Logo
Logo
×

শেষ পাতা

দিনভর ভোটগ্রহণ

যুক্তরাজ্যে আজ ঘোষণা হবে বিজয়ীদের নাম

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

যুক্তরাজ্যে আজ ঘোষণা হবে বিজয়ীদের নাম

ফাইল ছবি

যুক্তরাজ্যে ৬ সপ্তাহের নির্বাচনি প্রচারণার পর সাধারণ নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ১৫ ঘণ্টা ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের ৪০ হাজার কেন্দ্রে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। যুক্তরাজ্যে এবারই প্রথম নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আগে ভোটারদের ফটো আইডি বা শনাক্তকরণ ছবি দেখাতে হয়েছে। এদিকে ভোটারদের প্রভাবিত করে এমন খবর প্রকাশে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকায় যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম নির্বাচন এবং রাজনীতি নিয়ে ভোট চলাকালীন সময়ে প্রতিবেদন প্রকাশে বিরত ছিল। তাই ভোটের দিন কে কোথায় ভোট দিয়েছেন বা সঙ্গে কে বা কি ছিল সেসব নিয়ে গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে। খবর বিবিসি, স্কাই নিউজ ও আলজাজিরার।

১৯৪৫ সালের পর যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো জুলাইয়ে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। হাউজ অব কমন্সের সাড়ে ছয়শ সদস্যকে নির্বাচনের জন্য ভোট দিয়েছেন প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ ভোটার। সরকার গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ অন্তত ৩২৬টি আসনে জয় পেতে হবে।

ভোট দিতে আগ্রহী নিবন্ধনকারী ১৮ বছরের ঊর্ধ্বের ব্রিটিশ নাগরিকরা এবার যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এবারের নির্বাচনেই প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ডের ভোটারদের ভোট দিতে ফটো আইডি বা শনাক্তকরণ ছবি দেখাতে হয়েছে। এক্ষেত্রে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বয়স্ক বা অক্ষম ব্যক্তির বাস পাশ এবং ওয়েস্টার ৬০+ কার্ডসহ ২২ ধরনের আইডি কার্ড গ্রহণযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। অবশ্য উত্তর আয়ারল্যান্ডে ২০০৩ সাল থেকেই ভোট দিতে আইডি দেখাতে হয়। অনেকেই ডাকে নিজ নির্বাচনি এলাকার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন।

সাধারণ নির্বাচনের খুঁটিনাটি : যুক্তরাজ্যে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ ৫ বছর। গতবার, অর্থাৎ ২০১৯ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল কনজারভেটিভ পার্টি। নিয়মমাফিক পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। অনেকে শরতে নির্বাচন হতে পারে এমন অনুমান করলেও বাস্তবে তা হয়নি। যুক্তরাজ্য ৬৫০টি নির্বাচনি কেন্দ্র বা এলাকায় বিভক্ত। এই প্রত্যেক নির্বাচনি এলাকার ভোটাররা একজন প্রতিনিধি নির্বাচন করেন যারা তাদের হয়ে ‘হাউজ অফ কমন্সে’ প্রতিনিধিত্ব করেন। নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশ কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি। তবে কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কারা : যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে প্রথাগতভাবেই কনজারভেটিভ পার্টি ও লেবার পার্টি প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। এবারের নির্বাচনে এ দুদলই সবচেয়ে বেশি ভোট পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

টোরি বলে পরিচিত ক্ষমতাসীন মধ্য ডানপন্থি কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বে আছেন ৪৪ বছরের ঋষি সুনাক। ২০২২ সালের অক্টোবরে তিনি লিজ ট্রাসের কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখন তার বয়স ছিল ৪২ বছর। আধুনিক সময়ে তিনিই হচ্ছেন ব্রিটেনের সবচেয়ে কম বয়সি প্রধানমন্ত্রী। তার হাত ধরেই প্রথম কোনো ব্রিটিশ-ভারতীয় দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।

মধ্য বামপন্থি লেবার পার্টির নেতৃত্বে রয়েছেন ৬১ বছর বয়সি স্যার কিয়ের স্টারমার। ২০২০ সালে জেরেমি করবিনের পর তিনি দলের নেতা নির্বাচিত হন। এ দল ১৯৯৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত টনি ব্লেয়ার এবং গর্ডন ব্রাউনের নেতৃত্বে ক্ষমতায় ছিল।

এড ডেভির নেতৃত্বাধীন মধ্য বামপন্থি লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টি ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ডেভিড ক্যামেরন এবং উপপ্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগের অধীনে জোট সরকারে ছিল।

বামপন্থি ইকোপলিটিক্সে যুক্ত গ্রিন পার্টির নেতৃত্বে আছেন কার্লা ডেনার এবং অ্যাড্রিয়ান রামসে। ডানপন্থি রিফর্ম ইউকের নেতৃত্বে আছেন নিজেল ফারাজ।

মধ্য বামপন্থি এসএনপি, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির নেতৃত্বে আছেন জন সুইনি। মধ্য ডানপন্থি উত্তর আইরিশ পার্টি ডিইউপি, ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির নেতৃত্বে আছেন গেভিন রবিনসন।

ভোটের ফল পাওয়া যাবে কখন : স্থানীয় সময় রাত ১০টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই একটি এক্সিট পোলের ফল ঘোষণা করা হবে। সেই সঙ্গে শুরু হবে ভোট গণনাও। প্রত্যেক নির্বাচনি এলাকাতে সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীকেই ৫ জুলাই শুক্রবার প্রথম প্রহর নাগাদ বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে না। তবে কোন দল সরকার গঠন করবে সেটা সকাল ৫টা থেকে ৭টার মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।

ফল ঘোষণার পরের পদক্ষেপ : ভোট গণনার পর হাউজ অব কমন্সে যে দলের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী থাকবে, সেই দলের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার এবং সরকার গঠনের আহ্বান জানাবেন রাজা তৃতীয় চার্লস। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিজয়ী প্রার্থীর দলের নেতাই হবেন বিরোধী দলনেতা। যদি কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, তাহলে সেই দল নিজেদের সংসদ-সদস্যদের ওপর নির্ভর করে আইন পাশ করতে পারে না। এর ফলে ‘হাং পার্লামেন্ট’ বা ত্রিশঙ্কু অবস্থার সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে বৃহত্তম দল অন্য দলের সঙ্গে মিলে জোট সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

গণমাধ্যমে নেই রাজনৈতিক সংবাদ : কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকায় বৃহস্পতিবার সাধারণ নির্বাচনের দিনে ভোট চলাকালে ব্রিটেনের গণমাধ্যম কোনো ধরনের প্রচারণা বা নির্বাচন বিষয়ে বিশদ প্রতিবেদন করেনি। সারা দিন টিভি, রেডিও বা ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্রিটেনের স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কোনো নির্বাচনি প্রচারণার প্রতিবেদন করেনি। নির্বাচনের দিনে যা ঘটছে তার খবর সাধারণত অবিতর্কিত ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ভোটকেন্দ্রে রাজনীতিবিদদের উপস্থিতি বা আবহাওয়া, কে কিভাবে ভোট দিয়েছেন এসব নিয়েই মূলত সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রচার করেছে।

এ অবস্থায় জনমত জরিপ, এক্সিট পোল বা কে কোথায় ভোটে এগিয়ে থাকবেন বা কে বিজয়ী হতে যাচ্ছেন এমন কোনো তথ্যই গণমাধ্যমে করা হয়নি। তবে নির্বাচনের ঠিক আগে দ্য গার্ডিয়ানের করা এক জরিপে দেখা গেছে, এবারের নির্বাচনে দীর্ঘ ১৪ বছর পর ক্ষমতায় ফিরতে যাচ্ছে লেবার পার্টি। আর মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে ক্ষমতাসীন সুনাকের কনজারভেটিভ পার্টির। জরিপে দেখা গেছে, ২ জুলাই পর্যন্ত অন্তত ৪০ দশমিক ৩ শতাংশ ভোটার কিয়ের স্টারমারের নেতৃত্বে লেবার পার্টিকে বেছে নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। আর ঋষি সুনাকের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টিকে বেছে নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন মাত্র ২০ দশমিক ৭ শতাংশ ভোটার।

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম