‘কোটা সংস্কারকে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিপক্ষ করার চেষ্টা হচ্ছে’
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি সংগৃহীত
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং সংগঠন। সোমবার তারা বিবৃতিতে উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় কারানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে অপমান-অপদস্থ করছে।
আন্দোলনের কোনো কোনো পর্যায়ে কেউ কেউ এমন আচরণ করছেন, যা মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির প্রতিনিধিত্ব করছে। এমন আচরণে উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিএফইউজে, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, ২৪ বিশিষ্ট নাগরিক, বিএমএ, অভিনয় শিল্পীসংঘ।
বিএফইউজে : সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক ও মহাসচিব দীপ আজাদ এক বিবৃতিতে বলেন, কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার করার দাবিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন এই যৌক্তিক বিষয়টিকে পূর্ণতা দিতে আন্দোলনকারী, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করানোর চেষ্টা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আন্দোলনের কোনো কোনো পর্যায়ে কেউ কেউ এমন আচরণ করছেন, যা মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির প্রতিনিধিত্ব করছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এটি এই আন্দোলনের মূল সুর নয়। কিন্তু কোনো বিশেষ মহল এই আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির পক্ষে, বাংলাদেশবিরোধী বা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাবিরোধী পথে পরিচালনা করার চেষ্টা করছে কি না এই প্রশ্নও এখন সামনে আসছে। আমরা এমন সব আচরণের নিন্দা জানাই। নেতারা বলেন, সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজাকারের সমর্থনে স্লোগান দেওয়াকে আমরা ধিক্কার জানাই। এ ঘটনায় আমরা বিস্মিত। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি : একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, কোটা পদ্ধতি বাতিলের আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে অপমান-অপদস্থ করছে। শুধু তাই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নিজেদের রাজাকার দাবি করার যে উগ্র বাসনার কুৎসিত বহিঃপ্রকাশ দেখিয়েছে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে আইনিব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারা মুক্তিযুদ্ধ ও একাত্তরের বীর শহিদদের সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য দিচ্ছে, নিজেদের রাজাকার বলে স্লোগান দিচ্ছে, তারা রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ করছে।
ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন : ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ এবং মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোল্লা মোহাম্মাদ আবু কাওছার এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কিছু কিছু শিক্ষার্থী ‘আমরা রাজাকার’ বলে স্লোগান দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আঘাত করেছে। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এই ধরনের ঘৃণ্য তৎপরতার প্রতিবাদ জানাই। আমরা বিশ্বাস করি সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই রাজাকার আলবদর শব্দকে ঘৃণা করে এবং মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী যে কোনো যড়যন্ত্র বানচাল করে দেবে।
২৪ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি : আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের স্লোগানের নিন্দা জানিয়েছেন দেশের ২৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক। বিবৃতিতে তারা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের মিছিল থেকে ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ ও ‘আমরা সবাই রাজাকার’ স্লোগান শুনে আমরা খুবই বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার আদর্শকে পরিত্যাগ করে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে বহন করার অধিকার কারও নেই বলে বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করেন। এতে বলা হয়, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের একাংশের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এই ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানাই। আশা করি, তারা ভুল বুঝতে পারবেন ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দাবি আদায়ের পথে পরিচালিত হবেন। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আছেন অধ্যাপক অনুপম সেন, সৈয়দ হাসান ইমাম, ফেরদৌসী মজুমদার, সুজেয় শ্যাম, সারওয়ার আলী, আবেদ খান, কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ আলী, মামুনুর রশীদ, মফিদুল হক, শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, অধ্যাপক কামরুল হাসান খান, অধ্যাপক শফি আহমেদ, অধ্যাপক মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, ম. হামিদ, রাইসুল ইসলাম আসাদ, গোলাম কুদ্দুছ, শ্যামল দত্ত, লাকী ইনাম, সারা জাকের, শিমুল ইউসুফ।
বিএমএ : বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র দেশব্যাপী সড়ক-মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে মানুষের স্বাভাবিক দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে বাধা দিচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী একটি কুচক্রীমহল বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য প্রদান করে তরুণ প্রজন্মকে বিপথগামী করছে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে।
এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশ : এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একটি মহল দেশে অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি করতে তৎপর হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করে আন্দোলনকারীদের ভেতর থেকে নিজেদের রাজাকার ঘোষণা দিয়ে স্লোগান দেওয়া হয়, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও একাত্তরের শহিদের আত্মদানের প্রতি অবমাননাকর। সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথার যৌক্তিক সংস্কার সবাই চায়। কিন্তু আমরা দেখছি একটি মহল কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। এ ধরনের বিভাজন থেকে বিরত থাকতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে এডিটরস গিল্ড।
অভিনয় শিল্পীসংঘ বাংলাদেশ : অভিনয় শিল্পীসংঘ বাংলাদেশ এক প্রতিবাদলিপিতে জানিয়েছে, কোটা সংস্কারের যৌক্তিক আন্দোলন নিয়ে আমাদের বা রাষ্ট্র কারও কোনো বিভেদ নেই। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর যে কোনো যৌক্তিক রাজনৈতিক বা সামাজিক আন্দোলনের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। কিন্তু এই কোটা আন্দোলনকে ইস্যু করে যারা মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করছেন এবং রাজাকারদের প্রতিষ্ঠা করবার চেষ্টা করছেন তাদের প্রতি তীব্র নিন্দা, ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।