কক্সবাজারে পাহাড় ধসে নারী-শিশুর মৃত্যু
চট্টগ্রামে ঝুঁকিতে ৬ হাজার পরিবার
চট্টগ্রাম ব্যুরো ও কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কক্সবাজারে ভারি বর্ষণে পাহাড় ধসে শিশুসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার বাজার ও এবিসিঘোনায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিকে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে ২৬টি পাহাড়ের পাদদেশে থাকা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার পরিবার।
পাহাড় ধসে দুজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রকিবুজ্জামান। স্থানীয়দের বরাতে তিনি বলেন, বুধবার মধ্যরাত থেকে কক্সবাজার শহরে টানা মাঝারি ও ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোরে সিকদার বাজার এলাকায় বসবাসকারী সাইফুল ইসলামের বাড়ির ওপর আকস্মিক পাহাড় ধসে পড়ে। এতে মাটির দেওয়াল ভেঙে ঘুমে থাকা তার ছেলে নাজমুল হাসান চাপা পড়ে। স্থানীয়রা মাটি সরিয়ে শিশুকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে ভোরে কক্সবাজারের এবিসিঘোনায় পাহাড় ধসের আরেক দুর্ঘটনায় মোহাম্মদ করিমের স্ত্রী জমিলা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান ওসি।
রকিবুজ্জামান বলেন, ভোরে জমিলা আক্তার রান্নাঘরের পাশে ঘুমিয়ে ছিলেন। তার স্বামী ঘুমিয়ে ছিলেন আরেক কক্ষে। আকস্মিক পাহাড় ধসে পড়লে জমিলা মাটিচাপা পড়েন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দুটি স্বজনদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে, চট্টগ্রামে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে।
বৃহস্পতিবার এ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। ভারি বর্ষণজনিত কারণে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর সরকারি-বেসরকারি মালিকানাধীন ঝুঁকিপূর্ণ মোট ২৬টি পাহাড় আছে। এসব পাহাড়ে বাস করে ৬ হাজার ৫৫৮টি পরিবার। ২৬ পাহাড়ের মধ্যে ১৬টি সরকারি সংস্থার ও ১০টি ব্যক্তি মালিকানাধীন। পাহাড়গুলো তদারকিতে রয়েছে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি। ২০০৭ সালের জুন মাসে গঠিত এ কমিটি প্রতি বছর বর্ষা এলেই সভা করে।
প্রতিটি সভায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে অবৈধ বসবাসকারীদের উচ্ছেদ, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও ওয়াসার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়। পাহাড় থেকে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিংও করা হয়। মাঝেমধ্যে লোকজনকে সরিয়েও নেওয়া হয়। এ ছাড়া উচ্ছেদ অভিযানও চালানো হয়। কিন্তু কয়েক দিন পর আবার লোকজন ওইসব এলাকায় নতুন করে বসতি গড়ে তোলে। কম টাকায় নিম্ন আয়ের লোকজন পাহাড়ে থাকতে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি আছে এমন পাহাড়ের মধ্যে রয়েছে-মতিঝর্ণা, বাটালি হিল, ফিরোজ শাহ হাউজিং এস্টেট সংলগ্ন পাহাড়, কৈবল্যধাম হাউজিং এস্টেট সংলগ্ন পাহাড়, ফয়’স লেক এলাকার ১, ২ ও ৩ নম্বর ঝিল সংলগ্ন পাহাড়, বিজয় নগর পাহাড়, নাছিরঘোনা পাহাড়।
২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রামে স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধস ট্র্যাজেডিতে ১২৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৭ সালের ১২-১৩ জুন রাঙামাটিসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৫ জেলায় প্রাণ হারায় ১৫৮ জন। এরপরও বিভিন্ন সময় পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।