থানায় পুলিশ যোগ দিলেও শুরু হয়নি মাঠের কার্যক্রম
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফের থানায় যোগ দিলেও এখনো পুরোপুরিভাবে মাঠের কাজ শুরু করতে পারেনি পুলিশ সদস্যরা। বাহিনীটির যেসব সদস্য থানায় যোগ দিয়েছেন, তারাও নৈমিত্তিক কাজগুলোই শুরু করছেন। কিছু থানায় কেবল সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নেওয়া ও অভ্যন্তরীণ কাজ চলছে। এসব থানায় পুলিশ সদস্যরা হাজিরা দিয়ে চলে যাওয়ায় বেশিরভাগ সময় সুনসান নীরবতা থাকছে।
আবার বেশ কয়েকটি থানায় একজন পুলিশ সদস্যও এখন পর্যন্ত যোগ দেননি। সেখানে কাজ শুরু করার মতো পরিবেশও নেই। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত থানায় সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যরা পাহারা দিচ্ছেন। এদিকে, সোমবার পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশে ৬২৮টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে ১১টি থানা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেগুলোর কার্যক্রম শুরু করতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।
জানা যায়, ৮ আগস্ট থেকে পুলিশ সদর দপ্তর ও ডিএমপির (ঢাকা মহানগর পুলিশ) কার্যালয় খোলা হয়। তবে সেদিন দুটি কার্যালয়ে পুলিশ সদস্যদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। এর মধ্যে নবনিযুক্ত আইজিপি দায়িত্ব নেওয়ার পর পুলিশ সদস্যদের নিজ নিজ কর্মস্থলে ফেরার জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে অধিকাংশ সদস্য কাজে ফেরেননি। রোববার পুলিশ সদস্যরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিলে সোমবার থেকে থানার পাশাপাশি সড়কের শৃঙ্খলায় পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি বেড়েছে।
বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য যুগান্তরকে বলেন, পুলিশের গুলিতে অনেক সাধারণ মানুষের মৃত্যু হওয়ায় জনগণের মধ্যে এখনো ক্ষোভ রয়েছে। এ কারণে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা কাজে যেতে ভয় পাচ্ছে। আবার অনেকের পরিবারও চায় না, পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত হওয়া ছাড়া কেউ কাজে যোগ দিক। তবে দ্রুত ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন কর্মীদের রদবদল করা হলে সবাই ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় যাবে। নতুন জায়গায় গেলে কেউ কাউকে চিনবে না বিধায় ক্ষোভটাও কম থাকবে।
পুলিশ সদর দপ্তর সোমবার এক খুদেবার্তায় জানায়, সারা দেশের মহানগর এলাকার ১১০টি থানার মধ্যে ১০৮টি ও জেলার ৫২৯টি থানার মধ্যে ৫২০টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১১টি থানা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ও প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস্, আসবাবপত্রসহ অন্য সব সরঞ্জামাদি ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ায় এসব থানার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে এই ১১টি থানার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে। এর আগে পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, রোববার পর্যন্ত সারা দেশে ৫৯৯টি থানা ও শনিবার পর্যন্ত ৫৩৮টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়। বেশিরভাগ থানায় সীমিত পরিসরে কাজ চলছে।
সোমবার শাহবাগ থানায় দেখা যায়, থানা প্রাঙ্গণের নিরাপত্তায় রয়েছেন আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা। থানাটিতে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নেওয়াসহ দৈনন্দিন কাজ করা হচ্ছে। রমনা থানায় গিয়েও দেখা যায় একই অবস্থা। থানার ভেতরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। শাহ আলী থানায় গিয়ে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে পাওয়া গেছে। তারা থানায় এসে হাজিরা দিলেও কাজকর্ম তেমন শুরু করেননি। কাফরুল থানায় গিয়ে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর সদস্য পাহারা দিচ্ছেন। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য হাজির হলেও কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। যাত্রাবাড়ী থানায় গিয়ে দেখা যায়, গেট বাইরে থেকে বন্ধ। শিক্ষার্থী ও সেনা সদস্যরা গেটে পাহারা দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা কাউকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না। থানার ভেতরে এখনো ধ্বংস হওয়া গাড়িগুলো রয়ে গেছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। কদমতলী থানার অবস্থাও আগের মতো। এখনো থানায় কোনো পুলিশ সদস্য হাজির হয়নি। সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যরা পাহারা দিচ্ছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর যুগান্তরকে বলেন, যেগুলো কম ক্ষতিগ্রস্ত এমন থানায় স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে মামলা-জিডি নেওয়া, আসামি গ্রেফতার, আদালতে পাঠানো ও মামলার তদন্তসহ অন্য কাজও চলছে।