এক চিঠি নিয়ে তুলকালাম
মন্ত্রণালয়ে গিয়ে অর্ধশতাধিক সাবরেজিস্ট্রারের বিক্ষোভ
দুর্ব্যবহার ছাড়াও কর্মকর্তাদের নেমপ্লেট ভাঙার অভিযোগ * সিসি ক্যামেরা দেখে জড়িতদের চিহ্নিত করা হচ্ছে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি যুগান্তর
সম্পদবিবরণী জমা দেওয়ার বৈষম্যমূলক চিঠি ইস্যু করা নিয়ে রোববার আইন মন্ত্রণালয়ে তুলকালাম ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অহিদুল ইসলাম এবং মহাসচিব শফিউল বারীর নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক সাবরেজিস্ট্রার মন্ত্রণালয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন। এ সময় মন্ত্রণালয়ের রেজিস্ট্রেশন শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের তুমুল বাদানুবাদ হয়। কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, সাবরেজিস্ট্রাররা গালাগাল করা ছাড়াও তাদের নেমপ্লেট ভেঙে ফেলেন। তাদের মারমুখী আচরণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সূত্র জানায়, বেলা পৌনে ৩টায় ৭০-৮০ জন সাবরেজিস্ট্রার একযোগে আইন মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা উপসচিব (রেজিস্ট্রেশন) আবু সালেহ মো. সালাহউদ্দিন খা এবং একই শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মুরাদ জাহান চৌধুরীর কক্ষে এসে তাদের ঘিরে ধরেন। উচ্চৈঃস্বরে ধমক দেওয়া ছাড়াও নানাভাবে প্রতিবাদ জানান। পেছন থেকে ২০-৩০ জন করিডরে স্লোগান দিয়ে মিছিলও শুরু করে দেন। কেউ কেউ কর্মকর্তাদের নেমপ্লেট ভেঙে ফেলেন।
এ সময় মন্ত্রণালয়জুড়ে একধরনের ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়। সংগঠনের সভাপতি ও মহাসচিব ছাড়াও সেখানে উল্লেখযোগ্য রেজিস্টারিং কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগ দেন নারায়ণগঞ্জের জেলা রেজিস্ট্রার খন্দকার জামিলুর রহমান, মানিকগঞ্জের জেলা রেজিস্ট্রার জাহিদ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা রেজিস্ট্রার সরকার লুৎফুল কবির, সাব-রেজিস্ট্রারদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ বন্দরের শেখ কাউছার আহমেদ, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার সাজ্জাদুর রহমান, কেরানীগঞ্জ দক্ষিণের ইমরুল খোরশেদ, বরিশাল চাখারের মকসু মিয়া, ঢাকার নবাবগঞ্জের আব্দুল বাতেন, মোহাম্মদপুরের শাহীন আলম, উত্তরার লুৎফর রহমান, সূত্রাপুরের নূরুজ্জামান পলাশ প্রমুখ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অহিদুল ইসলাম (সাময়িক বরখাস্ত থাকা ঢাকা জেলার সাবেক রেজিস্ট্রার) সোমবার যুগান্তরকে বলেন, উপদেষ্টার নির্দেশে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন সব কর্মকর্তার সম্পদবিবরণী জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক চিঠি ইস্যু করা হয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের স্ত্রী ও সন্তানসহ সম্পদবিবরণী জমা দেওয়ার কথা বলা হলেও সাবরেজিস্ট্রারদের চিঠিতে স্ত্রী-সন্তান ছাড়াও পিতা-মাতা ও শ্বশুর-শাশুড়ির সম্পদবিবরণী জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ধরনের বৈষম্যের প্রতিবাদ জানাতে তারা মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গালাগাল করা এবং নেমপ্লেট ভেঙে ফেলার অভিযোগ সত্য নয়। আমাদের তরুণ সাবরেজিস্ট্রাররা স্লোগান দেওয়া শুরু করলে আমরা তাদের থামিয়ে দিই। তিনি বলেন, কথায় কথায় আমাদের দুর্নীতিবাজ বলা হয়। কিন্তু আমরা তো দুর্নীতি করতে চাই না। আমাদের প্রাপ্য সুবিধাগুলো মন্ত্রণালয় দেয় না কেন? জেলা রেজিস্ট্রারদের গাড়ি দেওয়ার কথা অনেক আগের। এখন পর্যন্ত দেয়নি। নকলনবিশ, উমেদার পিওনদের ভাতা ঠিকমতো দেওয়া হয় না। ২/৩ বছর পর অর্থছাড় করা হয়। তাহলে তারা চলবে কীভাবে? সাবরেজিস্ট্রার ও জেলা রেজিস্ট্রার অফিস পরিচালনা বাবদ কোনো বরাদ্দ নেই। এসবই তো বৈষম্য। তিনি বলেন, বালাম বই নেই। তাহলে মূল দলিল কীভাবে ফেরত দেব। বিজি প্রেস বালাম বই সরবরাহ করতে পারছে না অনেকদিন। এ খাতে প্রায় ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। অথচ মন্ত্রণালয় অনুমতি না দেওয়ায় আমরা বাইরে থেকে বালাম বই ছাপতে পারছি না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, যা ঘটে গেছে, তা রীতিমতো বিস্ময়কর। এটা তারা করতে পারে না। প্রথম কথা হলো, তারা উপদেষ্টা মহোদয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছেন এবং তারা সময়ও পেয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও এভাবে যার যার অফিস ফেলে প্রায় একশ সাবরেজিস্ট্রার মন্ত্রণালয়ে এসে যা করেছেন, তা একধরনের হামলা ছাড়া আর কিছু নয়। এটি অসদাচরণ। আমরা সিসি ক্যামেরা দেখে সবাইকে চিহ্নিত করব। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে। এত সাবরেজিস্ট্রার একসঙ্গে সচিবালয়ে কীভাবে ঢুকতে পারল, সেটিও বড় একটি প্রশ্ন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে বৈষম্যের কিছু নেই। আমরা জানতে পেরেছি সাবরেজিস্ট্রারদের অনেকে তাদের ঘুসের টাকায় স্ত্রী-সন্তানের বাইরে পিতা-মাতা এবং শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের নামে সহায়সম্পত্তি করেছেন। এজন্য একটু বিস্তৃতভাবে চাওয়া হয়েছিল। তবে তারা সেটি দিতে নারাজ হওয়ায় আমরা চিঠি সংশোধন করে সবার জন্য একই চিঠি ইস্যু করেছি। কিন্তু এরপরও তারা এভাবে মাস্তানি করতে এখানে এসেছে।