Logo
Logo
×

শেষ পাতা

চিকিৎসা ব্যয় বাড়বে

সরঞ্জাম আমদানিতে শুল্কের বোঝা

স্বাস্থ্য খাতে ৪১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব * ডেঙ্গু কিট, ডায়ালাইসিস ফিল্টার ও সার্কিট, ওষুধের কাঁচামালে রেয়াতি সুবিধার প্রস্তাব

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সরঞ্জাম আমদানিতে শুল্কের বোঝা

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানিতে শুল্কের বোঝা চাপানো হয়েছে। বিশেষ করে রেফারেল হাসপাতালগুলোতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও উপকরণ আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক ১ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ ধার্যের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে এসব হাসপাতালে রোগীদের ব্যয় আরও বাড়বে। তবে কিডনি ডায়ালাইসিসের ফিল্টার, সার্কিট, ডেঙ্গু পরীক্ষা কিট, অ্যাজিথ্রোমাইসিন গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক, ক্যানসার ওষুধের কাঁচামাল এবং বায়ো-হাইজেনিক ইকুইপমেন্টসহ কিছু পণ্যে রেয়াতি সুবিধার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তাব করা হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দের।

প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে স্বাস্থ্য সেবা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণের জন্য ৪১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা (৫ দশমিক ২ শতাংশ) বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ৩৮ হাজার ৫১ কোটি টাকা (৫ দশমিক শূন্য)। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে রেফারেল হাসপাতালগুলোতে ব্যবহৃত প্রায় ২৩৩টি চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানি করা হয়ে থাকে। রেফারেল হাসপাতাল হতে গেলে কিছু শর্ত পালন করতে হয়। সেগুলো হলো-ন্যূনতম ১০০ শয্যাবিশিষ্ট মনো-ডিসিপ্লিনারি বা ন্যূনতম ১৫০ শয্যাবিশিষ্ট মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি।

স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদরা যুগান্তরকে বলছেন, বর্তমানে রেফারেল হাসপাতালের চিকিৎসা যন্ত্রপাতির শুল্ক ১ শতাংশ পর্যন্ত বহাল আছে। তবে গত তিন বছরে ডলারের দাম বাড়ার কারণে লাগামহীনভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। রেয়াতি সুবিধার বাইরে থাকা ওষুধ ও কাঁচামাল আমদানিতে খরচ বেড়েছে। আসন্ন বাজেটে বিদ্যমান শুল্ক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এই প্রস্তাব পাশ হলে রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় আরও বাড়বে।

জানা যায়, রেফারেল হাসপাতালে যন্ত্রপাতির মধ্যে অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত সরঞ্জাম, আইসিইউ ও লাইফ সাপোর্টে ব্যবহারের যন্ত্রপাতি, অস্ত্রোপচারের সময় রোগীকে অজ্ঞান করার সরঞ্জাম আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো-অনুবীক্ষণ যন্ত্র (মাইক্রোস্কোপ), হার্টের পরীক্ষায় ব্যবহৃত ইসিজি ও ইটিটি মেশিন। হার্টসংক্রান্ত ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগে ব্যবহৃত কালার ডপলার ইকোকার্ডিওগ্রাফি ও কালার ডপলার মেশিন। রিএজেন্ট (কাঁচামাল) তৈরিতে ব্যবহৃত ডিস্টিল ওয়াটার প্ল্যান্ট। রেডিওলোজি বিভাগে ব্যবহৃত এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এমআরআই, এন্ডোসকপি মেশিন। গর্ভের সন্তানের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত ফিটাল ডপলার মেশিন। এছাড়া ক্যানসার বিভাগের বি-স্ক্যান, বক্ষব্যাধি বিভাগের ব্রংকস্কোপি সেট, প্যাথলজিতে রক্ত পরীক্ষার ব্লাড কালচার মেশিন, নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যায় ব্যবহৃত বেবি ইনকিউবেটর এবং আইসিইউ ভেন্টিলেটর মেশিন উল্লেখযোগ্য। যেগুলোর দাম ১ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ পর্যন্ত ধার্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া শুল্কায়নে জটিলতা দেখা দেওয়ায় রোগীদের মেরুদণ্ডে ইনজেকশন দেওয়ার নিডল আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ডায়ালাইসিস ও ডেঙ্গু কিটে শুল্ক ছাড়ের পরিকল্পনা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু রেফারেল হাসপাতালের যন্ত্রপাতির ওপর ধার্যকৃত শুল্ক এক লাফে ১০ শতাংশ বাড়ানো হলে রোগীদের চিকিৎসায় খুব প্রভাব পড়বে। কি কারণে এমনটা করা হচ্ছে জানাতে হবে। এমনিতেই স্বাস্থ্য খাতে বাজেট কম থাকে। সুবিধা বাড়াতে হলে বাজেট বাড়াতে হবে। তাই যন্ত্রপাতি আমদানিতে কর ছাড় দেওয়া উচিত।

চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী যুগান্তরকে বলেন, কিছু সরঞ্জামের ওপর শুল্ক রেয়াত দেওয়া এবং সেটির ফলাফল পজিটিভ হলে তা প্রশংসাযোগ্য। কারণ বর্তমানে সার্বিক স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়, বরাদ্দ ও পরিকল্পনা একেবারেই অপ্রতুল। গত প্রায় ১৫ বছর ধরে স্বাস্থ্যের বাজেট একটি নির্ধারিত শতাংশের ঘরে আটকে আছে। সরকারের ২০১২ থেকে ২০৩২ সালের হেলথ কেয়ার ফাইন্যান্সিং স্ট্র্যাটেজিতে উল্লেখ আছে ২০৩০ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যের বাজেট ১৫ শতাংশে উন্নীত করা। অনেক দেশে ১২ শতাংশ পর্যন্ত বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশ ৫ শতাংশ। বলা হয় স্বাস্থ্যের বরাদ্দ খরচ করতে পারে না। মূলত খরচের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয় না।

সুবিধা দেওয়া হচ্ছে যেসব ক্ষেত্রে : ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সরকারের নীতি সহায়তার অংশ হিসাবে স্বাস্থ্য খাতে কিছু বিষয়ে সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। যেমন কিডনি ডায়ালাইসিসে ব্যবহৃত উপকরণ ডায়ালাইসিস ফিল্টার এবং ডায়ালাইসিস সার্কিট আমদানিতে বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ১ শতাংশ নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। হ্রাসকৃত শুল্কে অ্যাম্বুলেন্স আমদানির সুবিধা দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্সের প্যাসেঞ্জার কেবিনের ন্যূনতম দৈর্ঘ্য ০৯ ফুট নিরূপণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। রেয়াতি সুবিধায় ডেঙ্গু কিট আমদানির লক্ষ্যে নতুন প্রজ্ঞাপন জারির প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ প্রস্তুতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে অ্যান্টিবায়োটিক অ্যাজিথ্রোমাইসনসহ আরও কিছু নতুন কাঁচামাল অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি চিকিৎসা বিজ্ঞানের মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণার গুরত্ব বিবেচনায় সমন্বিত স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিলে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম