ঐক্যবদ্ধ থাকার শপথ
‘দ্বিধাবিভক্ত’ কর্মীদের মাঠে চায় আ.লীগ
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
হাসিবুল হাসান
প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
![‘দ্বিধাবিভক্ত’ কর্মীদের মাঠে চায় আ.লীগ](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2024/07/25/image-829992-1721859261.jpg)
সহিংসতার বিরুদ্ধে মাঠে প্রতিরোধ গড়তে না পারাকে নিজেদের সাংগঠনিক ব্যর্থতা হিসাবে দেখছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। নিজেদের অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তির কারণে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামা সম্ভব হয়নি বলে মনে করেন তারা। এছাড়া কমিটি গঠনে ত্যাগী এবং দুর্দিনের পরীক্ষিত ও যোগ্যদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে সুবিধাবাদীদের জায়গা দেওয়াকেও দায়ী করেছেন। তারা বলেন, দুর্দিনে সাধারণ কর্মীরাই ঝুঁকি নেয়। সুবিধাবাদী নেতাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। বুধবার আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ঢাকার তৃণমূল নেতা ও কাউন্সিলররা এসব অভিযোগ করেন। এতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের চারটি সংসদীয় আসনের তিন সংসদ সদস্য, দুই সিটির কাউন্সিলর এবং দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভাপতিত্ব করেন। দুপুরে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রুদ্ধদ্বার এ সভার শুরুতে নেতাকর্মীদের সবার বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। সবার বক্তব্য শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, সহিংসতার সময় নেতাকর্মীদের মাঠে রাখতে না পারাটাই দলীয় সাংগঠনিক ব্যর্থতা। উত্তরার দিকে গ্রুপিং রাজনীতি চলছে, যাত্রাবাড়ীর দিকে গ্রুপিংয়ের রাজনীতি চলছে, যে কারণে সেখানে কেউ রুখে দাঁড়াতে পারেনি। গ্রুপিং রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। দলের মধ্যে যে কোন্দল রয়েছে তা মিটিয়ে ফেলতে হবে। সভার শেষে উপস্থিত নেতাকর্মীদের শপথ করান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আপনারা আজ প্রতিজ্ঞতা করে যান, নিজেরা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন কিনা? উত্তরে দলের নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, মুক্তিয্দ্ধুবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, কৃষি সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, কেন্দ্রীয় সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনোয়ার হোসেন, আনিসুর রহমান, পারভিন জামান কল্পনা, সানজিদা খানম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা-৪ আসনের এমপি মশিউর রহমান সজল, ঢাকা-৫ আসনের এমপি ড. আওলাদ হোসেন, ঢাকা-১৮ আসনের এমপি খসরু চৌধুরী প্রমুখ।
সভায় ওবায়দুল কাদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে গত কয়েকদিনের চিত্র ও সাংগঠনিক পরিস্থিতি তুলে ধরার আহ্বান করেন। এ সময় দক্ষিণখান থানা আওয়ামী লীগের নেতা একেএম মাসুদুজ্জামান মিঠু, কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিক, রুহুল আমিন, ইসহাক মিয়া, আফসার আলী, আনিসুর রহমান নাঈম, আবুল কালাম আজাদ অনু, শফিকুল ইসলাম খান দিলু, ডেমরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবু, মাতুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা শান্তনু খান শান্তসহ প্রায় ২০ জন নেতা ও কাউন্সিলর বক্তৃতা করেন।
থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা এবং দলীয় কাউন্সিলরদের বক্তব্যে নিজেদের অসহায়ত্ব ও দলের অপ্রত্যাশিত চিত্র ফুটে ওঠে। সুনির্দিষ্ট নাম উল্লেখ করে সমালোচনা না করলেও কোথাও বর্তমান এমপি ও কাউন্সিলর এবং কোথাও সাবেক এমপিদের বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়। এসব অভিযোগের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, কে কোথায় কী করেছেন আমাদের সব জানান। এখন সব বিভেদ ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, একেএম মাসুদুজ্জামান মিঠু তার বক্তব্যে বলেন, আন্দোলন শুরু থেকেই আমরা মাঠে ছিলাম। কিন্তু অনেক নেতা পদ-পদবি নিয়ে বাড়িতে বসে ছিলেন। তাদের আত্মীয়স্বজন বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারা এখন আত্মীয়স্বজনদের বাঁচাতে মরিয়া। এসব ব্যক্তির কারণে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নিরাপদ নন। আজকে যারা শেখ হাসিনাকে অনিরাপদ রেখে নিজেকে নিরাপদ রাখতে চান, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। আমাদের অস্তিত্ব হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি আমাদের অক্সিজেন। অক্সিজেন ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচতে পারে না, তেমিন শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগও বাঁচবে না। তিনি বলেন, নেতাদের যখন বেশি টাকা হয়ে যায়, তখন তারা টাকা বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মাঠে আসেন না। তৃণমূল কর্মীরাই সব দুর্যোগ-দুর্বিপাকে মাঠে থাকে।
ঢাকা-১৮ আসনের এক থানার নেতা বলেন, এখন টাকার বিনিময়ে কমিটি করা হচ্ছে। টাকা দিয়ে যারা পদ-পদবি নেবে তারা কখনো দলের দুর্দিনে মাঠে থাকবে না। টাকার বিনিময়ে পদ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। এ সময় উপস্থিত অধিকাংশ নেতাকর্মীই টাকার বিনিময়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের থানা-ওয়ার্ডে কমিটি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাছে। ডেমরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবু, মাতুয়াইল ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শান্তনু খান শান্ত বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনের শুরুতেই ঢাকা-৫ আসনের এমপি মশিউর রহমান মোল্লা সজলের নেতৃত্বে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। ডেমরাকে নিরাপদ রাখা গেলেও শনির আখড়া এলাকায় বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডারদের কারণে দু-একদিন আমরা পিছু হটতে বাধ্য হই। পরে আবার তাদের পরাস্ত করি।
দক্ষিণের ৬৩ নম্বরের কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম দিলু কার্যালয় ভাঙার বর্ণনা করেন। এ সময় কিছু নেতার নিষ্ক্রিয়তা ও সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তোলেন। ঢাকা দক্ষিণের আরেক নেতা বলেন, গত কয়েক বছরে অনেক নেতা টাকার মালিক হয়েছেন। তারা মাঠে নামেননি। কর্মীরা ঠিকই ঝুঁকি নিয়েছে। দুর্দিনে কর্মীরাই ঝুঁকি নেয়। নেতাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার গায়ে তেলজমা নেতারা কর্মীদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেন।
এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ বেশ কিছু এলাকা চিহ্নিত করেছে আওয়ামী লীগ। এসব এলাকার সংসদ সদস্য, দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও দলীয় কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠকের অংশ হিসাবেই এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুর, গুলশান ও মিরপুর এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবেন ওবায়দুল কাদের। এছাড়া কাল শুক্রবার বিকাল ৩টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ।
আহত নেতাকর্মীদের দেখতে হাসপাতালে নাছিম-কামাল : এদিকে আহত নেতাদের দেখতে বিভিন্ন হাসপাতালে যান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাকসুদুর রহমান মাকসুদ ও চট্টগ্রামের এক যুবলীগ নেতা, যিনি বর্তমানেও আইসিসিইউতে রয়েছেন, তাদের দেখতে যান। এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নেতাকর্মীদের দেখতে যান। দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির আজ নেতাকর্মীদের দেখতে হাসপাতালে যাবেন।