আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ধাওয়া-পালটাধাওয়া
‘একদফা’র বিরুদ্ধে রাজপথে আ.লীগ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘একদফা’ রুখে দিতে রাজপথে সরব ছিল আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা ঢাকাসহ সারা দেশেই গড়ে তুলেছিলেন প্রতিরোধ। ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘শেখ হাসিনা ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘জামায়াত-শিবির রাজাকার এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়া’ নানা স্লোগানে মুখর ছিল রাজপথ। এ সময় বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ধাওয়া-পালটাধাওয়া এবং দফায় দফায় সংঘাত হয়। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনেও ঘটে এ ধরনের ঘটনা। তবে দলীয় নেতাকর্মীদের অবস্থান ও ধাওয়ায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় তারা। রোববার সরেজমিন ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ও ধানমন্ডির কার্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, রোববার সকাল থেকে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিতে শুরু করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও মৎস্যজীবী লীগের নেতাকর্মীরা। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আসতে থাকে তারা। সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি। জয় বাংলা স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে গুলিস্তান ও তার আশপাশ এলাকা। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দিকে আসার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। তারা গোলাপ শাহ মাজারের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে কার্যালয়ের দিকে আসতে থাকে। এসময় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন আওয়ামী লীগের উপস্থিত নেতাকর্মীরা। তাদের প্রতিরোধের মুখে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় হামলাকারীরা। পরে গোলাপ শাহ মাজার, পাতাল মার্কেট, ফুলবাড়িয়া বিআরটিসি কাউন্টার, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম গেট, দোয়েল চত্বর, জিরো পয়েন্ট, সচিবালয় গেট এবং পল্টন এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতাকর্মীরা।
দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, সাদ্দাম হোসেন ও শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা ও মহিলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
এদিন রাজধানীর ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সকাল থেকেই অবস্থান নেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা। কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নেন দল ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেখানেও কয়েক দফা হামলার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় কার্যালয়ের বাইরে উপস্থিত নেতারা তাদের প্রতিহত করেন। পরে ঝিগাতলা এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পালটাপালটি ধাওয়া-পালটাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ পাওয়া যায়।
এছাড়াও ধানম?ন্ডি ৩২ নম্বর, কলাবাগান, পান্থপথ, মোহাম্মদপুর, মিরপুর-১০ নম্বর, গাবতলী, উত্তরা, ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ি ও শনিরআখড়াসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে স্ব-স্ব এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন দলীয় এবং স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যরা।
রোববার সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। এতে উপস্থিত ছিলেন মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল এমপি, ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ-সদস্য ইলিয়াস মোল্লা, ঢাকা-১৫ আসনের সংসদ-সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার প্রমুখ। সেখানেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেয়।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ, সাইনবোর্ড ও ডেমরার বিভিন্ন এলাকায় লাঠিসোঁটা নিয়ে সকাল থেকে অবস্থান নিয়েছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। সব অবস্থান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন ঢাকা-৫ আসনের সংসদ-সদস্য মশিউর রহমান মোল্লা সজল। ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু ও সাধারণ সম্পাদক হাজী আবুল হোসেনের নেতৃত্বে কাপ্তানবাজার ও তার আশপাশ এলাকায় অবস্থান নেন দলটির স্থানীয় নেতারা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম আশরাফ তালুকদার দুপুরে নেতাকর্মীদের নিয়ে মিছিল করেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদের নেতৃত্বে মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে নেতাকর্মীরা।