নতুন পর্ষদ গঠন
আইএফআইসি ব্যাংক সালমানের নিয়ন্ত্রণমুক্ত
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সালমান এফ রহমান/ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত, শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা এবং বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ছয় সদস্যের নতুন পর্ষদ পুনর্গঠন করে দিয়েছে।
এ বিষয়ে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ব্যাংকের এমডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অচিরেই নতুন পর্ষদ ব্যাংকটির দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন সালমান এফ রহমান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাকে বাদ দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে। ছয় সদস্যের এ পর্ষদের চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক ও দুজন সরকারি শেয়ারের প্রতিনিধি হিসাবে সরকারি প্রতিনিধি রয়েছেন। পরিচালকরা অচিরেই বৈঠক করে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ করবেন।
নতুন চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক হলেন, ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক এমডি মেহমুদ হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবতাদুল ইসলাম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সাজ্জাদ জহির ও চার্টার্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট কাজী মো. মাহবুব কাশেম। ব্যাংকে সরকারের ৩২ দশমিক ৭৫ শতাংশ শেয়ার থাকায় দুই প্রতিনিধি থাকবেন সরকারের পক্ষ থেকে। এরা হলেন, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. গোলাম মোস্তফা ও যুগ্ম সচিব মুহাম্মদ মনজুরুল হক।
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান পলাতক ছিলেন। পরে তাকে সদরঘাট থেকে গ্রেফতার করা হয়। ফলে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ব্যাংকটির পর্ষদ সভা হচ্ছে না। এদিকে তার ছেলে আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমানও ব্যাংকটির পরিচালক ও পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে তাকে পরিচালক পদ থেকে অপসারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষা, ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করাসহ জনস্বার্থে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে।
বিএনপি সরকারের সময় ব্যাংকটি ছিল ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বাদলের নিয়ন্ত্রণে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ব্যাংকটি সালমান এফ রহমানের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ওই সময় থেকে ব্যাংটিতে নামে-বেনামে ও নানা কৌশলে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বন্ড ও সুকুক ছেড়ে টাকা তুলেছেন ব্যাংক ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। এসব অর্থ নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ব্যাংক খাত থেকে তিনি শুধু বেক্সিমকো গ্রুপের নামেই ঋণ নিয়েছেন ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বেশকিছু ঋণ ইতোমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে। আগে এসব ঋণ ব্যাংক খেলাপি হিসাবে দেখাত না। সরকার পরিবর্তনের পর এখন থেকে সেগুলোকে খেলাপি হিসাবে দেখানো হচ্ছে। এর আগে বিএনপি সরকারের সময়েও ব্যাংকটিতে ব্যাপক লুটপাট হয়েছিল।
এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০টি ব্যাংক ও একটি ফাইন্যান্স কোম্পানির পর্ষদ বাতিল করে নতুন পর্ষদ পুনর্গঠন করে দিয়েছে। এর মধ্যে এস আলমের দখলে ছিল ৮টি ব্যাংক ও একটি ফাইন্যান্স কোম্পানি। এগুলোর পর্ষদ বাতিল করার ফলে ওইসব ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানি এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, ন্যাশনাল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও আভিভা ফাইন্যান্স কোম্পানি।
এর বাইরে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের মালিকানাধীন ইউসিবি ব্যাংকের পর্ষদও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এস আলমের দখলে থাকা সব ব্যাংকেই বড় ধরনের লুটপাট করা হয়েছে। ফলে এসব ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে। এখন গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছে না। পর্ষদ ভেঙে দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এগুলোকে পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করছে।