তথ্য সংগ্রহ করেছে উপদেষ্টার কার্যালয়
পর্যালোচনা হবে আ.লীগের গুরুত্বের ৮ মেগা প্রকল্প
হামিদ-উজ-জামান
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পর্যালোচনা করা হবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়া বিপুল ব্যয়ের মেগা ৮ প্রকল্প। ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত এসব প্রকল্পের বিষয়ে ইতোমধ্যেই তথ্য সংগ্রহ করেছে পরিকল্পনা উপদেষ্টার কার্যালয়। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) থেকে সম্প্রতি প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয়, বৈদেশিক ঋণ, এখন পর্যন্ত খরচ, বাস্তব ও আর্থিক অগ্রগতিসহ বিস্তারিত তথ্যের তিন পৃষ্ঠার একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
এতে জুলাই পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য আছে। পরিকল্পনা উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে শিগগিরই পর্যালোচনার কর্যক্রম শুরু হবে। এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গোয়েন্দা ইউনিটও এসব প্রকল্পের বিষয়ে নজরদারি করছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন রোববার যুগান্তরকে বলেন, উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি এই মুহূর্তে আমার মনে নেই। তবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ভুক্ত সব প্রকল্পের বিষয়ে একটি সামারি চাওয়া হয়েছে উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে। সেগুলো নিয়ে কাজ চলছে। এসব প্রকল্প নিয়ে যখন আলোচনা হবে তখন হয়ত মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে আলাদাভাবে পর্যালোচনা হতে পারে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ একই সঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টারও দায়িত্বে রয়েছেন। বর্তমানে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বেশি সময় দিচ্ছেন। সেখানে কিছুটা গুছিয়ে নিয়ে দ্রুত পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে সময় দেওয়া শুরু করবেন। সে সময় প্রথম দিকেই মেগা প্রকল্পগুলো পর্যালোচনার বিষয়টি শুরু করা হতে পারে।
সূত্র জানায়, আইএমইডি থেকে পরিকল্পনা উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো অগ্রগতি প্রতিবেদনে দেখা গেছে ৮টি প্রকল্পের মধ্যে ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। চলমান আছে মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল মৈত্রী বিদ্যুৎ প্রকল্প, মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ এবং দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প।
এসব বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ রয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পগুলোর আওতায় ক্রমপুঞ্জিত (শুরু থেকে এখন পর্যন্ত) খরচ হয়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৪৮৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে গড় আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ৯১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
পদ্মা সেতু : আইএমইডির অগ্রগতি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ২৫ জুন উদ্বাধন করা হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পের। সেতুর বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে শত ভাগ। জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে। কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
মেট্রোরেল : মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ ২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয়েছে। ২৯ ডিসেম্বর থেকে নির্ধারিত সময়ে জনগণের চলাচলের জন্য খুলে গেছে এ অংশটি। পরে মতিঝিল পর্যন্ত খুলে দেওয়া হয়। এখন নিয়মিত উত্তরা-মতিঝিল ট্রেন চলাচল করছে। তবে কমলাপুর পর্যন্ত পুরো প্রকল্প শেষ হতে সময় লাগবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পটির আওতায় জুলাই পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৪ হাজার ৭১৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ৯০ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে সংশোধিত ব্যয়সহ মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটির শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬৯ দশমিক ০১ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৭৪ হাজার ৯৮১ কোটি ২ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে।
পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ : এই প্রকল্পে জুলাই পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৬৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৫ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে মোট ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ আছে ২১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল।
মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত কার্যক্রম : মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (১২টি প্রকল্পযুক্ত) প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৬৯৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ রয়েছে প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকা। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। জুলাই পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৪৪ হাজার ৪৬৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা, আর্থিক অগ্রগতি ৭৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৮ দশমিক ২০ শতাংশ।
রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প : এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ১৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। গত জুলাই পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার ২৩২ কোটি টাকা, আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৫ দশমিক ২০ শতাংশ। ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৯ দশমিক ১৭ শতাংশ।
পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর : এ প্রকল্পটি ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। জুলাই পর্যন্ত খরচ হয়েছে তিন হাজার ৮০৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, আর্থিক অগ্রগতি ৮৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। প্রকল্পের ভৗত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯২ দশমিক ৮২ শতাংশ।
দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথ : দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। জুলাই পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১০ হাজার ৫০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫০ দশমিক ১৮ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৮ দশমিক ১৬ শতাংশ।