Logo
Logo
×

শেষ পাতা

৮ হাজার টাকার ঘাট নিয়ে দুই এমপির লড়াই

খাজনা বাতিল চান পঙ্কজ, বহালের পক্ষে শাম্মী

Icon

আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

৮ হাজার টাকার ঘাট নিয়ে দুই এমপির লড়াই

প্রতি মাসে সরকারি কোষাগারে জমা পড়ে মাত্র ৮ হাজার টাকা। এই অল্প টাকার লঞ্চঘাটের ইজারা নিয়ে এখন মুখোমুখি বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের এমপি পঙ্কজ দেবনাথ ও সংরক্ষিত আসনের এমপি ড. শাম্মী আহম্মেদ এবং তাদের অনুসারীরা। নদীর মধ্যে জেগে ওঠা চরে থাকা পন্টুনে যেহেতু লঞ্চ ভিড়তে পারে না, তাই পঙ্কজ চাইছেন বাতিল হোক এই ঘাটের ইজারা তথা খাজনা আদায়। অন্যদিকে শাম্মীর লোকজনের দাবি, শুকনো মৌসুমে না হলেও বর্ষায় ঘাটে ভেড়ে লঞ্চ। এছাড়া পঙ্কজের লোকজন বছরের পর বছর ঘাট থেকে টাকা তুলেছে। এখন তারা ঘাট পাবে না বুঝেই নাটক সাজিয়েছে।

এদিকে দুই এমপির টানাহিঁচড়ায় বিপাকে পড়েছেন বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা। কার কথা শুনবেন আর কারটা ফেলবেন তাই নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছেন তারা। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে নৌকা পেয়েও দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে নির্বাচন করতে পারেননি আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহম্মেদ। অন্যদিকে ঈগল প্রতীকে নির্বাচন করে তৃতীয়বারের মতো এমপি হন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ। শাম্মীর মনোনয়ন পাওয়া আর পঙ্কজের না পাওয়া নিয়ে শুরু থেকেই হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জে বিভক্ত হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ। এই বিরোধে গত কয়েক বছরে আওয়ামী লীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষে হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জে নিহত হয়েছেন দলের ১০ নেতাকর্মী। এমনকি বরিশালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় পর্যন্ত দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন পঙ্কজ সমর্থক এক আওয়ামী লীগ নেতা। চলমান এই বিরোধের সর্বশেষ সংযোজন মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার চর এককুরিয়া ইউনিয়নের লালখারাবাদ লঞ্চঘাট। স্পট কোটেশনের মাধ্যমে প্রতি মাসে যে ঘাট থেকে মাত্র ৮ হাজার টাকা আয় হয় বিআইডব্লিউটিএ’র।

বরিশাল বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, স্থানীয় এক ইজারাদার বর্তমানে ঘাটটি পরিচালনা করছে। জুন মাসে ঘাটটি বার্ষিক ভিত্তিতে ইজারা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। এরই মধ্যে সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ ঘাট ইজারা না দিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। অন্যদিকে সেখানকার সংরক্ষিত আসনের এমপি ড. শাম্মী আহম্মেদসহ তার লোকজন চাইছেন ঘাটটির ইজারা। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি অ্যাড. তালুকদার মো. ইউনুসও ফোন করে ঘাট ইজারা দেওয়ার পক্ষে বলেছেন। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা যা সিদ্ধান্ত দেবেন সেভাবেই পদক্ষেপ নেব।

অ্যাড. তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ঈগল প্রতীকে নির্বাচন করে এমপি হয়েছেন পঙ্কজ দেবনাথ। তিনি আওয়ামী লীগের এমপি নন। অপরদিকে দলীয় সিদ্ধান্তে সংরক্ষিত আসনে এমপি করা হয়েছে ড. শাম্মী আহম্মেদকে। যেহেতু শাম্মী দলীয় এমপি তাই তার নির্দেশনার প্রতি যেন গুরুত্ব দেওয়া হয় সেটাই বলেছি বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তাদের।

মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মোতালেব জাহাঙ্গীর বলেন, এমপি পঙ্কজের লোকজন এখন ঘাট পাবে না বুঝে নাটক শুরু করেছে। যেভাবে ইজারার মাধ্যমে ঘাট চলক সেভাবেই চলুক। তাহলে সরকারের লোকসান হবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে লালখারাবাদ এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলেন, বছরের ৮-৯ মাস পন্টুনটি চরে উঠে থাকে। লঞ্চ থামে নদীর ভেতরে। যাত্রীরা ট্রলারে তীরে আসা-যাওয়া করে। তবু ঘাটের খাজনা দিতে হয় মানুষকে। এছাড়া লঞ্চঘাটের দুদিকে আধা কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকাজুড়ে যত ট্রলার, নৌকা, মালবাহী নৌযান থামে তার সবগুলো থেকে টাকা উঠায় ইজারাদার। আন্ধারমানিক-লতা খেয়াঘাটের যাত্রীদেরও দিতে হয় খাজনা। এখানে দৈনিক ৩-৪ হাজার টাকা আয় হয়। অথচ সরকারি কোষাগারে জমা পড়ে দিনে মাত্র ২৬৭ টাকা। এই বিপুল অঙ্কের আয় অব্যাহত রাখতেই ইজারা বহাল রাখার চেষ্টা চলছে।

সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, প্রথমবার এমপি হওয়ার পর ওই ঘাটের ইজারা বাতিল করিয়েছিলাম। বিনা পয়সায় লোকজন যাতায়াত করত। বছরদুয়েক আগে ক্ষমতার দাপটে ঘাটটি ইজারা দিতে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করা হয়। আজিজুর রহমান নামে একজন ইজারা পেলেও তাকে ঘাটে যেতে দেয়া হয়নি। মোতালেব জাহাঙ্গীরের লোকজন ঘাট দখল করে টাকা তুলেছে। এরপর আমার বাধার কারণে আবারও ৩-৪ মাস ইজারা বন্ধ ছিল। এখন আবার স্পট কোটেশন করে টাকা আদায় এবং স্থায়ীভাবে ইজারা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। যে স্থাপনা জনসাধারণ ব্যবহার করতে পারছে না তার জন্য কেন তারা টাকা দেবে? আমি সেজন্য এটি ইজারা না দিতে অনুরোধ জানিয়েছি।

বিষয়টি সম্পর্কে কথা বলার জন্য ড. শাম্মী আহম্মেদ এমপির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি অস্ট্রেলিয়ায় থাকায় কথা বলা যায়নি। তার ঘনিষ্ঠ অনুসারী আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য অ্যাড. সৈয়দ মুনির বলেন, এটি আসলে এমপি পঙ্কজ দেবনাথের একটি স্টান্টবাজি। তার লোকজন ঘাট পাবে না বুঝে তিনি জনদরদি সাজার নাটক করছেন। আমাদের এমপি শাম্মী আহম্মেদ দেশে ফিরলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম