স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত ১৪২ সংস্থা
সরকারের পাওনা ১ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকা
মনির হোসেন
প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত ও স্থানীয় ১৪২ সংস্থার কাছে সরকারের বকেয়া ১ লাখ ৯৪ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে আসল টাকা ৭৮ হাজার ১৭৭ কোটি এবং সুদ ১ লাখ ১৬ হাজার ৩১৯ কোটি।
সবচেয়ে বেশি পাওনা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি লিমিটেড।
এছাড়াও রাষ্ট্রীয় ৩০ প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ ৬৫ হাজার ৮৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অর্থ বিভাগের অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সীমাহীন দুর্নীতি, অতিরিক্ত রাজনৈতিক প্রভাব, প্রয়োজনের অধিক জনবল এবং ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বাড়ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, দক্ষতা বাড়াতে এসব প্রতিষ্ঠানে সংস্কার জরুরি।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর সবচেয়ে দুর্বলতা হলো দক্ষতার অভাব।
এছাড়াও দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব তো রয়েছে। এতে সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বাড়ছে। তিনি বলেন, এ অবস্থার উত্তরণে প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার দরকার।
তার মতে, প্রতিষ্ঠানটিরগুলোর দক্ষতা বাড়লে সামগ্রিকভাবে সরকারের রাজস্ব খাতের বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। এতে বাজেট ঘাটতি পূরণে ঋণ নির্ভরতা কমে আসবে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য অনুসারে, গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সরকারের পাওনা মোট ১ লাখ ৯৪ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। এই পরিমাণ অর্থ চলতি অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের প্রায় ৫০ শতাংশ।
বকেয়া এই টাকা দিয়ে ৬টি পদ্মা সেতু করা সম্ভব। আগের বছরের একই সময়ে অর্থাৎ ২০২২ সালের তুলনায় এই বকেয়া ১১ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। কোনো কোনো সংস্থা দীর্ঘদিন থেকে এসব অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে প্রতিবছরই বকেয়ার পরিমাণ বাড়ছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বকেয়া বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে।
গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদ অনুত্তীর্ণ ও সুদ-আসল মিলে প্রতিষ্ঠানটির কাছে বকেয়ার পরিমাণ ৭৬ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কাছে বকেয়া ১৯ হাজার ৯০২ কোটি টাকা এবং তৃতীয় অবস্থানে থাকা পাওয়ার গ্রিডের কাছে পাওনা ১৪ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা। তাদের বিভিন্ন ঋণের বিপরীতে যেসব গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সেবার অর্থ পরিশোধ করা হয়নি। দেশে বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তাদের প্রচুর অর্থ ঋণ হিসাবে জোগান দিতে হয়েছে।
এছাড়াও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের কাছে ১৩ হাজার ৯৪৬ কোটি, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কাছে ৫ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ২ হাজার ৮৭৯ কোটি, বুরাল পাওয়ার কোম্পানি ২৫৯ কোটি, ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ডেসকো) ৭৫০ কোটি, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশান কোম্পানি অব বাংলাদেশ ৪ হাজার ৫৯৬ কোটি, চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের কাছে ৮ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা, টিসিবির কাছে ৭ হাজার ৪৪৬ কোটি, বিবিসির কাছে ৪ হাজার ৪৮২ কোটি, বিআইডব্লিউটিসির কাছে ৪ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা।
এছাড়াও যাদের বেশি বকেয়া রয়েছে এগুলো হলো-বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন, বাংলাদেশ ইস্পাত প্রকৌশল কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার সাপ্লাই, নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন, কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থা, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ করপোরেশন, বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ঢাকা সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম ওয়াসা, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড এবং খুলনা ওয়াসা।
এসব সংস্থাগুলোর কাছে সরকারের বকেয়া দীর্ঘদিনের। ইতোমধ্যে মোট টাকার বড় অংশই মেয়াদোত্তীর্ণ। একক বিভাগ হিসাবে সবচেয়ে বেশি টাকা রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে। বকেয়ার এই তালিকায় দেশের ৫৫টি পৌরসভাও রয়েছে।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রীয় ৩০ প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঋণ বেড়ে হয়েছে ৬৫ হাজার ৮৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৯ হাজার ৭৩০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে খেলাপি ঋণ ১৮৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
খেলাপি ঋণ রয়েছে বিজেএমসি, বিএডিসি, বিটিএমসির মিলে ১৭৮ কোটি টাকা। এছাড়া ১৭ প্রতিষ্ঠানে ৭ অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ এক হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।