Logo
Logo
×

শেষ পাতা

গ্রেফতারের তালিকায় প্রতিবন্ধী দিনমজুরও

Icon

আসাদুল্লা লায়ন

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গ্রেফতারের তালিকায় প্রতিবন্ধী দিনমজুরও

ফাইল ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় জড়িতদের গ্রেফতারের নামে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। সাধারণ মানুষকে আটক করে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের মতো সহিংসতার মামলায় গ্রেফতার দেখাচ্ছে। এমনকি সহিংসতায় জড়ানোর কোনো সক্ষমতা নেই এমন শারীরিক প্রতিবন্ধীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, রেহাই পাচ্ছে না দিনমজুর, পথচারী কিংবা গুলিবিদ্ধ সাধারণ শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকও। এতে রাজধানীজুড়ে পুলিশি হয়রানির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন থানায় পুলিশ ও সরকার সমর্থিত রাজনৈতিক দলের নেতারা মামলা করেছেন। পুলিশের সংশ্লিষ্ট ইউনিটকে এসব মামলায় অভিযুক্ত ও জড়িতদের প্রমাণ সাপেক্ষে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে রাজধানীর থানাগুলোতে অসংখ্য সাধারণ নাগরিককে গ্রেফতারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আটককৃতদের একজনের কাছে থেকে অর্থ আদায় করা হয়েছে। অন্যদের সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে করা ওইসব মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশকে ম্যানেজ করে মুক্ত হওয়া কেউই গণমাধ্যমে কথা বলতে আগ্রহী নন।

পুলিশ বলছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের আড়ালে সহিংসতা ছড়ানো ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। যারা সহিংসতায় জাড়িয়েছেন, বিভিন্ন স্থাপনা ও পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছেন। সাধারণ মানুষ কিংবা আন্দোলনে শান্তিপূর্ণভাবে অংশ নেওয়া কোন শিক্ষার্থীকেও গ্রেফতার কিংবা হয়রানি করা হচ্ছে না। সহিংসতা ছড়ানো ব্যক্তিদের গ্রেফতার করতে গিয়ে যাতে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা কোনো হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাখালপাড়া এলাকার বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী আশিক (১৫) গ্রেফতার হয়েছেন। শনিবার বিকালে আশিকের মা মোর্শেদা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ২২ জুলাই তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ। পরে তাকে তেজগাঁও থানায় দিয়ে যায় জানতে পেরে সেখানে গিয়ে শুনি তাকে কোর্টে চালান করা হয়েছে। সে (আশিক) কোথায় আছে কেমন আছে এখনো জানতে পারিনি। আমার প্রতিবন্ধী ছেলে কোনো সহিংসতায় জড়াতে পারে না। তার সাথে অন্যায় করা হয়েছে। আমি কার কাছে বিচার দেব! রাজধানীর খিলগাঁও থেকে আটক করা হয় এক দিনমজুরকে। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে সাইফুলের মা বলেন, গত সোমবার (২২ জুলাই) রাত ২টায় পুলিশ বাসায় এতে ঘুমন্ত ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে মঙ্গলবার তাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনি। এজন্য থানার পুলিশকে দশ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। কিন্তু আমার ছেলের তো কোনো দোষ ছিল না। দৈনিক মজুরিতে কাজ করে। সে রাজনীতি-আন্দোলন এসব বোঝে না।

উত্তরার মাইলস্টোন কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী আলিফ হাসান রাহাত (১৮)। ১৮ জুলাই পরীক্ষার রুটিন সংগ্রহ করতে এক বন্ধুর বাসায় যান। সেখান থেকে ফেরার পথে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট ডান চোখে বিদ্ধ হয়। তাৎক্ষণিক উত্তরার একটি হাসপাতালে তাকে নেওয়া হয়। সেখান থেকে আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতালে নিতে বলা হয়। ২০ জুলাই তাকে নিয়ে বাবা রাইজ উদ্দিন। কিন্তু পথে তাদের অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেওয়া উত্তরা পূর্ব থানার পুলিশ। দুজনকেই আটক করে নেওয়া হয় থানায়। পরে ওইদিন রাত ৩টায় বাবাকে ছেড়ে দিলেও গুরুতর আহত রাহাতকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

রাহাতের বাবা রাইজ উদ্দিন শনিবার অভিযোগ করে বলেন, ওইদিনের পর ছেলের সঙ্গে একবারও দেখা করতে পারিনি। তাকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে রাখা হয়েছে। হাসপাতালে যাওয়ার পথে পুলিশ আটকের পর কত কাকুতিমিনতি করলাম আমার আহত ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য কিন্তু তারা খুব খারাপ আচরণ করেছে আমাদের সঙ্গে। সে (রাহাত) আন্দোলনে অংশ না নিয়েও গুলিবিদ্ধ হয়েছে আবার পুলিশের হয়রানিতে পড়েই কারাগারে বন্দি আছে। সেখানে কী পরিস্থিতি, কেমন আছে জানি না বলে কেঁদে ওঠেন।

এদিকে শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসান আরাফাত আক্কাস (১৫) গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। তার বাবা জয়দর আলী বলেন, আমার ছেলে কোনো আন্দোলনে যায়নি। সে এসব সহিংসতা বা রাজনীতির কিছুই বুঝে না। তাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। এমনকি আটকের পর থানায় তাকে দেখতে দেওয়া হয়নি। তারা এমন আচরণ করেছে যে আমার ছেলে সন্ত্রাসী।

এভাবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ মানুষকে তুলে নিয়ে অর্থ দাবি করছে থানা পুলিশ। না দিলে সহিংসতার মামলায় গ্রেফতার দেখাচ্ছেন বলে অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আন্দোলনের নামে যারা সহিংসতা ছড়িয়েছে শুধু তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ করছে পুলিশ। শান্তিপূর্ণভাবে অংশ নেওয়া কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার মতো সহিংসতায় যারা জড়িয়েছেন শুধু তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। সহিংসতায় জড়িতদের গ্রেফতারের নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম