বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ
গাজীপুরে নিহত কলেজছাত্র
জামালপুর বরিশাল ও সোনাগাজীতে আহত ৫৮
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
দেশের বিভিন্ন স্থানে আধিপত্য বিস্তারসহ নানা ইস্যুতে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক কলেজছাত্র নিহত এবং ৫৮ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। শুক্রবার ও শনিবারের এসব ঘটনার মধ্যে গাজীপুর মহানগরীর ছায়াবীথি এলাকায় কলেজছাত্র নিহত, জামালপুরে অন্তত ৩৫ জন, বরিশালে রূপাতলী বাস টার্মিনাল ও আশপাশের এলাকাতে ১২ জন, ফেনীর সোনাগাজীতে ১১ জন আহত হয়েছেন। ব্যুরো ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর-
গাজীপুর দক্ষিণ : গাজীপুর মহানগরীর ছায়াবীথি এলাকায় শুক্রবার রাতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ফাহিম চৌধুরী (২৬) সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ছিলেন। ফাহিমের মা ফাতেমা বেগম জানান, ‘৪ দিন আগে ফাহিম সিলেট থেকে ছায়াবিথী এলাকায় আমার মায়ের বাসায় বেড়াতে আসে। শুক্রবার সন্ধ্যার পর সে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বের হয়েছিল। এরপর হঠাৎ খবর আসে আমার ছেলেকে কুপিয়ে মেরে ফেলেছে। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তর ছায়াবীথি এলাকায় মাদক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ ও সিএনজি স্টেশন নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে রাত ৮টা থেকে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া চলছিল। ছায়াবিথীর সাহাপাড়ার সৌরভ গ্রুপের সঙ্গে একই ওয়ার্ডের বরুদার হিমেল ও সাগর গ্রুপের ধাওয়া-পালটাধাওয়া এবং সংঘর্ষের সময় হিমেল গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সৌরভ গ্রুপের সদস্য সন্দেহ করে ফাহিমকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। আহত ফাহিমকে উদ্ধার করে শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বাবার মৃত্যুর পর ফাহিমের মা নানার বাসায় থাকতেন। সে কোনো গ্রুপের সঙ্গে জড়িত ছিল না।
গাজীপুর মেট্রো সদর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ঘটনার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। এখনো মামলা করা হয়নি।’
জামালপুর: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে জামালপুর জেলা বিএনপির ভিডিও কনফারেন্সের সময় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছে। শনিবার বিকালে শহরের দেওয়ানপাড়ায় সৈয়দ আলী কমিউনিটি সেন্টারে সংঘর্ষের পর আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠান দলীয় নির্দেশনা মেনে শুরুর ১০ মিনিট আগে কেন্দ্রীয় এক নেত্রী দলবল নিয়ে জোর করে কমিউনিটি সেন্টারে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। এ সময় ৫টি গাড়ি ভাঙচুর ও ৫টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও ওয়ারেছ আলী মামুন জানিয়েছেন।
অন্যদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি নিলোফার চৌধুরী মনি বলেন, ক্রাইটেরিয়ার নামে দলের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের সবকিছু থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। জামালপুর সদর থানার ওসি মুহাম্মদ মহব্বত কবীর জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বরিশাল: রূপাতলী বাস টার্মিনাল ও সংলগ্ন থ্রি-হুইলার স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের হামলায় থ্রি-হুইলার চালকসহ ১২ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সরকার পতনের পর রূপাতলী বাস টার্মিনাল দখলে নেয় মহানগর বিএনপির একটি গ্রুপ। কয়েকদিন থ্রি-হুইলারে চাঁদা আদায় বন্ধ থাকলেও শুক্রবার নতুনভাবে তা শুরু করে বিএনপি নেতা কালাম চৌধুরী ও আব্দুর রাজ্জাকসহ তাদের লোকজন। থ্রি-হুইলার চালকরা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে রাতেই শতাধিক ব্যক্তি লাঠিসোটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে চালকসহ ১২ জন আহত হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে ১০টির মতো যানবাহন।
থ্রি-হুইলার চালকরা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের আমলে একটি সিন্ডিকেট থ্রি-হুইলার চালকদের কাছ থেকে ৫০ থেকে ৭০ টাকা আদায় করত। এছাড়া প্রতিটি যাত্রীবাহী বাস থেকে ৮০ থেকে ১২০ টাকা চাঁদা নেওয়া হতো। কিন্তু বিএনপি নেতা কালাম চৌধুরী ও আব্দুর রাজ্জাকসহ তাদের বাহিনী টার্মিনালের প্রতিটি বাস থেকে প্রতিবার টার্মিনাল থেকে ছাড়তে ১০০-১২০ টাকা করে উত্তোলন শুরু করে। শুধু বাসই নয় তারা থ্রি-হুইলার থেকেও চাঁদা আদায় শুরু করে। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আহতদের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এ বিষয়ে আইনানুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোনাগাজী: ফেনীর সোনাগাজীতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যুবদল-ছাত্রদলের সংঘর্ষে ১১ জন আহত হয়েছে। শুক্রবার রাতে উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর বাজারের এ ঘটনায় পালটা-পালটি দুটি মামলাও করা হয়েছে। পুলিশ, এলাকাবাসী ও দলীয় সূত্র জানা গেছে, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব নুর আলম সোহাগ ও যুবদল নেতা শাহীন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ১১ জন আহত হন। সোনাগাজী মডেল থানার ওসি সুদ্বীপ রায় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক খুরশিদ আলম ভূঞা বলেন, শুনেছি ছাত্রদল ও মৎস্যজীবী দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মারামারি হয়েছে।