Logo
Logo
×

শেষ পাতা

কুমিল্লায় সাবেক মন্ত্রীর শ্যালকের ‘আয়নাঘর’

Icon

আবুল খায়ের, কুমিল্লা

প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কুমিল্লায় সাবেক মন্ত্রীর শ্যালকের ‘আয়নাঘর’

কুমিল্লার লাকসামে সাবেক এলজিআরডিমন্ত্রী তাজুল ইসলামের শ্যালক মহাব্বত আলীরও ছিল কথিত ‘আয়নাঘর’। উপজেলা সদরের উত্তর বাজারে ব্যক্তিগত কার্যালয়ের আড়ালে টর্চার সেল গড়ে তুলেছিলেন তিনি। বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী মতাদর্শের লোক বা নিজ দলের বিদ্রোহীদের ধরে এনে দিনের পর দিন আটকে রেখে সেখানে নির্যাতন করা হতো। অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাকে অনেককে ধরে এনেও সেখানে রাখা হতো।

স্থানীয়রা জানান, লাকসাম থানার বিপরীতে মহাব্বতের কার্যালয়ে ছিল কথিত সেই ‘আয়নাঘর’। মাঝে-মধ্যে গভীর রাতে মহাব্বত সেখানে আসতেন। আশপাশের লোকজন প্রায়ই সেখানে কান্নার আওয়াজ শুনতেন। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলতেন না। সেখানে বেশকিছু অস্ত্রধারীও থাকতেন। সম্প্রতি এই টর্চার সেলের সামনে ‘আয়নাঘর’ নাম দিয়ে ব্যানার টানিয়েছেন নির্যাতিতরা। এরই মধ্যে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। প্রতিদিনই মানুষ কথিত সেই ‘আয়নাঘর’ দেখতে সেখানে ভিড় করছেন।

জানা গেছে, লাকসাম উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহাব্বত আলী ছিলেন এলাকার অঘোষিত মহারাজ। বোনজামাই সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের প্রভাবে লাকসাম ও মনোহরগঞ্জে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন তিনি। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে সবকিছুর কলকাঠি নাড়তেন এই মহাব্বত। গড়ে তুলেছিলেন বিশাল ক্যাডার বাহিনী। ভুক্তভোগীরা জানান, মহাব্বতের কথার বাইরে গেলেই তাকে ধরে এনে সেখানে নির্যাতন করা হতো। কথিত আয়নাঘরের নিচের দুই ফ্লোরে প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় মহাব্বতের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছিল। তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় গড়ে তোলা হয় সেই টর্চার সেল।

মহাব্বতের ‘আয়নাঘরে’ নির্যাতিতদের একজন লাকসাম পৌরসভা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনির আহমেদ। তিনি বলেন, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে আমাকে দুদফায় ধরে নিয়ে সেখানে নির্যাতন করা হয়। সেখানে আমি অনেক মানুষের কান্না শুনেছি। মহাব্বত মানুষকে নির্যাতন করে চাঁদাবাজি ও জমি দখল করেছে। তার সঙ্গে নির্যাতনে জড়িত ছিল লাকসাম পৌরসভার সাবেক মেয়র আবুল খায়ের, ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নিজাম উদ্দিন শামীম, ইউপি চেয়ারম্যান ওমর ফারুকসহ অনেকে।

তিনি বলেন, আয়নাঘরের ভবনটির সম্পত্তি নিরীহ মানুষের। মহাব্বত তার দুলাভাই সাবেক মন্ত্রী তাজুলের প্রভাবে সেটি দখলে নিয়ে সেখানে ভবন নির্মাণ করেন। ভবনটির তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় বেশ কয়েকটি কক্ষে চালানো হতো নির্মম নির্যাতন। বিএনপির রাজনীতি করি বলে আমাকে একবার লাকসাম থানার এসআই বোরহান উদ্দিন ধরে নিয়ে মহাব্বতের আয়নাঘরে দিয়ে আসে। পরে ৩ ঘণ্টা আমাকে টানা নির্যাতন করে আবার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তখন বারবার মনে হচ্ছিল এখনই মনে হয় মরে যাব। সরকার পতনের পর মানুষ লাকসামের আয়নাঘর নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে অনেকে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়াও ওই আয়নাঘরে পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেলাল রহমান মজুমদার, পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান মানিক, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মাসুদ রানা, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম, বিএনপি নেতা মাহবুব শিকদার, যুবদল নেতা আর্মি ফারুক, শফিউল্লাহ, মিন্টু মিয়া, মো. সালেহ আহমদসহ অর্ধশতাধিক বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীকে আটক রেখে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

লাকসাম পৌর বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, বছরখানেক আগে আমাকে তুলে নিয়ে মহাব্বত ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী প্রথমে নির্মম নির্যাতন করে। একপর্যায়ে তারা আমার পায়ুপথে গরম চা ঢেলে দেয়। বারবার বৈদ্যুতিক শক দেয়।

লাকসাম বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, মহাব্বত সব কিছুই করেছেন তাজুল ইসলামের নির্দেশে। আমি হাউজিং এলাকায় বাড়ি নির্মাণের সময় চাঁদা দিতে রাজি হইনি বলে আমাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন চালায় মহাব্বত বাহিনী। পরে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দিয়ে জীবন রক্ষা করেছি। সেদিনের কথা মনে হলে এখনো ভয়ে আঁতকে উঠি। আমি মনে করি, তাজুল ইসলাম ও মহাব্বতদের কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মহাব্বত আলী ও তার বাহিনীর কাউকে এলাকায় দেখা যায়নি। এলাকাবাসী বলছেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর মহাব্বত পালিয়ে গেছে। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম