সচিব সভায় প্রধান উপদেষ্টা
দুর্নীতি কঠোর হাতে দমন করতে হবে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
সরকারের সব পর্যায়ে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে কঠোরভাবে দুর্নীতি দমনের জন্য সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, স্বাধীনভাবে নব উদ্যোমে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। দুর্নীতি কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। সাহসের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারও কোনো কথায় কান না দিয়ে বিবেকের ওপর আস্থা-বিশ্বাস রেখে সততার সঙ্গে সরকারি দায়িত্ব সম্পন্ন করতে হবে। সরকারের সব কাজ হবে মানুষের জন্য, মানুষের কল্যাণ ও জনস্বার্থে। চাহিদা অনুসারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। বুধবার প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁও কার্যালয়ে বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত সচিব সভায় সরকারের সচিবদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সচিবের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। সভায় ৬৮ জন সিনিয়র সচিব ও সচিব অংশ নেন। সচিব সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ ৮ জন সচিব বক্তব্য দেন। প্রধান উপদেষ্টা সচিবদের উদ্দেশে আরও বলেন, অধিক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে কী কী সমস্যায় পড়ছেন, তা চিহ্নিত করে সেগুলো সংস্কার করুন। স্বাধীনভাবে সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধাগুলো কী, তা ঠিক করুন। সমস্যাগুলো সমাধানে কোনো আইনগত বাধা থাকলে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিন। স্বাধীন মনোভাব নিয়ে নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করুন। কোনো ধরনের হীনম্মন্যতায় ভুগবেন না। সংস্কার কর্মসূচি প্রণয়নে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা ও মতামত গ্রহণ করতে হবে। যে কাজের বিষয়ে যিনি অভিজ্ঞ তার কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সৃষ্টিশীল ও নাগরিকবান্ধব মানসিকতা নিয়ে প্রতিটি মন্ত্রণালয়-বিভাগ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার কর্মসূচির সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা দাখিল করবে, যা নিয়মিত মূল্যায়ন বা পরিবীক্ষণ করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। সরকারি অফিসে সেবা নিতে গিয়ে মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয়। সুবিধা না দিলে সেবা মেলে না। এসব আর চলবে না। সরকারি অফিস হবে মানুষের ভরসাস্থল। সেখানে উলটো জনগণকে তুচ্ছজ্ঞান করা হয়। উপদেষ্টা আরও বলেন, আপনাদের সবাইকে কাজের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা এবং ভাবনার সুযোগ দেওয়া হলো। নিজেদের মতো করে ভেবেচিন্তে জনস্বার্থ এবং মানুষের অধিকার সমুন্নত রেখে নির্ভয়ে দায়িত্ব পালন করুন। কেউ বাধা দিতে এলে পাত্তা দেবেন না। এতসব স্বাধীনতা দেওয়ার পরও যদি কেউ ফেল করেন কিংবা ব্যর্থ হন, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। তিনি আরও বলেন, দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে সেবা সহজ করার মাধ্যমে জনগণের সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। সরকারি অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি কেনাকাটায় যথার্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশ ও পাকিস্তান শাসনামল এবং বাংলাদেশের আমলের দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে গেল। অথচ আমরা এখনো সেই ব্রিটিশ আমলের চিন্তা এবং ধ্যানধারণা নিয়েই পড়ে আছি। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সচিবদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য গৎবাঁধা চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে চিন্তার সংস্কার করে সৃজনশীল উপায়ে জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, যে কোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রেখে জনগণের নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর, বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নিতে হবে। কথায় নয়, জনগণ এখন কাজে বিশ্বাস করেন। কাজের মাধ্যমে তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে সরকার তাদের স্বার্থে কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জনগণের কাজে গভীর মনোযোগী হতে হবে। জনগণ যাতে অতীত এবং বর্তমান সরকারের কাজের পার্থক্যটা অনুধাবন করেন। এ পার্থক্য তো তাদের সেবা দিয়ে বোঝাতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার বৈষম্যহীন মানবিক দেশ গড়ার যে প্রত্যয়, যে ভয়হীন চিত্ত উপহার দিয়েছে, তার ওপর দাঁড়িয়ে বিবেক ও ন্যায়বোধে উজ্জীবিত হয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সততা, নিষ্ঠা ও জবাবদিহি নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সৃষ্ট নতুন বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে আগ্রহ, ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে, দেশের স্বার্থে তা সর্বোত্তম উপায়ে কাজে লাগাতে হবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই প্রথম সচিব সভা।