Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ফাঁস প্রশ্নে উত্তীর্ণ হয়ে চাকরিতে ঢুকলে আইনগত ব্যবস্থা: জনপ্রশাসনমন্ত্রী

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ফাঁস প্রশ্নে উত্তীর্ণ হয়ে চাকরিতে ঢুকলে আইনগত ব্যবস্থা: জনপ্রশাসনমন্ত্রী

জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (বিপিএসসি) থেকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বিষয়টি প্রমাণিত হতে হবে। মনে রাখবেন পিএসসি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

মন্ত্রী আরও বলেন, তবে আগে বিষয়টি প্রমাণিত হতে হবে, আদৌ এটি সঠিক কি না। এখানে একটি কথা বলে রাখি, যে ড্রাইভার এ কথা বলছে, তাকে আমরা দেখলাম অন্য একটি দলের স্লোগান দিচ্ছেন। আসলে এখানে কী হয়েছে? যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রমাণিত হবে যে, সে সত্য বলছে নাকি মিথ্যা বলছে, ততক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।

ফরহাদ হোসেন বলেন, সে (পিএসসির সাবেক গাড়িচালক) একটি দলের ষড়যন্ত্রের ইনস্ট্রুমেন্ট হিসাবে কাজ করছে কি না। অনেকগুলো বিষয় কিন্তু এখানে আছে। সে তো একটি দলের হয়ে কাজ করছে, সরকারের ইমেজ নষ্ট করার জন্য। অনেকদিন আগে সে এ ধরনের কাজের কারণে চাকরিচ্যুত হয়েছে।

যারা মাঠে সরকার পতনের আন্দোলন করে, সরকারের উন্নয়নের কাজে বাধা দিতে চায়, তাদের হয়ে সে স্লোগান দিচ্ছে। আসলে সে কোন এজেন্ডা নিয়ে কথা বলছে, সেটি একটি বিষয়। তবে তার কথা সত্য না মিথ্যা সেটি সরকারের পক্ষ থেকে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে অনুসন্ধান চলছে।

পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী প্রশ্নফাঁস করেছে, তার ফাঁস করা প্রশ্নে ক্যাডার সার্ভিসে করা নিয়োগ পেয়েছেন সেটাও তিনি জানিয়েছে। যারা এভাবে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না-জানতে চাইলে জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই। প্রমাণিত হলেই আইনগত ব্যবস্থা নেব। সংস্থাটির চেয়ারম্যান ব্যবস্থা নেবেন বলে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে প্রশ্নফাঁসের ঘটনা প্রমাণ হতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, সরকার বিষয়টি খুবই শক্তভাবে দেখছে। সিআইডি বিষয়টির ওপর স্পেশাল ফোকাস দিয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে নাম এলে ফাঁস হওয়া প্রশ্নে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন কি না-জানতে চাইলে ফরহাদ হোসেন বলেন, অবশ্যই আইনানুগভাবে, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের চাকরিবিধি যেটি আছে, যদি সেটি কেউ ভঙ্গ করে, শঠতা বা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকে, অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই কিন্তু চাকরিতে আসতে হবে। পিএসসিরও কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। সেখানেও কোনো ব্যত্যয় হয়েছে কি না-তার একটা ব্যাপার আছে। আমার মনে হয় আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। বিষয়টি কিন্তু সবার মধ্যে চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। আমরা গভীর মনোযোগের সঙ্গে বিষয়টি দেখছি।

সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, কোটার বিষয়টি আদালতে নিষ্পত্তি হওয়ার পর সরকার শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সবকিছু করতে প্রস্তুত।

শিক্ষার্থীরা একটি কমিশন গঠনের কথা বলেছেন। সেটি করা গঠন, করা হবে কি না-এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, সবকিছুই সম্ভব ছিল যদি এখানে আদালতের বিষয় না থাকত। আদালতের বিষয় আদালতে সমাধান হোক। এই সমাধানের পর যদি আরও কিছু আলোচনা করতে হয় সেটি আলোচনার জন্য আমরা সব সময় প্রস্তুত। যারা রাস্তায় আছে তারা আমাদেরই ছেলেমেয়ে, ভুল বুঝে আন্দোলন করছে। তিনি বলেন, দেশের কল্যাণে, শিক্ষার্থীদের কল্যাণে, আমাদের সন্তানদের কল্যাণে যা করা লাগে আমরা সবকিছু করতে প্রস্তুত। বেতন কাঠামোর ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে পরিপত্র জারি করে সরকার। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি হাইকোর্ট সেই পরিপত্র বাতিল করে। এতে ফের কোটা বাতিলের আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে তারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে রাখছেন। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ। এর মধ্যে কোটা বাতিলের রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগ। কিন্তু আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরা সরে আসেনি। জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলেন, কোটার বিষয়টি আদালতে রয়েছে। আমাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নির্বাহী বিভাগের অংশ। বিচার বিভাগে কোনো বিষয় থাকলে সেটি বিচার বিভাগেই নিষ্পত্তি করতে হয়।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করব, রাস্তায় না থেকে আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার। যেটি যেখানে নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন সেটি সেখানে নিষ্পত্তি করতে হবে। আমরাও চাই বিষয়টি খুব সুন্দরভাবে নিষ্পত্তি হয়ে যাক। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের কথা শুনে আদালত যে রায় দিয়েছেন, এখানে কিন্তু সুযোগ রয়ে গেছে, প্রধান বিচারপতি সেই আহ্বান জানিয়েছেন। আদালত হচ্ছে সেই জায়গা যেখানে আপনার কথা শুনে আসলে কী করতে হবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।

ফরহাদ হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের বলব, তারা আদালতে যাবেন। এটাই হচ্ছে যৌক্তিক জায়গা। যেখান থেকে বিষয়টি হয়েছে, সেখানেই যেতে হবে। সেখানে গিয়ে যৌক্তিক বিষয়গুলো তুলে ধরলে আমার মনে হয় সমস্যার সমাধান খুব সহজেই হয়ে যাবে। পানির মতো একটি সহজ জিনিসকে জটিল করছে কারা?

জটিল করা হচ্ছে কিছু কুচক্রী, কোনো পরামর্শদাতা বা কারও ইন্ধনের কারণে মন্তব্য করেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী। শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাব কারও দ্বারা প্ররোচিত হয়ে আমরা যাতে ভিন্ন জায়গায় না যাই। কারা শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে-জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, যারা দেশের উন্নয়ন চায় না, যারা সেই সময়ে দেশে লুটপাট করেছে, যারা দেশটাকে জঙ্গিবাদ করেছে, তারা চাচ্ছে না। তারা বসে আছে, তারা ব্যর্থ, তারা যে কোনো বিষয়কে পুঁজি করে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে চায়।

কোটা বাতিলের পর সরকারি চাকরিতে নারীর অংশগ্রহণ অনেক কমে গেছে। ৪৩তম বিসিএসে মাত্র ১৭ শতাংশ নারীরা সুযোগ পেয়েছেন।

৪০তম বিসিএসে ৫৯ জেলা থেকে পুলিশে একজন নারীও চাকরির সুযোগ পাননি। ১৭টি জেলায় নারী-পুরুষ কেউই সুযোগ পাননি। এ রকম একটি ইয়ে যদি সৃষ্টি হয়, তাহলে একটা অসমতা তৈরি হয়। কোটার সংস্কার দরকার। কোটা কতটুকু থাকবে সেটা আলোচনা হতে পারে বলেও জানান ফরহাদ হোসেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম