Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বিএনপির পদ স্থগিতের পর বেপরোয়া শিরিন

Icon

আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিএনপির পদ স্থগিতের পর বেপরোয়া শিরিন

ছবি: সংগৃহীত

দলীয় পদ স্থগিতের পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বরিশালের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি বিএনপি নেত্রী বিলকিস জাহান শিরিন। গণমাধ্যমে তথ্য দেওয়ার অভিযোগে তার উপস্থিতিতেই প্রতিবেশী কয়েকটি পরিবারকে হত্যার হুমকি দিয়েছে ক্যাডাররা। খবর পেয়ে সেনা সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এদিকে পুকুরে ফেলা বালি অপসারণে পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া নির্দেশও মানছেন না শিরিন ও তার পরিবার।

দেশব্যাপী অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগে দখলের জন্য ১০ কোটি টাকা মূল্যের পুকুর পৈতৃক সম্পত্তি দাবি করে সেখানে বালি ফেলেছিল শিরিনের পরিবার। তার এ দাবি অবশ্য মানতে নারাজ স্থানীয়রা। পর্তুগিজ ব্যবসায়ী এম.টি ব্রাউন সেটি জনগণের ব্যবহারের জন্য দান করে গেছেন বলে তারা জানিয়েছেন। এ সংক্রান্ত দলিলও তাদের কাছে রয়েছে। এদিকে পুকুরে ফেলা বালি অপসারণ না করায় শিরিনসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনেই শুরু হয় শিরিন ও তার পরিবারের পুকুর দখল মিশন। রাতের অন্ধকারে নগরের ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় থাকা পুকুরে ট্রাক ভরে বালি এনে তারা ভরাট করতে শুরু করেন। বিষয়টি জানতে পেরে সেখানে যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। তাদের বাধার মুখে কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হলেও ফের শুরু হয় পুকুর ভরাট। শিরিনের ছোট ভাই শহিদুল ইসলাম শামিম দাঁড়িয়ে থেকে ভরাট কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করেন।

নাম-পরিচয় না প্রকাশের শর্তে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, ‘গত বছরের মে মাসেও একবার ভরাট শুরু করেছিলেন শিরিন ও তার পরিবার। সে সময় বাধা দেয় পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন। খবর পেয়ে আসেন সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। জনব্যবহার্যে দান করা পুকুর ভরাটের সত্যতা পেয়ে নিষেধাজ্ঞার নোটিশ লাগায় সিটি করপোরেশন। একই সঙ্গে শিরিন ও তার ভাই শামিমসহ ৭ জনকে নোটিশ দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। গত বছরের জুন মাসে দেওয়া ওই নোটিশে পুকুরে ফেলা বালি অপসারণ এবং তা না করলে মামলা করা হবে বলা হয় ওই নোটিশে। তবে গেল বছর অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই খোকন সেরনিয়াবাত মেয়র হওয়ার পর পালটে যায় পরিস্থিতি।

বিএনপি নেত্রী হয়েও খোকন পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগে ছায়া ক্ষমতা পেয়ে যান শিরিন। তার ভাই শামিমসহ পুরো পরিবার ওই নির্বাচনে কাজ করেন নৌকার পক্ষে। ফলে মামলার বিষয়ে আর এগোতে পারেনি পরিবেশ অধিদপ্তর।’

তবে হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী চলা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগে শিরিন পরিবারের এই পুকুর দখল চেষ্টার খবর দৈনিক যুগান্তরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে অ্যাকশনে যায় বিএনপি।

কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদসহ সব পদ-পদবি স্থগিত করা হয় শিরিনের। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রমেও শিরিনকে নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু পদ স্থগিত হওয়ার পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন শিরিন। গণমাধ্যমে তথ্য দেওয়ার সন্দেহে ক্যাডার নিয়ে তিনি চড়াও হন পুকুরসংলগ্ন বাসিন্দাদের ওপর। তার সামনেই প্রতিবেশীদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও হত্যার হুমকি দিয়েছে ক্যাডাররা। একপর্যায়ে বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করলে ভীত হয়ে সেনাক্যাম্পে খবর দেয় এলাকাবাসী। খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে যায় সেনা সদস্যরা। তাদের দেখে পালিয়ে যায় সবাই। সেনা সদস্যদের কাছে নিরাপত্তাহীনতা ও হুমকির মুখে থাকার অভিযোগ করে স্থানীয়রা।

পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশালের সহকারী পরিচালক কামাল মেহেদী বলেন, ‘পুকুর ভরাটের খবর পেয়ে আমরা দ্রুত সেখানে যাই। কঠিনভাবে নির্দেশ দেওয়া হয় ভরাট বন্ধের। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে, পুকুরটির মালিকানা তাদের, তবুও ভরাট প্রশ্নে সরকারের সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনাপত্তিপত্র ও জেলা পর্যায়ে থাকা কমিটির অনুমোদন ছাড়া কেউ পুকুর-জলাশয় ভরাট করতে পারবে না। এক্ষেত্রে এসব মানা হয়নি। আমরা বিলকিস জাহান শিরিনসহ মোট ৭ জনকে নোটিশ দিয়েছি। নোটিশে ১৪ আগস্টের মধ্যে পুকুরে ফেলা বালি অপসারণ করতে বলা হয়েছে। যতদূর জানি সেখানে বালি অপসারণ শুরু হয়নি। বুধবার পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এর মধ্যে বালি অপসারণ না হলে মামলা করা হবে তাদের বিরুদ্ধে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার বরিশালের সমন্বয়কারী লিংকন বাইন বলেন, ‘গেল বছর যখন পুকুর ভরাট শুরু হয়, তখন বাধা দিয়েছি। এবারও সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি দেখেছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের যৌথ বাধার মুখে ভরাট ও দখল প্রক্রিয়া বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর যাতে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেয়, সেদিকে খেয়াল রাখছি আমরা।’

জেলা ও মহানগর বিএনপি নেতাদের বিস্ময় : দলীয় পদ স্থগিত করে দেওয়া নির্দেশের পর তা প্রত্যাহারে ছোটাছুটি করা শিরিন এরই মধ্যে কিছু অপ্রচলিত সংবাদমাধ্যমে তার পক্ষে সংবাদ প্রকাশ করিয়েছেন। এসব সংবাদে বরিশাল জেলা বিএনপির (দক্ষিণ) আহ্বায়ক সাবেক এমপি আবুল হোসেন, সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহিন, মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক এবং বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলামের কথিত কিছু বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। এরা সবাই শিরিনের পক্ষে বলেছেন-চলছে এমনই প্রচার।

তবে এ রকম কোনো বক্তব্য দেননি বলে জানিয়েছেন উল্লেখিত বিএনপি নেতারা। আবুল হোসেন বলেন, ‘শিরিনের পক্ষে আমি সংবাদমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দেইনি। যারা এটা করেছে তারা ঠিক করেনি।’ মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তে পদ-পদবি হারানো কারও পক্ষে বক্তব্য দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।’ আবুল কালাম শাহিন বলেন, ‘এই ইস্যুতে কোনো সংবাদকর্মী আমার কোনো বক্তব্য নেয়নি। আমার নাম দিয়ে কেউ যদি কিছু বলে থাকে তা সত্য নয়।’ প্রায় একই কথা বলেন রফিকুল ইসলাম।

পুরো বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, ‘বালু ভরাটের সঙ্গে আমি জড়িত নই। তাছাড়া ওটা আমার দাদার সম্পত্তি। ওই জমির খাজনা আমরা দিই। পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে যা ছাপা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি ব্যক্তি আক্রোশ এবং নিজ দলের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রের শিকার।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম