বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ
তিল ধারণের ঠাঁই নেই টিএসসিতে
চার দিনে সংগ্রহ ৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা
মাহাদী হাসান
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বন্যাকবলিতদের জন্য সংগৃহীত ত্রাণে তিল ধারণের ঠাঁই নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি)। চারদিন ধরে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের দেওয়া বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীতে পরিপূর্ণ টিএসসি। এদিকে খাদ্য, ওষুধ, কাপড়ের পাশাপাশি চারদিনে ৫ কোটি ২৩ লাখ ৩ হাজার ৬০৩ টাকা ৬৮ পয়সা নগদ অর্থও সংগ্রহ করা হয়েছে। আজ সকাল ৮টা থেকে ফের শুরু হবে এই ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রম।
দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চলমান বন্যা শুরুর পর বুধবার রাতে ত্রাণ সংগ্রহের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টিএসসিতে বিভিন্ন পণ্য সংগ্রহ করতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
তাদের ডাকে সারা দিয়ে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করতে শুরু করেন। ফলে শুক্রবার রাতে টিএসসির ক্যাফেটেরিয়া, গেমস রুম, অডিটোরিয়াম এমনকি হাঁটার রাস্তাও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠসংলগ্ন জিমনেশিয়ামে শুকনা খাবার, খেজুর, ওষুধ, স্যানিটারি ন্যাপকিন, খাবার পানিসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী রাখা শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
শনিবার সন্ধ্যায় সরেজমিন দেখা যায়, টিএসসি ও ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া ত্রাণসামগ্রীতে পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় ত্রাণ সংগ্রহ চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠসংলগ্ন জিমনেশিয়ামে। ত্রাণসামগ্রী মাঠের গ্যালারি ও জিমনেশিয়ামের ভেতরে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। তবে বিকাল পার হতেই সেখানেও জায়গা সংকট দেখা যায়। আজ সেখানে আরও ত্রাণ রাখা হবে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে ‘গণত্রাণ’ কর্মসূচিতে অনলাইন-অফলাইন মিলিয়ে ৫ কোটি ২৩ লাখ ৩ হাজার ৬০৩ টাকা ৬৮ পয়সা নগদ সংগ্রহ করা হয়েছে। অন্যদিকে এ চারদিনে বিভিন্ন খাতে মোট ব্যয় হয়েছে ৩০ লাখ ১২ হাজার ৯৭০ টাকা। রোববার সন্ধ্যায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়।
সার্বিক বিষয়ে সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (মেহেদী) যুগান্তরকে বলেন, আমরা এখন টিএসসিতে নগদ অর্থ সংগ্রহ করছি আর খাদ্যসহ অন্যান্য সামগ্রী জিমনেশিয়ামে সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমরা ত্রাণ সংগ্রহ করার পর সেগুলো প্যাকেজিংয়ের কাজও করছি। পরে বন্যাকবলিত এলাকার ডিসি ও ইউএনওর সঙ্গে যোগাযোগ করে ট্রাকে করে ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়ে দিচ্ছি।
শনিবার বিকালে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে করা প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক লুৎফর রহমান, মিডিয়া ও কমিউনিকেশন উইংয়ের প্রধান রেজওয়ান আহম্মেদ রিফাত এবং টিএসসি বুথের প্রধান সমন্বয়ক অদিতি।
তারা বলেন, মোট পাওয়া অর্থের মধ্যে টিএসসিতে নগদ ৪ কোটি ৩৯ লাখ ১ হাজার ৬৯০ টাকা, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৬২ লাখ ৯৪ হাজার ১২০ টাকা, ব্যাংকিং মাধ্যমে ২১ লাখ ৭ হাজার ৭৯৩ টাকা ৬৮ পয়সা সংগ্রহ করা হয়েছে। ব্যয়কৃত অর্থ ত্রাণসামগ্রী, জরুরি ওষুধ, ত্রাণ রাখার ব্যাগ এবং স্বেচ্ছাসেবকদের খাবার খাতে ব্যয় হয়েছে।
ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে তারা বলেন, গণত্রাণ কর্মসূচিতে পাওয়া অর্থসামগ্রী বিভিন্ন জেলায় সশরীরে এবং প্রশাসনের সাহায্যে বিতরণ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শনিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৫০ ট্রাকভর্তি ৫০ হাজারের অধিক ত্রাণসামগ্রী বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়েছে।
প্রতি ট্রাকে ৮০০-১০০০টি রিলিফ প্যাকেজ (এক পরিবার) এবং ২০-৩০ কেস পানি দিয়ে পরিপূর্ণ করা হয়। প্রতিটি প্যাকেজ একটি পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় শুকনা খাদ্য এবং ওষুধের প্যাকেজ রয়েছে।
তাছাড়া বিমানবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ৩ হাজার প্যাকেজ হেলিকপ্টারে বন্যাকবলিত দুর্গম অঞ্চলগুলোয় বণ্টন করা হয়েছে এবং ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৫০০ টাকা নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।