বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন
আহতদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে সরকার
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ২১ দিনে সংঘর্ষে আহতদের সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করবে সরকার। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার তথ্য জানিয়ে শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ছাত্র-জনতার চিকিৎসায় আপাতত বিল গ্রহণ করা যাবে না। চিকিৎসার বিল না নিতেও এতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে এসব বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্র-জনতার সব বিল সরকার বহন করবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটি পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণে আজ (রোববার) বৈঠকে বসবে।
এদিকে, সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদেরও বিনামূল্যে চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার রাজধানীর ১৫টি হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন তারা। এরই মধ্যে যারা বেসরকারি হাসপাতালে বিল পরিশোধ করেছেন তার মধ্যে শুধু মেডিসিন ফি রেখে বাকি টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
আগামী ৯০ দিনের মধ্যে দেশের স্বাস্থ্য খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনা হবে বলে জানিয়েছেনসমন্বয়ক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
শনিবার বিকালে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, সব ধরনের অনিয়ম ও অনৈতিকতা বন্ধ করতে পারলে ৯০ দিনের মধ্যে জনমুখী স্বাস্থ্য খাত উপহার দেওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেক সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালকে বলেছি, কোনো আহত ছাত্র বা নাগরিকের কাছ থেকে যেন টাকা নেওয়া না হয়। পরিচালক ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপককে বলেছি আপনাদের কোনো সার্ভিসে দুর্বলতা থাকলে, ব্লাড ব্যাংক ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নিগ্রহের শিকার না হয়। ট্রলিম্যান টাকা নিলে ছাত্র-জনতা ছেড়ে দেবে না। এর আগে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানো দরকার। সব ধরনের অনিয়ম ও অনৈতিকতা বন্ধ করতে পারলে ৯০ দিনের মধ্যে জনমুখী স্বাস্থ্য খাত উপহার দেওয়া যাবে বলে আমাদের জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এটির কাউন্ট ডাউন আজ থেকেই শুরু হচ্ছে। এ সময় তার কথার সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও বলেন, আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিটিং করেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, এখন থেকে সরকারি-বেসরকারি কোথাও সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসা নিতে টাকা লাগবে না। কিন্তু ইতোমধ্যেই আমরা দেখেছি বেশকিছু বেসরকারি হাসপাতাল শিক্ষার্থীদের থেকে চিকিৎসার নামে লাখ লাখ টাকা বিল করেছে। তাই আমরা চাইব, শুধু মেডিসিন ফি রেখে বাকি টাকাগুলো শিক্ষার্থীদের ফেরত দেওয়া হবে। তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। এ সময় উন্নয়নের নামে হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এই স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা আর হাসপাতালে চলতে দেওয়া হবে না। রাজনৈতিক বলয় ও লালফিতার দৌরাত্ম্য শেষ করা হবে।
ঢাকা মেডিকেলের অবস্থা ফিলিস্তিনের রাফা ক্যাম্পের মতো বলেও মন্তব্য করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক। তিনি জানান, ৯০ দিনের মধ্যে জনমুখী স্বাস্থ্য খাত গড়ে তোলা সম্ভব বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আশ্বাস দিয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক আরও বলেন, যদি কেউ সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদা বা বিশেষ সুবিধা চান, তাদের ধরে পুলিশে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, কোটা আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি নেই বললেই চলে। দু-একটি হাসপাতাল ছাড়া সব রোগী এখন সরকারি হাসপাতালে। কারণ, বেসরকারি হাসপাতালে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সামর্থ্য নেই। সেই জায়গা থেকে আমাদের একটি দাবি থাকবে বেসরকারি হাসপাতালে এখনো যারা রয়েছেন তাদের ফি মওকুফ করতে হবে। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা রয়েছে, বেসরকারি হাসপাতাল যদি বিল নেয়, সেটি যাতে ন্যূনতম নেয়। সে জায়গায় আমাদের দাবি হলো, সব জায়গায় যেন তা মওকুফ করা হয়। যেসব বেসরকারি হাসপাতাল টাকা নিয়েছে সেগুলো যেন ফেরত দেওয়া হয়।
এ সময় কুর্মিটোলা হাসপাতালের সহকারী পরিচালক কর্নেল ডা. সাব্বির বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে হামলায় আহত ৪৫৯ জন আন্দোলনকারীকে চিকিৎসা দিয়েছেন তারা। মারা গেছেন ১২ আন্দোলনকারী। এই হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৪৫৯ জন আহতাবস্থায় চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ভর্তি হয়েছেন ৫৪ জন। ভর্তি রোগীদের মধ্যে মেজর অপারেশন হয়েছে ২৬ জনের। বর্তমানে ১১ জন ভর্তি আছেন।
আহতদের চিকিৎসায় বিশেষায়িত ‘ডেডিকেটেড কেয়ার ইউনিট’ গঠন : এদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও বিগত সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসার লক্ষ্যে বিশেষায়িত ডেডিকেটেড কেয়ার ইউনিট গঠন করা হয়েছে। এতে আহতদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।
শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. আসাদুজ্জামানের একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আহত চিকিৎসাধীন ছাত্র-জনতার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে তিনটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এগুলো হলো-বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত ডেডিকেটেড কেয়ার ইউনিট তৈরি করে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হবে। আহত ছাত্র-জনতা বিভিন্ন ধরনের ইনজুরিতে ভুগছেন এবং তাদের এমন অনেকে রয়েছেন তাদের অস্ত্রোপচার পরবর্তী সংক্রমণের প্রবল ঝুঁকি রয়েছে। এ সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষায়িত ডেডিকেটেড কেয়ার ইউনিটগুলোতে শুধু বিশেষায়িত কনসালট্যান্ট বা চিকিৎসক, নার্স এবং রোগীর বৈধ প্রতিনিধি ছাড়া অন্য কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এসব বিশেষায়িত ডেডিকেটেড কেয়ার ইউনিটগুলোতে সংশ্লিষ্ট পরিচালক সার্বক্ষণিক নজরদারি করবেন।