বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের আলটিমেটাম
প্রশাসনে আওয়ামী দোসরদের তালিকা চূড়ান্ত
এ সপ্তাহের মধ্যে বদলি না করলে আগামী রোববার সচিবালয়ে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা * বিএনপির মহাসচিব দেশে ফেরার পর তালিকা প্রকাশসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসবে
বিএম জাহাঙ্গীর
প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
এবার বেশ শক্তভাবে মাঠে নামতে যাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। চলতি সপ্তাহের মধ্যে চিহ্নিত আওয়ামী দোসরদের গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে সরানোসহ অবশিষ্ট পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি না দিলে রোববার সচিবালয়ে অবস্থান কর্মসূচি দেওয়া হবে। শনিবার যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফোরামের আহ্বায়ক এবিএম আব্দুস ছাত্তার।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে জোর দাবি জানিয়ে ১৫ দিন আগে আমরা সচিবালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছিলাম। সে সময় সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। কিন্তু ৩ দিনের স্থলে ১৫ দিন পার হয়ে গেছে, অথচ এখনো প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গণহত্যার উসকানিদাতা আমলারা বহালতবিয়তে আছে। ওরা তো এ সরকারকে ব্ল্যাইমেইল করছে। ভুল পথে নেওয়ার জন্য এরা যে কোনো ধরনের স্যাবোটাজ করতে পারে। তাই আওয়ামী দোসরদের আর স্বপদে দেখতে চাই না। তিনি বলেন, এছাড়া আওয়ামী দুঃশাসনের সময় পদোন্নতি বঞ্চিত অনেকে এখনো তাদের প্রাপ্য পদোন্নতি পাননি। সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
ঐক্যফোরামের সঙ্গে যুক্ত সাবেক যুগ্মসচিব আব্দুল খালেক বলেন, এখনো যদি আওয়ামী শিবিরের প্রথমসারির কর্মকর্তারা প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বহাল থাকে তাহলে এরচেয়ে বড় ধরনের দুঃসংবাদ আর হতে পারে না। এ অবস্থা বহাল থাকলে ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত বিপ্লবকে খাটো করা হবে। আমার ধারণা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা নেতৃস্থানীয় সমন্বয়ক জানতে পারলে তারাও ব্যথিত ও সংক্ষুব্ধ হবেন।
সূত্র জানায়, প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে বহাল থাকা আওয়ামী দোসরদের তালিকা চূড়ান্ত করেছে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। এ কাজে সক্রিয়ভাবে সহায়তা দিয়েছে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আরেকটি সংগঠন। যার নাম পলিসি ম্যানেজমেন্ট রিসার্চ সোসাইটি (পিএমআরএস)। বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। তিনি দেশে আসার পর তালিকা প্রকাশের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ এ বিষয়ে আরও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রশাসনের একঝাঁক সাবেক চৌকশ কর্মকর্তা। যাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জার গ্রুপ নেটওয়ার্কের মধ্যে কর্মকর্তার সংখ্যা কয়েক হাজার। এছাড়া কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এখন একটি বড় অংশকে তারা নেতৃত্বে দিচ্ছেন। সচিবালয় থেকে একেবারে উপজেলা প্রশাসন পর্যন্ত ঐক্য ফোরামের সুবিস্তৃত নেটওয়ার্ক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো যুগান্তরকে জানায়, খুবই অবাক হওয়ার মতো বিষয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যেসব পদস্থ কর্মকর্তা আওয়ামী রেজিমকে টিকিয়ে রাখতে চূড়ান্তভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, যাদের সার্বিক কর্মকাণ্ড ছিল দলীয় কর্মীর মতো; অথচ তারা এখনো সেখানে গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছেন। যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন অতিরিক্ত সচিব আহসান কিবরিয়া। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন)। এই কর্মকর্তা সব সময় প্রধানমন্ত্রীর আশপাশে থাকতেন। প্রকাশ্যে দলবাজি করতেন। তিনি এখন ভোল পালটে সংস্কারপন্থি হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। সঙ্গে রেখেছেন আরও কয়েকজনকে।
আহসান কিবরিয়ার কারণে তাদেরও বদলি করা যাচ্ছে না। এই কর্মকর্তা ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। সে সূত্রে তিনি এখন নতুন করে ক্ষমতাবান হওয়ার চেষ্টা করছেন। বিএনপি যে তালিকা প্রস্তুত করেছে সেখানে তার নাম রয়েছে প্রথমদিকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) আবু হেনা মোস্তফা জামান ও যুগ্মসচিব (রাজনৈতিক) ফিরোজ উদ্দিন খলিফা।
এরা দুজন ছিলেন বিগত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের অতি ঘনিষ্ঠ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিটি বিদেশ সফরের অগ্রভাগে থাকতেন মোস্তফা জামান। ফিরোজ উদ্দিন খলিফা এর আগে ছিলেন সচিবালয় নিরাপত্তা শাখায়।
এভাবে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ প্রতিটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর ও সংস্থায় আওয়ামী দোসরদের চিহ্নিত করে তালিকা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া এখন শেষ পর্যায়ে। সূত্রগুলো জানায়, শুধু নামের তালিকা করেই এ প্রক্রিয়া শেষ করা হচ্ছে না। প্রত্যেকের দুর্নীতির খতিয়ানও বের করা হচ্ছে। কে কিভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন সেটিও উল্লেখ করা হবে। এ সংক্রান্ত তালিকা প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হবে। পৃথকভাবে দেওয়া হবে দুর্নীতি দমন কমিশনে।