Logo
Logo
×

শেষ পাতা

এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংক একীভূত হচ্ছে আজ

আমানত নিরাপদ থাকবে কর্মী ছাঁটাই হবে না

Icon

হামিদ বিশ্বাস

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আমানত নিরাপদ থাকবে কর্মী ছাঁটাই হবে না

নতুন নামে টিকতে না পেরে শরিয়াহভিত্তিক এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পদ্মা ব্যাংক। আজ দুটি ব্যাংকের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার কথা রয়েছে। দুর্বল ব্যাংক একীভূত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া সাম্প্রতিক উদ্যোগের পর দুটি ব্যাংকের একীভূত হওয়ার এটিই প্রথম সিদ্ধান্ত। এদিকে ব্যাংক একীভূত হলে দুর্বল ব্যাংকে রাখা আমানত ফেরত দেওয়া হবে নাকি সবল ব্যাংকে তার আমানত হিসাব স্থানান্তর হবে; এ ধরনের নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংক একীভূত হওয়ার খবরে কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ জানতে চেয়েছেন-তাদের আমানতের কী হবে? আদৌ আমানত ফেরত পাবেন কিনা! একই সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকের কর্মীরাও ছাঁটাই আতঙ্কে রয়েছেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন-বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) চেয়ারম্যান ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, ‘আমানতকারীদের আশ্বস্ত করতে চাই। তাদের আমানতের কোনো ক্ষতি হবে না। এছাড়া কোনো কর্মীও ছাঁটাই করা হবে না। সুতরাং আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘আমানতকারীদের শতভাগ নিরাপত্তা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, সুশাসন ঘাটতি, উচ্চ খেলাপি ঋণ, ব্যবস্থাপনার অদক্ষতাসহ বিভিন্ন কারণে আস্থাহীনতায় পড়েছে ব্যাংক খাত। এতে পুরো ব্যাংক খাতে চরম তারল্য সংকট তৈরি হয়। পরিস্থিতি উত্তরণে খুব খারাপ অবস্থায় থাকা ৭ থেকে ১০টি ব্যাংক একীভূত করার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। একীভূতকরণ হলে আমানতকারীদের কী হবে? প্রচলিত ধারার ব্যাংকের সঙ্গে শরিয়াহ ব্যাংক এক হবে কীভাবে? নিয়মিত ঋণগ্রহীতার প্রকৃতিতে পরিবর্তন আসবে কিনা-এসব প্রশ্ন সামনে আসছে। গত বৃহস্পতিবার এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে নাজুক অবস্থায় থাকা পদ্মা ব্যাংক একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্তের পর এ আলোচনা আরও জোরালো হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, দুর্বল কয়েকটি ব্যাংকের আমানতের একটি অংশ বছরের পর বছর ফেরত পাচ্ছে না। এখন ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের ফলে সেই অনিশ্চয়তা কেটে যাবে। আমানত স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থানান্তর হবে। আমানত তুলতেও পারবে। আর যে ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে, ওই ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী আমানতের সুদহার নির্ধারিত হবে। দুর্বল ব্যাংক একীভূত করায় কোনো ভালো ব্যাংকের অবস্থা যেন খারাপ না হয়, সেজন্য বিভিন্ন নীতি সহায়তা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে একবারে সবাই আমানত ফেরত নিতে এলে ফেরত পাবে না। ধাপে ধাপে দেওয়ার জন্য একটি কর্মসূচি দেবে। তিনি বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা ও জালিয়াতি বা কমিশন নিয়ে ঋণ দেওয়ার কারণে ব্যাংক দুর্বল হয়েছে। এখন একটি ভালো ব্যাংকের দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে খারাপ ব্যাংক ভালো হতে পারে। খেলাপি ঋণ কেনার জন্য আলাদা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি খোলার একটি আইন হচ্ছে। তখন খেলাপি ঋণ কিনে নিলে সংকট কমবে।

তিনি জানান, একীভূতকরণের প্রথমেই একটি অডিট ফার্ম দিয়ে নিরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাংকটির দায় ও সম্পদের প্রকৃত হিসাব বের করা হবে। এসবের ভিত্তিতে একেক ব্যাংকের জন্য একেক রকম নীতি সহায়তা ও ছাড় দেওয়া হবে। ফলে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার কারণে কোনো ভালো ব্যাংক খারাপ হবে না, তা বলা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংক নিজ থেকে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে খারাপ ব্যাংক একীভূত হওয়ার জন্য আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে। আর ডিসেম্বরের তথ্যের ভিত্তিতে আগামী বছরের মার্চ থেকে বাধ্যতামূলক একীভূতকরণের ঘোষণা দিয়েছে। এরই মধ্যে ইসলামী ধারার এক্সিমের সঙ্গে প্রচলিত ধারার পদ্মা ব্যাংকের একীভূত করার ঘোষণা এসেছে। এছাড়া প্রাইম ব্যাংকের সঙ্গে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আরও কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একীভূতকরণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, পদ্মা ব্যাংক একীভূতকরণের ফলে আমানতকারীর এক টাকাও নষ্ট হবে না। বরং আমানত আরও সুরক্ষিত হবে। তিনি বলেন, সোমবার দুই ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার পর বিস্তারিত জানানো হবে।

জানা যায়, দেশে ২০১৩ সালে নতুন যে ৯টি ব্যাংক অনুমোদন পায়, তার একটি হলো পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স)। শুরু থেকেই এটির কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ। যেমন অনুমোদন পাওয়ার আগেই ব্যাংকটি অফিস খুলে লোকবল নিয়োগ দিতে শুরু করেছিল। আবার সম্পর্কের ভিত্তিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানত জমা নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি শুরু করেন এর উদ্যোক্তারা। ফলে চার বছর না পেরোতেই সংকটে পড়ে ব্যাংকটি।

পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ায় ২০১৭ সালে পদ ছাড়তে বাধ্য হন এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। ব্যাংকটির এমডি একেএম শামীমকেও অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন এই ব্যাংককে বাঁচাতে মূলধন সহায়তা দেয় সরকারি চার ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। সেই সুবাদে ব্যাংকটির পরিচালনায় যুক্ত হন ওই চার ব্যাংক ও আইসিবির প্রতিনিধিরা। পদ্মা ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব নেন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।

২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি দ্য ফারমার্স ব্যাংকের নাম বদলে রাখা হয় পদ্মা ব্যাংক। এ রকম অবস্থায় শরীয়াহ্?ভিত্তিক এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পদ্মা। এর ফলে ব্যাংকের তালিকা থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছে পদ্মা ব্যাংকের নাম। সাবেক ফারমার্স ব্যাংকে অনিয়মের পর জেলে আছেন নির্বাহী কমিটির তৎকালীন চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী এবং তার ছেলে রাশেদুল হক চিশতী। গত বছরের অক্টোবরে ১৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় তাদের ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম