Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ড. ইউনূস 

ধর্ম নয়, অধিকার নিশ্চিত হোক মানুষ হিসাবে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ধর্ম নয়, অধিকার নিশ্চিত হোক মানুষ হিসাবে

ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক যে আকাক্সক্ষা সেখানে আমরা মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ হিসাবে নয়, মানুষ হিসাবে আমাদের অধিকারগুলো নিশ্চিত হোক। সব সমস্যার গোড়া হলো আমরা যত প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন করেছি, সবকিছু পচে গেছে। এ কারণে এই গোলমাল হচ্ছে। ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে মঙ্গলবার তিনি এসব কথা বলেন। এর পর নিজ কার্যালয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, ‘সবার অধিকার সমান। এ দেশের মানুষ হিসাবে অধিকার আদায়ে বিভক্ত হয়ে নয়, আমরা এক মানুষ, এক অধিকার। এর মধ্যে কোনো পার্থক্য করবেন না। আমাদের একটু সাহায্য করুন। ধৈর্য ধরেন, কিছু করতে পারলাম কী পারলাম না, সেটা পরে বিচার করবেন। যদি না পারি আমাদের দোষ দিয়েন।’ 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ন্যায়বিচার হলে কে বিচার পাবে না বলেন? আমি কী দেখতেছি, এটা কোন জাতের? কোন ধরনের? তা কি আইনে বলা আছে? ওই সম্প্রদায়ের হলে ওই কোর্টে যাবে, ওই সম্প্রদায় হলে ওই আদালতে যাবে? এ রকম নয়। কারণ আইন একটা। ফলে কার সাধ্য আছে বিভেদ করে। এটা হতে পারে না। তিনি বলেন, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেটা পেলে আমরা বাক-স্বাধীনতা পাব। প্রতিষ্ঠা করতে হবে মানবাধিকার। এটা হলো আমাদের মূল লক্ষ্য। আপনারা যদি টেনে টেনে নিয়ে আসেন-আমি অমুক, আমি তমুক। তাহলে আবার পুরোনো খেলায় চলে গেলেন। 

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস বলেন, আমাদের শিকার করার জন্য যারা বসে আছে, তারা শিকার করবে। আপনারা বলুন, আপনারা মানুষ, বাংলাদেশের মানুষ। আমার সাংবিধানিক অধিকার আমাকে দিতে হবে। সব সরকারের কাছে এটাই চাইবেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা ক্ষোভের মধ্যে চলে যাইয়েন না। ক্ষোভের মধ্যে গেলেই বিভিন্ন রকম মারামারি লেগে যায়। একত্রে আসেন। এক আইন। বলেন, আমাদের আইনের অধিকার দিতে হবে। 

ড. ইউনূস বলেন, আজকে আপনারা যেটা বলেছেন, ‘আইনের অধিকার পাই না। বিচার পাই না। এটাই হলো আসল জিনিস।’ 

আমরা প্রাতিষ্ঠানিক যে আয়োজন করেছি, এটা বায়াস্ট (পক্ষপাত) একটা আয়োজন। একটা খুঁড়তে আরম্ভ করবেন, তারপর তারা মজা পেয়ে যাবে। ওই মজার খেলাতে আমাদের নিয়ে যাবেন না।’ 

গ্রামীণ ব্যাংকের কথা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমার সঙ্গে অনেকেরই পরিচয় আছে। আজকে নতুন পরিচয় নয়। আমরা যখন আমাদের গ্রামীণ ব্যাংক শুরু করি, তখন আমরা গরিব মেয়েদের নিয়ে কাজ শুরু করি। কেউ বলেছেন, মেয়ে মুসলমান না, যাওয়া যাবে না। আমরা বলেছি, তার টাকা দরকার আছে। টাকা দিলে দুটো মুরগি কিনবে, ডিম পাড়বে, দুটো খেতে পারবে। পাশের পাড়া হলো হিন্দুপাড়া, আপনি হিন্দুপাড়ায় যাবেন? না হিন্দুপাড়ায় কেউ যায়নি। আপনি কেন যাবেন? আমি বললাম, আমি তো হিন্দুপাড়া, মুসলমানপাড়ার জন্য আসিনি। গরিব মেয়ের জন্য এসেছি। গ্রামীণ ব্যাংকের ইতিহাসে হিন্দুপাড়া বলে কাউকে বাদ দিয়েছি এমন তথ্য পাবেন না। 

যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংখ্যালঘু নেতাদের বৈঠক : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। বৈঠকে আশ্বাস পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার বেলা ৩টায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন যমুনায় এ বৈঠক হয়। 

বৈঠকে বিভিন্ন সংগঠনের ৪০ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ৫ আগস্টের পর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চলেছে, যা এখনো পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় অব্যাহত। 

এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজকের বৈঠক। প্রধান উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন, তবে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে মাঠে থাকবেন বলে জানিয়েছেন রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে আমরা মাঠে থাকব। নানা সময়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু তা পূরণ হয় না। তাই পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সে জন্য মাঠে থাকব।’ 

রানা দাশগুপ্ত আরও বলেন, আমরা শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে তিনদিনের সরকারি ছুটি দাবি করেছি। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে একদিন সরকারি ছুটি দাবি করেছি। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ইস্টার সানডে উপলক্ষ্যে আমরা একদিনের ছুটি দাবি করেছি। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, ওই সময়ে তো কোনো সরকার ছিল না, সেটাকে নিবৃত্ত করার মতো কোনো ম্যাকানিজম ছিল না। তারা শান্তিশৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য চেষ্টা করছেন। ইসকনের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দন দাস ব্রহ্মচারী বলেন, আমরা আশাবাদী। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা তার কথা বিশ্বাস করি।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম