সিলেট ও কুড়িগ্রামে ফের বাড়ছে পানি
শেরপুরে বন্যার পানিতে ডুবে ২ স্কুলছাত্রের মৃত্যু
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সিলেট ও কুড়িগ্রামের সব নদ-নদীর পানি আবারও বাড়ছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বন্যাকবলিত বানভাসিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। পানির স্রোতে ধরলা সেতুর সংযোগ সড়ক ধসে গেছ। ফলে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। টাঙ্গাইলের গোপালপুরে চার গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন।
প্লাবিত হয়েছে ফসলি জমি। দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। সংকট দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর খাদ্যের। শেরপুরে বন্যার পানিতে ডুবে দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেরপুর সদর উপজেলার কামারেরচর ইউনিয়নের চর সাহাব্দিরচর কাটাখালী এলাকার রাস্তার পাশের বন্যার পানি জমে থাকা ডোবায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সিলেট : বন্যার পানি কমলেও বৃষ্টি হলেই আবার বেড়ে যায়। এ নিয়ে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ও কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশিদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৮৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সিলেট জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বন্যায় ১৩টি উপজেলার ৯৫টি ইউনিয়নের ১ হাজার ৪১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পনিবন্দি রয়েছেন ৫ লাখ ৩৯ হাজার ২৯৮ জন। এ সব এলাকায় ২১৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৯ হাজার ২০৬ জন অবস্থান করছেন। এর মধ্যে দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন বলেন, বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ১১৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
কুড়িগ্রাম : টানা ১১ দিন ধরে বন্যার পানিতে নিমজ্জিত কুড়িগ্রামের সব চরাঞ্চল ও নিুাঞ্চল। জেলার প্রধান সব নদ-নদীর পানি পুনরায় বুধবার দুপুরের পর থেকে বাড়তে শুরু করেছে। ফলে বৃহস্পতিবার ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বইছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে। পানি হুহু করে বৃদ্ধি পাওয়ায় ধরলা নদীর তীরবর্তী ভোগডাঙ্গা, পাঁছগাছি ও শুলকুর বাজারে বেশ কয়েকটি পাকা সড়ক ডুবে গেছে। এসব এলাকায় যান চলাচল বন্ধ থাকায় যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে নতুন করে ধরলার পানির স্রোতে ধরলা সেতুর পূর্বদিকের ৩০ মিটারের সংযোগ সড়কের প্রস্থে ৫ ফিট ও দৈর্ঘ্যে ১৫ মিটার অংশ ধসে গেছে। সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলার নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সঙ্গে সড়কপথের যোগাযোগ বন্ধ ছিল। দুপুরের পর জেলা সড়ক বিভাগ থেকে মেরামত করায় আংশিকভাবে ধীরগতিতে যান চলাচল পুনরায় শুরু হয়েছে। জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা খবর পাওয়ার পর দ্রুত সেতুর পূর্বদিকে সড়কটির ধসে যাওয়া অংশ মেরামতে কাজ করছি। চওড়া ৫ ফিট ও লম্বায় ১৫ মিটার ধসে গেছে।
জেলার ৯টি উপজেলার ৫৫টি ইউনিয়নের প্রায় দুই লাখ পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। বরং নতুন করে দুর্ভোগ শুরু হয়েছে। শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি আর গবাদিপশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। নেই জ্বালানি, ফলে রান্নার চুলা জ্বলছে না। জেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম চলমান থাকলেও তা অপ্রতুল। আর গোখাদ্য সংকট নিয়ে দুশ্চিন্তা আছেন বানভাসিরা।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাফসান জানান, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমার নদের ৫টি পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল ৯টার দেয়া তথ্য অনুসারে ব্রহ্মপুত্র নদে পানি হাতিয়া পয়েন্টে ৩২ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ৩৪ ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৪৯ পয়েন্টে, ধরলা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার এবং দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, জেলার বন্যা কবলিতদের জন্য এখন পর্যন্ত ৫৪২ টন চাল, ৩২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও ২৩ হাজার ১২০ প্যাকেট শুকনো খাবার ৯ উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে। আর গো-খাদ্যের কোনো বরাদ্দ নেই।
গোপালপুর (টাঙ্গাইল) : গোপালপুরে হেমনগর ও ঝাওয়াইল ইউনিয়নের গুলিপেচা, পশ্চিম শাখারিয়া, চর সোনামুই ও নলিন পশ্চিমপাড়া গ্রামের মানুষ এখনো পানিবন্দি। কিছু পরিবার ভূঞাপুর-তারাকান্দি যমুনা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্ব পাশের কয়েকটি গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। এসব এলাকায় বন্যায় শত শত একর ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। চর সোনামুই গ্রামের অধিকাংশ নলকূপ ডুবে যাওয়ায় পানীয় জলের সংকটের কারণে ডায়রিয়াসহ নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। বিশুদ্ধ পানি সংরক্ষণের জন্য পাত্র, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং হাইজিন বক্স সরবরাহের দাবি তাদের।
পাঁচ শতাধিক পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রাথমিক তথ্য দিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার জানান, বন্যায় ৫৭ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত এবং ৭ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন খান জানান, পানীয় জলের সংকটের কারণে উপদ্রুত এলাকায় যাতে ডায়রিয়াসহ নানা রোগব্যাধি ছড়িয়ে না পড়ে এজন্য একাধিক মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
শেরপুর : পানিতে ডুবে মারা যাওয়া শিশুরা হলো শেরপুর সদর উপজেলার কামারেরচর ইউনিয়নের ডুবারচর দক্ষিণ বায়ানপাড়ার শ্রমিক মো. আমজাদ মিয়ার ছেলে শোভন ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মহির উদ্দিনের ছেলে সুজন। তারা দুজনেই কামারেরচর উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র বলে কামারেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন।
শেরপুর সদর থানার এসআই তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার বিকালে ফুটবল খেলা শেষে ৫ বন্ধু ৭নং চরসাহাব্দির চরকাটাখালী গ্রামের রাস্তার পাশে ডোবায় বন্যার পানিতে ফুটবল নিয়ে নেমে গোসল করার সময় শোভন ও সুজন পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়। পরে এলাকার লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজির পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওই দুজনের লাশ উদ্ধার করে।