Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সৃজনশীল পদ্ধতি ফিরছে শিক্ষাব্যবস্থায়

পড়াশোনার ঘাটতির শঙ্কা নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের * ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দ্রুত পরীক্ষার ধরন ও নম্বর বণ্টন নিয়ে ধারণা দেওয়া দরকার -শিক্ষক রোকনুজ্জামান

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সৃজনশীল পদ্ধতি ফিরছে শিক্ষাব্যবস্থায়

শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জোরালো দাবিতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সৃজনশীল পদ্ধতি ফিরে আসছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ কারণে তারা নতুন কারিকুলাম থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সময় স্বল্পতায় চলতি শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই পরিবর্তন করা সম্ভন নয়। বছর শেষে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতিতে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল পদ্ধতির পাঠ্যবই দেওয়া হবে। গত বছর তিনটি শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়। চলতি বছর আরও চারটি নতুন শ্রেণিতে এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। নতুন কারিকুলামে পরীক্ষার ধরন ও নম্বর বণ্টনসহ নানা অসঙ্গতির কারণে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। একের পর এক একাডেমিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এছাড়া ফিরছে নবম শ্রেণির বিভাগ বিভাজনও। আগের মতো বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগ চালু হচ্ছে। চলতি শিক্ষাবর্ষের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিভাজন না থাকলেও দশম শ্রেণিতে তাদের সুনির্দিষ্ট বিভাগ নিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিতে। এতে পড়াশোনায় এক ধরনের ঘাটতি থাকার আশঙ্কা রয়েছে।

জানা যায়, নতুন শিক্ষাক্রমে বিভাগ বিভাজন (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য) নেই। ফলে নবম শ্রেণিতেও অভিন্ন ১০টি পাঠ্যবই পড়ছে সব শিক্ষার্থী। তবে তারা যখন দশম শ্রেণিতে উঠবে, তখন বিভাগ বিভাজনের সুযোগ পাবে। তারা আগের নিয়মে যেন ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে, সেজন্য সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচিও প্রণয়ন করা হবে।

শিক্ষকরা বলছেন, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে একের পর এক শিক্ষাক্রম পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের পর শ্রেণিকক্ষের পাঠদান ও মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পূর্ণ পালটে যায়। এতে দিশেহারা হয়ে পড়ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। কোনো কোনো সময় শিক্ষকরাও সুস্পষ্টভাবে বুঝে উঠতে পারেন না-কীভাবে নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের অভ্যস্ত করে তুলবেন।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, স্বাধীনতার ৫ দশকেরও অধিক সময় পার হলেও দেশের শিক্ষাক্রম কী হবে-তা এখনো বাস্তবতার নিরিখে সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ হয়নি। শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়াই ঘন ঘন শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের ওপর। একটি নতুন শিক্ষাক্রমে অভ্যস্ত হতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেক সময় চলে যায়। এভাবে একের পর এক নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে মানিয়ে নিতে হচ্ছে।

অভিভাবকরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়নি, যা পাঠদানে ঘাটতির শঙ্কা থাকছে। পাশাপাশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণিতে ধারাবাহিক মূল্যায়নে আনুষঙ্গিক খাত ব্যয়বহুল করা হয়েছে। এতে অভিভাবকদের ওপর বাড়তি আর্থিক চাপ নিতে হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম থেকে সরে আসা একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন তারা।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক রোকনুজ্জামান শেখ যুগান্তরকে বলেন, পড়াশোনার আগ্রহ কম এমন শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল। যা শতকরা ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী। এই কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা বই বিমুখ ছিল। তাই বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এই কারিকুলাম ভালোভাবে নেয়নি। আগের কারিকুলামে ফেরা একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর অভিভাবক বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম পদ্ধতি থেকে সরে আসা একটি উপযুক্ত সিদ্ধান্ত। এতে কিছুটা ক্ষতি হলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের প্রশান্তি কাজ করছে। এতে শিক্ষার্থীদের লেখার ও মুখস্থ করার অভ্যস্ততা ফিরবে। তবে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। ক্লাস নাইনে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে একটু কঠিন হবে।

এরপর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পরিপত্রে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে প্রাক-প্রাথমিক, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে ধারাবাহিকতা রেখে এরই মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবইগুলোর পাণ্ডুলিপি প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জন করে মুদ্রণ করা হবে। এক্ষেত্রে পাঠদান পদ্ধতি ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হবে। যতদূর সম্ভব মূল্যায়ন পদ্ধতি পূর্বের জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ এর মতো হবে। পরিপত্রে জানানো হয়-ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চলমান পাঠ্য বইগুলো ২০২৪ সালের পুরোটা সময় বহাল থাকবে। তাদের এ বছরই বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ২০২৫ সালে যথাসম্ভব সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হবে।

এতে বলা হয়, যেসব শিক্ষার্থী ২০২৫ সালে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে, তাদের জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ এর আলোকে প্রণীত শাখা ও গুচ্ছভিত্তিক সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তকগুলো (২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ব্যবহৃত) প্রদান করা হবে। এসব শিক্ষার্থী নবম ও দশম শ্রেণি মিলিয়ে দুই শিক্ষাবর্ষে সম্পূর্ণ পাঠ্যসূচি শেষে ২০২৭ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম