে নেতাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। এ খবর বাইরে অপেক্ষমাণ লোকজনের কাছে ছড়িয়ে পড়লে দুপক্ষের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। শুরুতে পটু খানের ছেলে বাবু খান, ইদ্রিস মৃধার ছেলে হাসান মৃধা, হারুন মৃধার ছেলে হিরণ মৃধা, রাজ্জাক খানের ছেলে জহির খান, দেলোয়ার খান ও পটু খান, ফাইজার মোল্যার ছেলে শুভ মোল্যা, মৃত আতিয়ার খানের ছেলে তৌহিদুল খান ও মফিজ খানের ছেলে আবির খানসহ প্রায় ২০ থেকে ৩০ জন দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ফেরদৌস গ্রুপের লোকজনের ওপর হামলা করে। পরে সংঘর্ষে এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই ভাই নিহত ও পাঁচজন আহত হন। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে নিহতের ভাই ইরান শেখের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা মাহমুদ খান, ইকবাল ও কালামের বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে। লোহাগড়া ফায়ার সার্ভিসের একটি দল আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) দোলন মিয়া জানান, বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। লোহাগড়া থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।
চাটমোহর (পাবনা) : পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের জন্য সম্প্রতি ৫১১টি টিসিবির কার্ড (সংশোধনী) বরাদ্দ হয়। কার্ডের তালিকা ইউনিয়ন বিএনপির পক্ষ থেকে ইউনিয়ন পরিষদে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু এই তালিকা দেওয়া নিয়ে পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মহসিন আলী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক রবিউল করিম তারেকের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে বুধবার সকালে দুপক্ষই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ জানাতে এলে প্রথমে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে মহসিন ও রবিউল আহত হলে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাসাদুল ইসলাম হীরা যুগান্তরকে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা দলের মধ্যে কোনো বিশৃঙ্খলা করা যাবে না। দলীয় প্রধানের নির্দেশনা যারা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র বা জেলা সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেবে।
নরসিংদী : মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) জয়নুল আবেদীনের এক কর্মীকে মারধর করে সাবেক সংসদ-সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলের লোকজন। এ ঘটনায় বুধবার সকালে মনোহরদী বাসস্ট্যান্ডে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন জয়নুল সমর্থকরা। সভা চলাকালে বকুলের সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। তাদের অতর্কিত হামলায় সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীরা পালিয়ে যান। এসময় ১০-১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে আছেন-বিএনপি নেতা মোফাজ্জল হোসেন, শাহ জাহান, সাইফুল ইসলাম, যুবদল নেতা জুয়েল, জুয়েল রানা, ছাত্রদল নেতা শাহিন ফরাজী, সাব্বির, সাদ্দাম হোসেন, প্রণয় ফরাজী ও নূর উদ্দীন। এদের মধ্যে মোফাজ্জলের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা নিউরোসাইন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শুকুন্দী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল গণি ফরাজী বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ সভা চলাকালে বকুল গ্রুপের লোকজন অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় ১০-১২টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জুয়েল হোসেন বলেন, এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।